গল্প

ঈশার ইশ্‌কুল

প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

রুমানা নাওয়ার
স্কুলে নতুন এসেছে ঈশা। তাই ক্লাসে কেমন জবুথবু হয়ে বসে রইল কোণার জায়গাটায়। নতুন তাই, তেমন কারও সঙ্গে পরিচয়ও নেই। কোনো বন্ধুও নেই তার। কেউ আগ বাড়িয়ে কথা বলতে এলে তবেই ঈশা কথা বলছে। না হলে না। ক্লাসের বেশ কজন দুষ্ট ছেলেমেয়ে তাকে দেখে হাসাহাসি করছে। ঈশার খুবই লজ্জা এবং বিরক্তি লাগল তাতে। ঈশার নতুন স্কুলের নাম বনবীথি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ইউ আকৃতির তিনটা বড় বড় বিল্ডিং স্কুলটাকে একটা সৌন্দর্য এনে দিয়েছে। পূর্বপাশে একটা বিশাল গম্বুজ ওয়ালা মসজিদ। স্কুলে পা রাখতেই ঈশার মনটা আনন্দে লাফিয়ে উঠলো। বাহ বিশাল স্কুল। এরকম একটা স্কুলে পড়তে চেয়েছিল ঈশা। শাহিনার ছেলে বলল, মা, আমি আপুর মতো বড়ো স্কুলে পড়তে চাই। আপু পড়ে সপ্তম শ্রেণিতে নগরীর একটা নামকরা স্কুলে। শাহিনা ছেলের কথায় সায় দিয়ে বলতো- অবশ্যই আমার ছেলে একটা ইয়া বড় সাইজের স্কুলে পড়বে। ঈশা খুশীতে হাততালি দিল তাতে। কিন্তু মুশকিল হলো শহরে ছোটদের ভালো স্কুল তেমন নেই। দুই/একটা যাও আছে দূরে। প্রাথমিকের সরকারি স্কুলগুলোতে একশ্রেণির মানুষের অনীহা। নাক সিটকানো ভাব। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে ব্যাঙের খোপের মতো কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে পড়াবে কিন্তু বিনাখরচের সরকারের দেয়া নানা সুবিধাদির পরও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াতে চায় না বাচ্চাদের। বিষয়টা শাহিনাকে ভাবিয়ে তুললো। আর এসব কিন্ডারগার্টেনে পড়াশুনার মানও যে ভালো তেমন না। শাহিনার বড় মেয়েটাকে এক বছর একটা কিন্ডারগার্টেনে পড়িয়েছিল বাধ্য হয়ে। প্রতিদিনের ডায়রিতে দু-চারটা ভুল বানানে হোমওয়ার্ক দিত। এসব দেখে দেখে শাহিনা মেয়েকে তড়িঘড়ি করে বাওয়াতে ভর্তি যুদ্ধে নামিয়ে দে এবং আলস্নাহর রহমতে টুনটুনিটা লটারি এরপর এক্সাম দুটোতেই টিকে যায়। হাফ ছেড়ে বাঁচে শাহিনা। এখন ছেলেটাকে নিয়ে বিপাকে। কোথায় দেবে, কোথায় পড়াবে ভাবতে ভাবতে শাহানা ও বদলি হয়ে এলো কাছের একটা স্কুলে। বাসা থেকে অল্প একটু পথ। হেঁটেই যাওয়া যাবে। আর তাড়া থাকলে রিকশায়। এর সপ্তাহখানেক পর জয়েন করল। চমৎকার একটা প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষক-ছাত্র সবাই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করল শাহিনাকে। দু-চারদিন যাওয়ার পর ছেলেকে নতুন স্কুল দেখাতে নিয়ে এলো শাহিনা। ঈশাতো মহাখুশী। মায়ের স্কুলেই সে পড়বে এখন থেকে। মানে মা'র স্কুল তার নিজেরই স্কুল। প্রতিদিন মায়ের হাত ধরে স্কুলে আসে। খুশী আর ধরে না ছেলেটার। শাহিনার মন টাও থিতু হলো যেন ছেলেটাকে চোখে চোখে রাখে। ছেলেকে কাছে রেখে পড়াবে এরকম একটা স্বপ্ন অনেক দিনের। পূরণ হলো অবশেষে। আসলে মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়।