গল্প

ম্যাজিক পেন

প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

অলোক আচার্য
অনিশের পড়ার টেবিলে একটা নতুন কলম রাখা। অনিশ কলমটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে। এ রকম কলম অনিশ আগে কোনো দিনও দেখেনি। এমনকি ওর যে বন্ধু দৈনিক গাড়ি নিয়ে স্কুলে আসে তার কাছেও না। এটা নিশ্চয়ই বাবা এনেছে। বাবা ওকে খুব ভালোবাসে। কাল অনিশের স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হবে। অনিশ তার বাবাকে কলম আনতে বলেছিল। বাবাই সম্ভবত কলমটা এখানে রেখে দিয়েছে। বাবাকে একটা ধন্যবাদ দেওয়া দরকার। অনিশ এ বছর ক্লাস সেভেন থেকে এইটে উঠবে। কাল অনিশের পরীক্ষার জন্য ছেলেকে একটা না কয়েকটা কলম তিনি এনে রেখেছেন। কিন্তু কলমগুলো এখনো ছেলেকে দেননি। খাওয়ার টেবিলে বসে অনিশের হাতে কলমগুলো দিলেন তিনি। অনিশ আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাস করল, আরও কলম এনেছ নাকি? মানে? আমি তো কেবল এই কলমগুলোই এনেছি। তাহলে টেবিলের উপর যে কলমটা রয়েছে সেটা? কি বলছ তুমি? আমি আর কোনো কলম আনিনি। তোমার বন্ধুর কোনো কলম ভুলে তোমার ব্যাগে রেখে চলে গেছে। কাল স্কুলে গিয়ে ফেরত দিয়ে দিও। অনিশ চিন্তিত মুখে উঠে যায়। তাহলে এই কলমটা কে রেখেছে টেবিলের উপর? এসব ভাবতে ভাবতে অনিশ টেবিলে বসে। কলমটা হাতে নিয়ে আবারও দেখতে থাকে। এই কলমটা ঠিক অন্য সব কলমের মতো নয়। এমনকি, কলমের সামনে যে লেখার অংশ থাকে সেটিও নেই। তবুও কলমটা হাতে নিয়ে ওর খাতাটা টেনে নেয়। আশ্চর্য খাতার উপর কলমটা ধরতেই লেখার নিব বেরিয়ে আসে! আরও আশ্চর্য ব্যাপার হলো কোথায় পেছনের অংশটাতে একটা খুব হালকা ধরনের সবুজ বাতি জ্বলতে থাকে। ভয়ে কলমটা তাড়াতাড়ি রেখে দেয় অনিশ। ওর সন্দেহ হয় কলমটা তাহলে কোনো ভূত-টুত রেখে যায়নি তো! হতেও তো পারে! যাক বাবা এসব ভেবে কোনো লাভ নেই। তার চেয়ে কাল অংক পরীক্ষা। এখনো অনেক অংক করতে হবে। অংক দেখলেই ওর মাথাটা ঝিমঝিম করে! গত দুই সাময়িকেই অংকে ফেল করেছে। এইবার ভালো না করলে নির্ঘাত সেভেনে ফেল করতে হবে। সেটা হবে বিরাট লজ্জার! তাকে স্কুল থেকে বের করে দেবে। ওর বাবা কোনো দিনও যাবে না অনিশের জন্য রিকোয়েস্ট করতে। তার চেয়ে ভালো অংকগুলো ভালোভাবে দেখা যাক। অনিশ আবার অংকে মনোযোগী হয়। কিন্তু কিছুতেই মন বসাতে পারে না। আর মন দিয়েই বা কি হবে! পরীক্ষা হলে গেলেই তো করা অংকগুলোও অচেনা মনে হয়! শেষে এসে আর উত্তর মেলাতে পারে না। মাথা থেকে কিছুতেই অদ্ভুত কলমের বিষয়টা যাচ্ছে না। কিছুতেই না। অনিশ নিশ্চিত যে, সে কখোনই ভুল করে ওর বন্ধুর কলম নিয়ে আসেনি। আর এই কলম তো ওর বন্ধুদের কাছে দেখেইনি। তাহলে! এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে টেবিলেই ঘুমিয়ে পড়েছে অনিশ টেরই পায়নি। রাত তখন ঠিক কত অনিশ বুঝতে পারল না। কারণ ওর টেবিল ঘড়িটার ব্যাটারি গতকালই নষ্ট হয়েছে। ঘরের ভেতর চাপা অথচ বোঁ বোঁ ধরনের শব্দে ওর ঘুম ভেঙে গেল। প্রথমটায় কিছুই বুঝতে পারল না। হাতে তখনো সেই কলমটা ধরা আছে। আশ্চর্য! শব্দটা কলম থেকে আসছে। হাত থেকে কলমটা টেবিলের উপর রেখে দিল। তখনই শব্দটা থেমে গেল। আর কলমটা ধীরে ধীরে বাতাসে ভেসে বেড়াতে লাগল। অনিশ, বাবা-বাবা বলে চিৎকার করল ঠিক; কিন্তু গলা দিয়ে শব্দ বের হলো না। পা দুটোও নাড়াতে পারছে না। কলমটা ততক্ষণে ছোট কিন্তু অদ্ভুত এক প্রাণীর আকৃতি পেয়েছে। ঠোঁট নড়ছে না কিন্তু শব্দ বের হচ্ছে। \হকলমটি বলল, অনিশ, আমাকে,দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি তোমার বন্ধু। আমার নাম, রঁণ। আমি এখান থেকে এক হাজার আলোকবর্ষ দূরের একটি গ্রহ জিরোজিরোওয়ান-এ থাকি। আমি আমার গ্রহের অংক বিজ্ঞানী। আমি খুব ভালো অংক জানি। তুমি প্রতিবার অংকে ফেল কর দেখে আমার খুব মন খারাপ। আমি এসেছি তোমাকে সাহায্য করতে। আমি নিজেই তোমার সঙ্গে পরীক্ষা দেব। তুমি কি বুঝতে পারছ? অনিশ দুই পাশে মাথা নাড়ে। মানে বোঝেনি। কীভাবে এই প্রাণীটা তার সঙ্গে পরীক্ষা দেবে? স্যাররা তো সেই সুযোগ দেবে না। আর সেই কলমটাই বা কোথায় গেল? তুমি কি ভাবছ, আমি তা জানি। তোমাকে এ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমিই এতক্ষণ তোমার হাতে কলম হয়ে ছিলাম। কাল পরীক্ষার সময়ও আমি তোমার হাতেই থাকব। তুমি কাল সেই কলমটি দিয়ে পরীক্ষা দেবে। পরীক্ষার পর থেকে তুমি অংক আর ভুল করবে না। তুমি হবে এই গ্রহের শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ। আর একটা কথা কালকের পর আর এই কলমটি মানে আমি থাকব না। অদ্ভুত প্রাণীটি আবারও আগের মতো কলম হয়ে অনিশের সামনে পরে রইলো। পরদিন সেই কলম নিয়েই অনিশ পরীক্ষা দিল। আশ্চর্য! যে অংকগুলো ওর কাছে বিদঘুটে লেগেছে সেগুলো এখন যেন কেমন জলের মতো সহজ হয়ে গেল। সেদিন রাত থেকেই আর কলমটিকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না। অংক স্যার রেজাল্টের দিন সবার সামনে অনিশের প্রশংসা করলেন। অংকে এবার সে সর্বোচ্চ মার্কস পেয়েছে। স্যার তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।