গল্প

পাখি ও দুটি ছানা

প্রকাশ | ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

আতিক এ রহিম
প্রচন্ড তাপদাহ সারাদেশ জুড়ে। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। সামিহার স্কুলও বন্ধ। সামিহা এবার চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। রোজার বন্ধের পর আজকে স্কুল খোলার কথা ছিল। কিন্তু বাবা রাতে জানালো সামিহা তোমার স্কুল তো আবার বন্ধ হয়ে গেল। স্কুল বন্ধের কথা শোনে মনটা খারাপ হয়ে যায়। অনেক দিন ধরে সহপাঠী মালিহার সঙ্গে দেখা হয় না রোজায় স্কুল বন্ধ হওয়ার জন্য। ঈদের আগের দিন রাতে সামিহা মালিহাকে মোবাইল করে ঈদের দিন বিকালে বাড়িতে আসার জন্য। সামিহা বলে, কাল বিকালে আমার বাসায় আসবি কিন্তু। মালিহা ওপাশ থেকে বলে দেয় নারে সামিহা এবার আসতে পারব না। আমরা ঈদের দিন বিকালে মামার বাড়ি চলে যাব। আমার ছোট আন্টির বিয়ে তো। সামিহা বলে, ও! বিষাদ মনে মোবাইল রাখে। মা বলে, কি হয়েছে মালিহা আসবে না? সামিহা বলে, মালিহা কাল মামার বাড়ি বেড়াতে যাবে। ওর ছোট আন্টির বিয়ে। রাতে বাবার কাছে স্কুল বন্ধের কথা শোনে মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। কাল স্কুলে গেলে সবার সঙ্গে দেখা হতো; খুব গরমের জন্য ঘরে বসে থাকা কষ্টকর। বিদু্যৎ নেই। দুপুরে খাওয়ার পর ঘরের দরজায় বসে বাবার সঙ্গে কথা বলছে সামিহা। বিকাল হয়ে আসছে এখনো রোদের ঝাঁঝ কমেনি। এমন সময় চোখে পড়ে তাদের শিউলি ফুলের গাছের ডালে একটি মৌটুসী পাখি বাসা করছে। সে বাসায় দুটি ছোট বাচ্চা আছে। সারাদিন কিচিরমিচির শব্দ করে ডাকাডাকি করে। বাবার কাছে সামিহা জানতে চায় ওরা মাঝে মধ্যে খুব কিচিরমিচির করে। বাবা বলে, ওদের ভাষায় ওদের ক্ষুধার কথা মাকে বলে, মা খিদে লাগছে খাবার খেতে দাও। সামিহা বলে, তাই বাবা! আজ দেখে ছানা দুটি ঠোঁট উঁচু করে ওর মায়ের মুখের কাছে কিচিরমিচির করে ডাকছে। ছানা দুটির শরীরে রোদও পড়ছে। সামিহা বলে, এখন এ ছানা দুটি কাঁদছে কেন? বাবা বলে, যে গরম পড়ছে ওদের খুব গরম লাগছে। সামিহা বলে, সত্যি বাবা! আচ্ছা বাবা; এত গরম পড়ছে কেন? বাবা বলে, দেখ আমরা দিন দিন গাছ পালা কেটে বন উজাড় করে দিচ্ছি, ঘর বাড়ি করছি তাতে কার্বন ডাই-অক্সাইড বেড়ে ঝড়, বন্যা ও খরা হচ্ছে। আবার দেখ, বেশি বেশি বজ্রপাত হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। সামিহা বলে, বাবা তাহলে আমাদের কি করা উচিত? বাবা বলে, বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। প্রয়োজনে একটি গাছ কাটলে দুটি গাছ লাগাতে হবে। সামিহা বলে, এজন্য বাবা, স্কুলে আতিক স্যার আমাদের দিয়ে আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা ও সুপারি গাছ রোপণ করেছেন। বাবা তোমাকে বলতে ভুলে গেছি, আতিক স্যার আমাকে দিয়ে একটি সুপারি গাছ লাগিয়েছেন। স্যার আমাকে বলছেন, এ গাছটি তোমার। তুমি স্কুলে এলে প্রতিদিন পানি দেবে। আমি প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর গাছে পানি দেই। বাবা বলে, তাই নাকি? সামিহা বলে, হঁ্যা বাবা। বাবা বলে, তাহলে তো তোমার গাছটা দেখতে যেতে হবে একদিন। সামিহা বলে, আচ্ছা বাবা তোমাকে নিয়ে যাব স্কুল খুললে।