রঙের পুতুল

প্রকাশ | ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

নীতুল ইয়াছমিন
চৈত্রের শেষ বিকালে বসন্ত বিদায় নিয়েছে, বৈশাখী আমেজ ঘরে ঘরে শুভ নববর্ষ জানাতে ব্যস্ত সবাই। ভোর হতেই নববর্ষের আগমন, নববর্ষের সাজে সেজেছে সবাই। শিশুরা সাজে তাদের নিজের মতো করে। ঋতু সেজেছে আজ মেলায় যাবে,,,, -বাবা, বাবা- আমি মেলায় যাবো -হঁ্যা যাবে মা, আমি তোমাকে নিয়ে যাবো। একথা শুনে ঋতু খুশিতে দৌড়ে গিয়ে তার মাটির ব্যাংক নিয়ে আসে। -বাবা এটা ভেঙে দাও, -কেন মা এটা ভাঙবে? -এটার ভিতর অনেক পয়সা আছে। -পয়সা দিয়ে করবে মা? -আমি মেলায় গিয়ে, অনেক কিছু কিনে আনব। -মেলায় গিয়ে আমি তো কিনে দেবো, এটা রেখে আসো মা। -তা হলে কিন্তু আমি কিছুই নিব না, এটা ভেঙে না দিলে! বাবাকে বেশ কয়েকবার বলল ঋতু, বাবা ছিল একটু অন্যমনস্ক, তাই ঋতুর আর দেরি সহ্য হচ্ছিল না। হাত থেকে মাটির ব্যাংকটা ফ্লোরের ওপর ধপাস করে ছেড়ে দিল। ব্যাংক ভেঙে চৌচির, পয়সাগুলো সারা ফ্লোর ছড়িয়ে গেল। তখন বাবা তাকালো ঋতুর দিকে। -তোমায় না বললাম আমি কিনে দেবো! -তুমি কেন কিনে দেবে বাবা? আমার তো পয়সা আছে। এবার বাবা হাসতে থাকে- আর ঋতু পয়সা কুড়িয়ে নিজের গায়ের জামাটাকে ব্যাগ বানিয়ে সেখানে রাখতে থাকে। কুড়ানো শেষ হলে আবার বাবার কাছে গিয়ে বলে, - বাবা পয়সাগুলো গুনে দাও! -তুমিই তো গুনতে পারো মা! তুমি তো এখন স্কুলে পড়, তুমি গুনতে শুরু করো ভুল হলে আমি বলে দেবো। এবার পয়সাগুলো গুনতে থাকে ঋতু, এক সময় গুনে শেষ করে, সর্বমোট ১৪৩ টাকা হয়। খুব খুশি ঋতু- অনেক টাকা তার। -বাবা চলো মেলায় যাবো, -হঁ্যা মা যাবো আমি রেডি হয়ে নিই। -আচ্ছা বাবা, তবে একটু তাড়াতাড়ি করবা। কারণ দেরি হয়ে গেলে কিছুই পাবো না। এবার বাবা আবারও হাসে, তারা বিকেলবেলায় মেলায় চলে গেল, মেলায় ঢুকেই ঋতু অনেক খুশি। -বাবা, বাবা সব কিছুই রঙিন দেখছি। আমি নাগরদোলায় চড়ব। -ঠিক আছে মা, ঋতু নাগরদোলায় উঠল, পুতুল নাচ দেখল, মেলায় বানানো গরম জিলাপিও খেলো। এখন সে খেলনা কিনবে। বাবা সঙ্গে করে খেলনার দোকানে নিয়ে গেল। অনেক রকমের খেলনা কিনল। এবং খুশিও হলো। -মা এবার আমরা বাসায় ফিরে যাবো। -জি বাবা চলো। মেলা থেকে বের হতে যাবে, ঠিক তখনি চোখ পড়ে ঋতুর নানা রঙে সাজানো মাটির পুতুলের দিকে। -বাবা আমি পুতুল নেবো -ওটা তো মাটির, ভেঙে যাবে। তোমাকে তো অনেক খেলনা কিনে দিয়েছি। -না বাবা আমি নেবোই, দেখো দেখো বর পুতুলটা আমার দিকে কীভাবে চেয়ে আছে! এই বলে ঋতু কিছু পয়সা বের করে দিল বাবার হাতে, -আমার পয়সা দিয়ে কিনে দাও বাবা! এখন বাবা দেখছে মেয়ে নাছোড়বান্দা, তাই অবশেষে একটা বর পুতুল কিনে দিল বাবা। পুতুলটা পেয়ে ঋতু অনেক খুশি, কিন্তু হঠাৎ তার মনে হলো কনে না হলে পুতুল বিয়ে কেমনে হবে! এবার বাবার কাছে আবার বায়না আমাকে আরেকটা কনে পুতুল কিনে দাও, আমি পুতুল বিয়ে দেবো। বাবা হাসে মেয়ে বলে কি, মেয়ের সব বায়না মিটিয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলো, রিকশায় করে। বাসার সামনে এসে গেছে, রিকশা থেকে নামবে, হঠাৎ হাত ফসকে পড়ে গেল বর পুতুলটি পাকা রাস্তায়, আর সঙ্গে সঙ্গেই ভেঙে গেল রঙের পুতুলের হাত-পা, চিৎকার দিয়ে উঠল ঋতু, -বাবা আমার আমার বর মরে গেছে, আর কাঁদতে থাকল ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। বাবা সান্ত্বনা দিতে থাকে ঋতুকে, -মা! তোমাকে আরেকটা রঙের পুতুল কিনে দেবো। কিন্ত ঋতুর কান্না কোনোভাবেই থামছে না, মনে হয় সে অনেককিছু হারিয়ে ফেলেছে। কাঁদতে কাঁদতে এক সময় ঘুমিয়ে গেল, আর স্বপ্ন দেখতে লাগল রঙের পুতুল বিয়ে।