হিমাচল প্রদেশের লোক-কাহিনী

টাকার গাছ

প্রকাশ | ২৫ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

অনুবাদক : রাকিবুল রকি
অনেক দিন আগে আট-পাট-নগর নামক শহরে এক ব্রাহ্মণ বাস করত। একদিন সে কোনো খাবার না পেয়ে রাজার কাছে গেল সাহায্যের জন্য। রাজা তাকে রাজকোষ থেকে একশ রুপি দান করতে চাইল। কিন্তু ব্রাহ্মণ সে দান গ্রহণ না করে সবিনয়ে বলল, ‘আমি রাজকোষ থেকে একশ রুপি চাই না। আপনার কঠোর পরিশ্রম দ্বারা উপাজির্ত অথর্ আমি চাই। আপনার ঘাম ঝরানো উপাজর্ন থেকে আমাকে সামান্য কিছু দান করুন। হোক সেটা এক পয়সা। তাই আমার জন্য যথেষ্ট।’ রাজা ব্রাহ্মণের আব্দার শুনে কিংকতর্ব্যবিমূঢ় হয়ে গেলেন। রাজা সেদিন ব্রাহ্মণকে কিছুই দান করলেন না। কারণ তিনি পরিশ্রম করে কোনো কিছু উপাজর্ন করেননি। তাই তিনি ব্রাহ্মণকে দুদিন পর দেখা করতে বললেন। পরদিন রাজা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে তার রাজপোশাক খুলে পুরানো, ছেঁড়া পোশাক পরলেন। তারপর কাছের এক গ্রামে গেলেন। ছদ্মবেশী রাজাকে দেখে কেউ চিনতে পারল না। সেখানে তিনি রাস্তায় কমর্রত শ্রমিকদের সদাের্রর সঙ্গে দেখা করলেন এবং তাকে যে কোনো একটি কাজ দিতে বললেন। শ্রমিকদের সদার্র বললেন, ‘তুমি কী কাজ করবে? মাটি খুঁড়তে পারবে?’ ‘হ্যঁা।’ রাজা উত্তর দিল। ‘ঠিক আছে, এই কুড়াল নাও। মাটি খুঁড়ে গতর্ তৈরি কর। রাস্তা তৈরি হবে এখানে। গতর্ তৈরি হলে কাদা এনে রাখবে গতের্।’ রাজা কুড়াল দিয়ে মাটি খেঁাড়া শুরু করলেন। কিন্তু রাজা আগে কখনো এমন পরিশ্রমের কাজ করেননি। তাই খুব সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলেন। হাতে কালসিটে পড়ে গেল। ফলে তার কুড়াল তুলতেও কষ্ট হচ্ছিল। সদার্র রাজার এই সঙ্কটাপন্ন অবস্থা দেখে বললেন, ‘তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে, তুমি কখনো পরিশ্রমের কাজ করোনি। তাই তো একটু কাজ করেই ঘামে গোসল করে ফেলেছ। তোমার হাতে কালসিটে পড়ে গেছে।’ পকেট থেকে চারআনা পয়সা বের করে রাজার দিকে ছুড়ে মারলেন। বললেন, ‘এই পয়সা নাও আর দূর হও এখান থেকে।’ রাজা রাস্তা থেকে পয়সাটি কুড়িয়ে নিয়ে রাজপ্রসাদে ফিরে এলেন। পরের দিন রাজা রাজকীয় পোশাক পরে রাজদরবারে এলেন। পকেটে চারআনা পয়সা। ব্রাহ্মণ আজ আবার রাজদরবারে এলো সাহায্যের জন্য। রাজা পকেট থেকে চারআনা বের করে ব্রাহ্মণকে দিয়ে বললেন, ‘এ পয়সা আমি পরিশ্রম করে উপাজর্ন করেছি।’ ব্রাহ্মণ পয়সা নিয়ে চলে এলো। তারপর উঠোনে পয়সাটি রোপণ করল। দেখতে দেখতে পয়সা থেকে অঙ্কুর গজালো। অল্প দিনের মধ্যেই অঙ্কুর বড় হয়ে বিশাল বৃক্ষে পরিণত হলো। গাছটি পয়সায় বোঝাই হয়ে গেল। একদিন এক রাজকমর্চারী এ টাকার গাছ দেখতে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এলো রাজাকে জানানোর জন্য। ‘জঁাহাপনা, ব্রাহ্মণের বাড়ির পেছনে একটি টাকার গাছ দেখে এলাম। গাছ বোঝাই করা পয়সা চকচক করছে।’ রাজা এ ঘটনা শুনে খুবই বিস্মিত হলেন। রাজা তার সৈন্যদের হুকুম দিলেন গাছ তুলে আনার জন্য। সৈন্যরা গাছ তুলে আনতে গেলে ব্রাহ্মণ তাদের বাধা দিল। গাছে হাত দিতে নিষেধ করল। বলল, ‘রাজা যদি চান, তবে তাকে এসে নিয়ে যেতে বল।’ সৈন্যরা রাজাকে ব্রাহ্মণের সব কথা বললে, রাজা নিজেই ব্রাহ্মণের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। তখন ব্রাহ্মণ রাজাকে বলল, ‘এই গাছটি আপনার দেয়া পয়সা থেকে জন্ম নিয়েছে। আপনি আমাকে মাত্র চারআনা পয়সা দিয়েছিলেন। যা ছিল আপনার কঠোর পরিশ্রম দিয়ে উপাজর্ন করা। সেই পয়সা থেকেই এই বিশাল গাছের জন্ম। আমি পয়সাটিকে বীজ হিসেবে রোপণ করেছিলাম। তাই এই গাছটির মালিক আমি। আপনি আমাকে মাত্র চারআনা পয়সা দিয়েছিলেন। যদি এখান থেকে কিছু নিতে চান, তাহলে আপনি আমাকে যেটুকু দিয়েছেন, সেটুকুই নিতে পারবেন।’ রাজা বুঝতে পারলেন, ব্রাহ্মণ কী বলতে চাচ্ছে। ব্রাহ্মণের সত্যবাদিতা এবং বুদ্ধির খুব প্রশংসা করলেন রাজা। তারপর খুশি মনে রাজপ্রসাদে ফিরে এলেন।