সাজু আজ মাস্টার মশাই

প্রকাশ | ১৮ মে ২০১৯, ০০:০০

আহমাদ স্বাধীন
সাজুর হাতে একটি হিজলগাছের ডাল। চোখে নারকেলগাছের পাতা দিয়ে বানানো সবুজ চশমা। সাজু আজ মাস্টার মশাই। ওর সামনে চারটি ছাত্র। ছাত্রগুলো বেশ ভালো। কথা বলে না, নড়েচড়ে না, শুধু দাঁড়িয়ে থাকে। এরকম শান্ত নীরব আর বাধ্য ছাত্র সহজে পাওয়া যায় না। একটা চালতাগাছের নিচে দাঁড়িয়ে সাজু ওদের পড়ায়। রোজ পড়ায় না। সাজুর যেদিন মন খারাপ থাকে সেদিন পড়াতে আসে। সাজুদের ঘরের পেছনে অনেক গাছ। সেখানেই আছে একটা চালতাগাছ। তার নিচে অনেক কচুগাছ। থালার মতো বড় বড় পাতা। গাঢ় সবুজ রঙের কচুগাছ। এখানেই এক সারিতে দাঁড়ানো বড় চারটি কচুগাছ সাজুর ছাত্র। সাজু যেদিন ইশকুলের মাস্টারের কাছে পড়া না পারার জন্য ধমক খায়, তখন ওর মন খারাপ হয়। সেদিন ও নিজেই মাস্টার সেজে এই কচুগাছেদের ছাত্র বানায়। সাজু যেই পড়াটার জন্য ধমক খায়, সেই পড়াটাই ধরে ওর কচুগাছ ছাত্রদের। আজও সাজু ইশকুলে সাতের ঘরের নামতা পারে নাই। সাত একে সাত, সাত দু গুনে চৌদ্দ, তিন সাতে একুশ, চার সাতে ছাব্বিশ। সাজু যেই চার সাতে ছাব্বিশ বলল, অমনি ক্লাসের মাস্টার মশাই লাগালো এক ধমক। বলল- এই গাধা, চার সাতে ছাব্বিশ হয়, নাকি আটাশ হয়? বাড়িতে কি পড়াশোনা করো, নাকি ঘাস কাটো? ব্যস, এটুকুই বলেন বিনয় মাস্টার। ধমক শুনে সাজুর চোখ দিয়ে দরদর করে পানি পড়া শুরু হয়। তখন মাস্টার মশাই আর কী করে, বাবা সোনা, লক্ষ্ণী ছেলে। তোমায় সব পড়া ভালো করে শিখতে হবে। না হয় বড় হবে না। এই বলে শান্ত করে। কিন্তু সাজুর মন ভালো হয় না। তাই বাড়িতে এসে ওর কচুগাছ ছাত্রদের পড়াতে যায়। বিনয় মাস্টার চশমা পরে। সাজুর তো চশমা নেই। তাই নারকেল পাতা দিয়ে চশমা বানায়। হিজলগাছের একটা ডাল ভেঙে বেত বানায়। চশমার ওপর দিয়ে পিটপিট করে তাকায়। কচুগাছ ছাত্রদের পড়া ধরে- সাত একে সাত, সাত দু গুনে চৌদ্দ, তিন সাতে একুশ, চার সাতে কত? বলো চার সাতে কত? পারছো না তো? গাধার দল, বাড়িতে কী ঘাস কাটো? আজ শাস্তি হবে তোমাদের। একথা বলেই সাজু ওর কচুগাছ ছাত্রদের কয়েক ঘা বেত মারে, একটা কচুগাছের পাতা ছিঁড়ে যায়। সাজু এবার ওদের সান্ত্বনা দেয়। - ভালো করে পড়তে হবে তো বাচ্চারা, না হলে বড় হতে পারবে না। পরের দিন সব পড়া ঠিকভাবে মুখস্থ করে রাখবে। বাতাসের ধাক্কায় কচুপাতাগুলো নড়তে থাকে। সাজুর কাছে মনে হয়, ওর ছাত্ররা মাথা দুলিয়ে বলছে- হঁ্যা, পরের দিন পড়া ঠিকভাবে মুখস্থ করে রাখবো। সাজু আজকের মতো ওদের ছুটি দিয়ে দেয়। ঘরে ফিরে আসে নিজেও। ঘরে এসে নামতা মুখস্থ করার জন্য বই খুলে পড়তে বসে সাজু। সাত একে সাত, সাত দু গুনে চৌদ্দ, তিন সাতে একুশ, চার সাতে আটাশ ...