ছত্রিশগড়ের লোককাহিনী

চড়ুইয়ের ডালের বীজ

প্রকাশ | ১৮ মে ২০১৯, ০০:০০

অনুবাদক: রাকিবুল রকি
এক চড়ুই পাখি ছিল। একদিন সে একটি ডালের বীজ খুঁজে পেল। চড়ুই বীজটি ঠোঁটে করে নিয়ে গেল জাঁতাকলের কাছে। বলল, 'এই বীজের খোসা ছাড়িয়ে দাও।' এমন সময় বীজটি জাঁতার ভেতর পড়ে গেল। চড়ুই বীজটি জাঁতাকে ফিরিয়ে দিতে বলল। জবাবে জাঁতা বলল, 'সে আমাকে কেটে বীজটি তোমাকে ফিরিয়ে দেবে।' চড়ুই গেল কাঠমিস্ত্রির কাছে। বলল, 'জাঁতার মাঝে আমার ডালের বীজ পড়েছে। ওটা খুলে দিন।' কাঠমিস্ত্রি অন্য কাজে ব্যস্ত ছিল। তাই চড়ুইয়ের অনুরোধ রাখতে পারল না। চড়ুই তখন রাজার কাছে গেল। রাজা তখন মন্ত্রীর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছিল। চড়ুই রাজাকে অনুরোধ করল, সে যেন কাঠমিস্ত্রিকে জাঁতা খুলে দেয়ার হুকুম দেয়। কিন্তু রাজা তার অনুরোধ না রাখায় চড়ুই দৌড়ে গেল রানীর কাছে। যেন রানী রাজাকে একটু বুঝিয়ে বলে। ওই সময় এক দাসী সোনার চিরুনি দিয়ে রানীর চুলে বিলি কাটছিল। সব শুনে রানী বলল, 'তুমি সামান্য ডালের বীজের কথা ভুলে যাও। আমি তোমাকে কিছু মুক্তো দিচ্ছি।' চড়ুই ভাবল, রানীর কাছ থেকে মুক্তো নিয়ে তার কোনো লাভ নেই। কারণ সে এগুলো খেতে পারবে না। তাই সে উড়ে গেল সাপের কাছে। সাপকে বলল, রানীকে কামড়ে দেবার জন্য। সাপ তো চড়ুইয়ের কথা শুনলোই না। বরং চড়ুইকে ছোবল মারতে গেল। চড়ুই সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে উড়ে পালালো। তারপর গেল এক লাঠির কাছে। লাঠিকে বলল, পিটিয়ে সাপের ঘাড় ভেঙে দিতে। ওমা অবাক কান্ড! লাঠি সাপকে তো পেটালোই না। বরং চড়ুইয়ের ঘাড়ে সপাং সপাং দুটো বসিয়ে দিল। চড়ুই কোনো রকমে সেখান থেকে প্রাণ নিয়ে পালালো। এবার চড়ুই গেল আগুনের কাছে। বলল, 'আগুন ভাই, আগুন ভাই, অহংকারী লাঠিকে তুমি পুড়িয়ে ছাই করে ফেল।' দুঃখের কথা, আগুনও চড়ুইয়ের কথা রাখল না। চড়ুই উড়ে উড়ে সাগরের কাছে গেল। সাগরকে বলল, 'তোমার শরীরে তো অনেক পানি। তুমি আগুনকে নিভিয়ে দিচ্ছ না কেন?' কিন্তু সাগর এমন একটা ভাব করল যেন ঢেউয়ের শব্দের কারণে সে চড়ুইয়ের কথা শুনতেই পায়নি। তখন চড়ুই উড়ে গিয়ে হাতির শুঁড়ের উপর বসল। হাতিকে অনুরোধ করল, সাগরের সব পানি শুষে নেয়ার জন্য। কিন্তু হাতিও তার কথায় পাত্তা দিল না। অবশেষে কোনো উপায় না পেয়ে চড়ুই পাখি তার প্রাণের বন্ধু পিঁপড়ের কাছে গেল। সব খুলে বলে সাহায্য প্রার্থনা করল। পিঁপড়ে মনোযোগ দিয়ে চড়ুইয়ের কথা শুনল। তারপর তার বাহিনীকে প্রস্তুত করল হাতিকে শিক্ষা দেয়ার জন্য। হাতি তো পিঁপড়ের বিশাল বাহিনী দেখে ভয় পেয়ে গেল। \হসে চোটপাট করতে করতে গেল সাগরকে শুষে ফেলার জন্য। হাতির এই উগ্রমূর্তি দেখে সাগর ভয় পেয়ে গেল। সাগর চিৎকার করতে করতে বলল, 'আমার সব পানি পান করে ফেলো না। আমি এক্ষুনি যাচ্ছি আগুনকে নিভিয়ে দেয়ার জন্য। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই যে যার কাজ শুরু করে দিল। আগুন হুমকি দিল লাঠিকে। লাঠি মারতে গেল সাপকে। সাপ ছুটে গেল রানীকে ছোবল দিতে। রানী দৌড়ে গিয়ে বোঝালো রাজাকে। রাজা হুকুম কাঠমিস্ত্রিকে। কাঠমিস্ত্রি করাত নিয়ে দৌড়ে গেল জাঁতা কেটে ফেলার জন্য। জাঁতা খুবই অবাক হলো, যখন শুনল, ছোট্ট চড়ুই বিশাল কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছে। সে চিৎকার করে বলল, 'আমাকে কেটে ফেলো না। আমি এক্ষুনি বীজের খোসা ছাড়িয়ে দিচ্ছি। অবশেষে চড়ুই তার ডালের খোসা ছাড়ানো বীজ নিয়ে উড়ে চলে গেল।