কবি নজরুলের স্মৃতিভূমি

প্রকাশ | ২৫ মে ২০১৯, ০০:০০

শরীফ সাথী
ঝাউগাছের সারি। বিশাল এলাকাজুড়ে বিরাট লিচুগাছের বাগান। এখানের এই প্রকৃতির নিদারুণ ছোঁয়া কবিকে মুগ্ধ করে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিচু চোর, পদ্মগোখরো, বহুসংখ্যক গানসহ অনেক কিছুই রচনা করেছিলেন এই কার্পাসডাঙ্গাতে অবস্থানকালে। প্রকৃতির রূপ এমনই তারারা মেলা বসায় নীল আকাশে। চাঁদ জোছনা দিয়ে মায়ায় বাঁধে। রবির হাসিতে হেসে ওঠে ধরণী। মেঘরাশির বৃষ্টি রিমঝিম ছন্দে আনন্দে গান গায়। তেমনি প্রকৃতিতে মুগ্ধ হয়ে আমাদের প্রিয় কবি কার্পাসডাঙ্গার এই মিশনারির গির্জার পার্শ্বে বসন্তের বাতাসে ঝাউগাছের ডানায় ভেসে কাল্পনিক দেশে বাস্তবতা মিশে রচনা করেছেন প্রিয় লেখায় সাজানো 'পদ্মগোখরো'। এ গল্পের প্রেক্ষাপট মূলত এখানকার এবং এখানে বসেই রচিত। চোখের মায়াবী চাহনিতে মিশনারির প্রকৃতি সেজেছিল নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে। হাতের পরশে জেগে উঠেছিল এখানকার মৃত পরিবেশ। কৃষ্ণনগরে রচিত কবির উপন্যাস 'মৃতু্য ক্ষুধা'তে কার্পাসডাঙ্গার স্মৃতিময় কাহিনী আবির্ভূত হয়েছে। বিশাল লিচুগাছের দৃশ্য বিশ্বকে জানিয়ে দিতে লিখেছেন কালজয়ী সৃষ্টি লিচু চোর'-এর মতো দুর্দান্ত প্রাণবন্ত কবিতা। অবাধ শিশুদের লিচু পেড়ে লুকানো, কাঠবিড়ালীদের লিচু খাওয়া, পাখিদের কোলাহল কবির মায়াবী চোখ আটকে গিয়েছিল। রাতের আঁধারে লিচু চুরি হয়ে যায় বাবুদের বাগান থেকে কবি এমন কথা শুনতে পেয়ে বাবুদের তালপুকুরের পাড়ে তালগাছের নিচে বসে লিচুগাছের সৌন্দর্যে মন হারিয়ে মজাদার লিচু চোরের মতো লেখা লিখে নিজ মুখে সে সময় পাঠ করে শুনিয়েছিলেন। বেশ কয়েকজন পাশে বসে শুনেছিল কবির লেখা কবির মায়াবী মুখের মিষ্টি কণ্ঠে। সবচেয়ে বড় সত্য হলো কবি কার্পাসডাঙ্গায় এসেছিলেন। লিচু চোর লিখেছিলেন। অসংখ্য গান, পদ্মগোখরো, মৃতু্য ক্ষুধার কাহিনী, লিচু চোর কবিতা লেখাগুলোই বড় প্রমাণ কবি কাজী নজরুল ইসলাম এখানে এসেছিলেন। এসব লেখাগুলো অন্য কোথাও সৃষ্টি নয়। কার্পাসডাঙ্গায় বসেই এসব লেখা কবির সৃষ্টি। লিচু চোর, পদ্মগোখরো বড় প্রমাণ স্মৃতিবিজড়িত কার্পাসডাঙ্গাকে উজ্জ্ব্বল করার। তাই স্মরণীয় হয়ে আছে হর্ষপ্রিয় বাবুর আটচালা খড়ের কুঁড়েঘর, ভৈরব নদীর সিঁড়ির ঘাট, লিচুগাছ, তালপুকুর, মিশনারির আকাশে বাতাসে আজ ও কবির মায়াবী কণ্ঠ ভাসে, ভাসে মুখোচ্ছবি যা ভোলার নয়। হর্ষপ্রিয় বিশ্বাসের আটচালা খড়ের কুঁড়েঘরটি এলাকাবাসীর গর্ব। স্মৃতির মণিকোঠার অলংকার। এখানের কবির পদধ্বনি নয়নের সুরমা। কবির নিঃশ্বাসের বায়ু আতরের সুগন্ধে ভরপুর হয়ে ফুলে-ফলে বিকশিত হয়। এখানকার ফুল-ফলের গন্ধে, ছন্দে আরও মাতোয়ারা করে তোলে নজরুলপ্রেমী মানুষকে। হৃদয়পটে প্রিয়মুখ ভেসে ওঠে। চোখের জ্যোতির্ময় আলোকে প্রকাশিত করে। নজরুলকে নিয়ে জনতার গর্ববোধে বুক ব্যাকুল হয়ে ওঠে সারাবিশ্বকে যদি জানাতে পারতাম নজরুল আমাদের পরিবারের পরিবেশের সদস্য ছিল। কবি নজরুল আমাদের অহংকার। নজরুল আমাদের গর্ব। ভালোবাসার দীপ্তিময় স্বর্ণালী ইতিহাস। মনের মণিকোঠার মনিব। অন্তরের অন্তস্থলের সাহসী বীর সৈনিক। ব্রিটিশদের অন্যায় দাপটের বিরুদ্ধে নজরুলের বিদ্রোহী সুর যা ছিল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের হুংকার। কার্পাসডাঙ্গা মিশনারির প্রতিটি স্থানে কবির পদচারণা যা আজও মুখরিত করে আকাশে-বাতাসে, মানুষের মননে।