ঈদ আনন্দে

প্রকাশ | ০১ জুন ২০১৯, ০০:০০

রুমানা নাওয়ার
রোজা এলেই নুসাইবার খুশির দিন যেন শুরু হয়। উপলক্ষ একটাই- আসছে ঈদ। পড়াশুনায় ফাঁকিবাজিটাও চলে এসময় বেশি। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে তুহিন তেমন শাসনে রাখে না এসময়। ভাবে সারামাস বছরই তো গৎবাঁধা পড়ায়, রুটিনে বেঁধে রাখে মেয়েকে। এ একটা মাস না হয় একটু ব্যতিক্রমই হোক। মায়ের শাসনে এ আলগা আলগা ভাবটাও বেশ উপভোগ করে নুসাইবা। এ কয়দিনের মধ্যে রোজাও রেখেছে দুটা। প্রথম রোজা আর চতুর্থ রোজাটা। প্রথম দিন তো কাহিল ছিল মেয়ে। মাথাই তুলতে পারছিল না। সঙ্গে মাথাব্যথা। দিনের মধ্য ভাগে রোজা ভেঙে ফেলার পণ ও করল। কিন্তু মায়ের সাড়া না পেয়ে আর ওমুখো হয়নি। তুহিন মনে করল বেলা দুটোয় রোজা ভাঙার কি দরকার। ইফতারের সময় আর বেশি দেরি নেই। ভাঙলে আরও আগে ভাঙতা। মেয়েকে বলল ও সে কথা। জোহরের নামাজ পড়ে মেয়েকে ঘুমুতে বলল তুহিন। এক ঘুমেই দিন শেষ নুসাইবার। ইফতারে এটা খাবে ওটা খাবে কত আবদার। কিন্তু খেতে বসে তেমন কিছুই খেতে পারল না। গালিব মেয়েকে মানা করল আর রোজা রাখতে। সঙ্গে তুহিনকেও বলল ওকে আর সেহরিতে না ওঠাতে। যখন রাখার সময় হবে তখন রাখবে। এখন রাখার দরকার নেই। বাবা মায়ের কথায় আমল না দিয়ে নুসাইবা চার নাম্বার রোজাটাও রাখল। এবং বলল এটা রাখতে তেমন কষ্ট হয়নি। আর কয়েকটা রোজা ও রাখতে পারবে। তুহিন সম্মতিসূচক মাথা নাড়লেও গালিব মুখটাকে থম মেরে রাখল। যাতে মেয়ে বোঝে ওর বাবার সায় নেই এতে। তুহিন মুখ লুকিয়ে হাসতে লাগল। এর পরপর কয়েকটা সেহরি মিস করল নুসাইবা। ডাকলেও উঠতে পারে না। ঘুমে কাহিল মেয়েটাকে আর কষ্ট দেয় না তুহিন। কিন্তু সকালবেলা হাত-পা ছড়িয়ে কান্না করতে বসে ঘুম থেকে ওঠে। কেন ডাকা হয়নি তাকে সেহরিতে? তুহিন যতই বলে- তোমাকে ডাকা হয়েছে মা। তুমিই ওঠোনি। এবং বলো যে তুমি উঠবা না। কই আমি তো কিছুই জানিনা মা। আমি বলছি, আমি উঠব না? তুহিন হমমম বলে মাথা নাড়ায়। নুসাইবা তারপর হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরায় ফেলে। আমার তো ঘুমই ভাঙেনি মা। তাহলে কথা বললাম কীভাবে। এরকম হয় নুসাই। ঘুমেও মানুষ কথা বলে। অবচেতন মনে। যা পরে মনে পড়ে না। তুমিও সেরকম বলো। যে কয়দিন ডাকলাম এরকমই করেছ। তাই আমি তোমার সঙ্গে কথা বলেছি ঘুমে? বলেই আবার হিহিহি করে হাসতে লাগল মেয়েটা। ফজরের নামাজটা মিস দিলেও বাকি চার ওয়াক্তের নামাজ তারাবিসহ মায়ের সঙ্গে পড়ে নুসাই। মাঝেমধ্যে গাঁ গোই করে না পড়ার জন্য। তুহিন যখন বলে- এ একটা মাস রহমতের মাস মা। তুমি যা চাইবা তাই পাবা আলস্নাহর কাছে। তখন আর না করে না মেয়ে। কোরআনও খতম দিয়ে ফেলেছে দুই মাস আগে। তবুও হুজুরের কাছে পড়তে বসায় মেয়েকে। বিভিন্ন সূরা দোয়া-কালাম শেখার জন্য। রমজানে তুহিন হুজুরকে বলে দিল- কোরআনটা যেন খতম দেয়ায় নুসাইকে। হুজুরও সে মতো পড়াচ্ছে তাকে। সব মিলিয়ে আটটার মতো রোজা রাখল নুসাইবা। ঈদের আনন্দে মাতোয়ারা তুহিনের নীল পরীটা। কাপড় কিনল ওর পছন্দমতো। গিফটও পেল খালামণি আর মামাদের থেকে। খুশিতে বাগবাগ সে। বেড়ানোর লম্বা ফর্দ করে ফেলল বাবার সঙ্গে বসে। দাদুবাড়ি নানুবাড়ি চিড়িয়াখানা আরও কত কত জায়গা। তুহিন অতিষ্ঠ মেয়ের পটরপটর কথায়। চাঁদ দেখা গেলে ঈদের পুরো ঘরটা মাথায় তুলল বাপ মেয়েতে। নাচানাচি চলল ওদের ইচ্ছেমতো। তুহিন ঈদের খাবারের জোগাড়যন্ত্রে ব্যস্ত। নুসাই বায়না ধরল মেহেদী পরবে হাতে। তুহিনের সময় কই এসব করার। অগত্যা মেয়েকে পাশের ফ্ল্যাটে আপুর বাসায় পাঠিয়ে দিল। বোনের মেয়ে তুরহানকে বলল, মেহেদীটা হাতে দিয়ে দিতে। তুহিন এদিকে ফোন করে জানালো বোনকে তা। মেহেদীতে লাল হলো তুহিনের লাল পরীটা। সারারাত ঘুমুলো না তেমন। সকালের অপেক্ষা ঈদের অপেক্ষা। সকাল হতে না হতেই কাজের বুয়াটা চলে এলো মেয়েটাকে নিয়ে। ডোর বেল বাজতেই তুহিনের ঘুম ভেঙে গেল। দরজা খুলতেই দেখে তৈয়বা তার মেয়েকে নিয়ে হাজির। কিরে এত সকাল সকাল চলে আসলি। কত কাজ আপা তাই আইসা পড়লাম। কি কি করতে হবে দেন তাড়াতাড়ি। নুসাইবার ঘুম ততক্ষণে ছুটে গেছে। চোখ কচলাতে কচলাতে মার কাছে এলো। তৈয়বার মেয়েটাকে দেখে খুশি হলো খুব। তারপর এক দৌড়ে রুমে গিয়ে নিয়ে এলো তৈয়বা আর তার মেয়ের জন্য কেনা শাড়ি জামা-কাপড় সব। এগুলো পড়ে তুমি আজকে আমার সঙ্গে বেড়াবা।-এটা বলে তৈয়বার মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে ধরল নুসাইবা। দেখো তোমার জন্য জুতা জামা, চুড়ি লিপস্টিক আরও কত কি কিনেছি। তুমি খুশি হওনি বুঝি? হ অনেক খুশি হয়েছি, অনেক। তুহিন আর তৈয়বা তাকিয়ে রইল তাদের দিকে। তৈয়বার চোখে আনন্দের অশ্রম্ন। আর তুহিনের মনটা একরাশ ভালোলাগায় ছেয়ে গেল মুহূর্তেই।