পাখির প্রতি ভালোবাসা

প্রকাশ | ২২ জুন ২০১৯, ০০:০০

মিনহাজ উদ্দীন শরীফ
তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্র অর্পণ ও দর্পণ যমজ দুই ভাই। তাদের জন্ম মামারবাড়িতে মধুমাসের প্রথম দিকে। তাদের বাবা প্রধান শিক্ষক গ্রামের একটা প্রাইমারি স্কুলের; মা গৃহিণী। বাবা দিনের বেলা বেশিক্ষণ সময় স্কুলে থাকে। মা বাড়িতে টুকটাক কাজ শেষ করে টিভি দেখতে বসে যায়। অর্পণ খুব ট্যালেন্ট এবং ক্লাসের ফার্স্ট বয়। দর্পণ দুষ্টুমিতে ক্লাসের ফার্স্ট বয় হলেও ইংলিশে খুব স্মার্ট অর্পণ। দুই ভাইকে নিয়ে তাদের মা-বাবার প্রতিনিয়ত স্বপ্ন বুনে যায় মনে মনে। অর্পণ লেখাপড়ার পাশাপাশি ফুলগাছে পানি দিতে পছন্দ করে। দর্পণ বিড়াল নিয়ে মাঠে খেলা করতে। দুই ভাই মিলেমিশে থাকতে খুব পছন্দ করে মাঝেমধ্যে আবার ঝগড়াও করে। তবে কিছুক্ষণ পর মিলে গলাগলি করে। দুপুর বেলা তারা দুজন হাটে যাওয়ার পথে দেখে একজন লোক কবুতর ধরার জন্য ফাঁদের উপরে ছোট্ট ছোট্ট শস্যদানা ছড়িয়ে দিচ্ছে। অর্পণ ও দর্পণ একটু কাছে গিয়ে দেখে ওই ব্যক্তি শিকারি। আর বেশ কয়েকটা পাখিও ধরে খাঁচায় রেখেছে। এসব নিরীহ পাখিদের বন্দি দেখে তাদের চোখ জলে টলটল করতে লাগল। সাহস করে অর্পণ ও দর্পণ শিকারিকে বলল আপনি ক্যান এই সব অসহায় পাখিদের ধরেন? উনি বলে এটা আমার পেশা ও নেশা বাপুরা! তোমরা এখন যাও তো অযথা পঁ্যাচাল করার সময় নাই। দূরে যাও কবুতরের ঝাঁক আসছে। তোমাদের দেখলে আর আসবে না। তারা বলে চাচা পাখিদের এভাবে ধরবেন না? ওদের ছেড়ে দিন ওই দেখুন খাঁচার পাখিগুলো ওড়ার জন্য ছটফট করছে। শিকারি বিরক্ত হয়ে বলছে এখন তোমরা যাও। তারা বলল চাচা আমরা চলে গেলে পাখিরা তো আপনার হাতে বন্দি হবে। চাচা আপনি জানেন না? পাখি ধরা অন্যায়! কে কইছে তোমাদের এই সব আজাইরা কথা? চাচা আমাদের পাঠ্যবইয়ে আছে। ওহ! আর কিতা কিতা একটু কও তো খোকারা। চাচা বইয়ে লেখা আছে। বনের পাখি খাঁচায় ভরে না রাখতে। কারণ বনের পাখি বনেই সুন্দর। এ ছাড়া পাখিরা ময়লা-আবর্জনা খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। কাক; শকুন; ঈগল; না থাকলে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে আমাদের পরিবেশ নষ্ট হতো এবং রোগ-জীবাণু মানবকুলে বিঘ্ন ঘটাতো। এতে মানুষের বেঁচে থাকতে কষ্টসাধ্য হতো এই সব কথা এই বাচ্চাদের মুখে শুনে নিষ্ঠুর শিকারি পাষাণ মনে একটু মায়া জাগছে। বলতেছে খোকারা আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি। সত্যিই তো এই পাখিদের খাঁচায় মানায় না বনেই পাখিদের সুন্দর মানায়। এই প্রথম কাউকে তারা দুজন পরামর্শ দিয়ে অন্যায় কাজ থেকে ভালো পথে ফিরিয়ে আরও আনন্দে আত্মহারা! হাততালি দিয়ে বলতে লাগল চাচা খাঁচার পাখিদেরও মুক্ত করে দিন। তাদের কথা মতো মুক্তি দিয়ে দিল। এরপর থেকে ওই শিকারি এমন কাজ আর কখনো করেনি। বরং কাউকে দেখলে অর্পণ ও দর্পণের মতো বুঝিয়ে বলে। এজন্য পাখিরা এখন আকাশে স্বাধীনভাবে উড়তে পারে। কেউ আর বন্দি করে রাখে না।