মন্টি

প্রকাশ | ২৯ জুন ২০১৯, ০০:০০

মিতুল সাইফ
স্কু লব্যাগটা জোরে খাটের উপর ছুড়ে দিয়ে কপালের ঘাম মুছে মন খারাপ করে বসে থাকে কমল। মামণি আদর করে জিজ্ঞাসা করেন- 'কি হয়েছে বাবু?' কমল কিছু বলে না। মায়ের কোলে মাথা রেখে ছল ছল চোখে তাকিয়ে থেকে অনেকক্ষণ পর কথা বলে - মন্টির ডান পাটা কে যেন ভেঙে দিয়েছে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। -মন্টিটা আবার কে? -কাঠবেড়ালি। আমাদের স্কুলের ভাঙা পাঁচিলের মধ্যে থাকে। রাজু আর আমি ওর নাম রেখেছি মন্টি। সুন্দর না? -কাঠবেড়ালির পিছনে না ঘুরে এবার একটু পড়াশোনায় মন দাও দেখি। অঙ্কে কত পেয়েছো মনে আছে? ৫০, লজ্জায় আমার মাথা হেঁট হয়ে গেছে। সুপ্তা ভাবীর গবেট ছেলেটাও অঙ্কে ৭৫। -সবাই কি সবকিছুতে ভালো করতে পারে? আমি বাংলায়, ইংরেজিতে ৯০ করে পেয়েছি। -আবার মুখে মুখে কথা। যাও হাত-মুখ ধুয়ে পড়তে বসো। মনটা আরও খারাপ হয়ে যায় কমলের। মন খারাপ করে বসে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর মায়ের কথামতো হাত-মুখ ধুয়ে পড়তে বসে। বই নেড়ে-চেড়ে দেখে শুধু। বেশি মন খারাপ হলেই আর লেখাপড়া হয় না কমলের। শুধু বই সামনে রেখে অভিনয়। আজ শুক্রবার। স্কুল ছুটির দিন। চুপচাপ বাড়ি থেকে বের হয় কমল। রাজুকে ডেকে নিয়ে স্কুলের পথে পা বাড়ায়। স্কুলের ভাঙা পাঁচিলের কাছে এসেই থমকে যায় দুজন। মন্টিটা কোত্থাও নেই। পাঁচিলের ফোকরে, নিমগাছে, ভাঙা ঘরে, কোত্থাও নেই। অস্থির হয়ে খুঁজতে থাকে কমল আর রাজু। পাক্কা এক ঘণ্টা পর মন্টির দেখা মিলল নরেন ঘোষের গোয়াল ঘরের পাশে বিচুলি গাদায়। শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। দেরি না করে মন্টিকে নিয়ে ডাক্তার দাদুর বাড়ি হাজির হলো তারা। চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরতে বেশ দেরি হয়ে গেল। মা বকাবকি শুরু করলেও বাবা আর বড় আপু এসে পাশে দাঁড়ালো কমলের। সব ঘটনা শোনার পর বাবা বললেন খুবই ভালো কাজ করেছ। আমি খুব খুশি হয়েছি। এখন চলো মন্টিকে ওর বাসায় রেখে আসি। ওকে না পেয়ে ওর মা-বাবা নিশ্চয় অস্থির হয়ে গেছে। কমল বলে উঠল : তাই তো বাবা এটা তো ভাবিনি। বাবার মোটরবাইকে চড়ে মন্টিকে বাসায় পৌঁছে দিতেই তার মায়ের সেকি উচ্ছ্বাস। চোখে-মুখে কৃতজ্ঞতা। বাবা কাঠবিড়ালি এ ডাল থেকে ও ডালে ছুটে পাতা ধরে ঝাঁকুনি দিল খানিক। তারপর মন্টির মুখের সঙ্গে মুখ ঘষে আদর করল। মা কোলে নিয়ে পিট পিট করে তাকালো কমলদের দিকে। বাবা কমলকে আদর করে দিলেন, তারপর চেপে বসলেন বাইকে। ঝাউবনের মাথায় তারার বৃষ্টি। চাঁদ আর জোনাকিরা আলোর খেলায় মেতেছে।