ঘাসফড়িং, বুনোহাঁস ও ব্যাঙের গল্প

প্রকাশ | ১৩ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

আহমেদ কিবরিয়া
অ নেক দিন আগের কথা। সবুজে ঘেরা এক বন। সে বনে নানান ধরনের বন্যপ্রাণী বাস করত। সেখানে ছিল একটা ছোট জলাশয়। ওই জলাশয়ে একটা ব্যাঙ বাস করত। পাশে ছিল এক কাশবন। ওই কাশবনের ঝোপে এক বুনোহাঁস বাস করত। কাশবনে একটা কাশগাছে আবার একটা ঘাসফড়িং বাস করত। ব্যাঙের সঙ্গে ঘাসফড়িং ও বুনোহাঁসের খুব মিল ছিল। তারা সময় পেলেই গল্পে মজে উঠত। একদিনের কথা, মোরগের কুক্কুরু কুক আর শেয়ালের হুক্কা হুয়া ডাকে ঘুম ভাঙল তাদের। প্রতিদিনের মতো তারা গল্পে মজে উঠল। ব্যাঙ বলল, ভাই খুব চিন্তায় পড়লাম। ঘাসফড়িং ও বুনোহাঁস বলল, কেন? তোমার আবার কি হলো? ব্যাঙ বলল, জলাশয়টা দেখেছ? কি অবস্থা! একদম পানিগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে, আমি কি করে বাঁচব বলো? ঘাসফড়িং বলল, আসলে এই বন সুন্দর হলেও অনেক সমস্যা। তবুও এ বনে আমাদের আশ্রয়। না হলে কি যে হতো? বুনোহাঁস বলল, চিন্তা করো না। সামনেই বর্ষাকাল। জলাশয় পানিতে ভরে যাবে। তখন তো আর সমস্যা হবে না। তা ছাড়া আমরা তিনজন একসঙ্গে আছি। ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত গল্প আর আনন্দে দিনটা কাটাচ্ছিল। ব্যাঙ শাপলা ফুলের পাতায় লাফাচ্ছিল আর বুনোহাঁস পানিতে সাঁতার কাটছিল। ঘাসফড়িং খুশিতে তাদের সঙ্গে উড়ে উড়ে চলছিল। এভাবে দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল। বর্ষাকাল চলে এলো। জলাশয় পানিতে ভরে গেল। নতুন ঘাস আর পাতায় বন ছেঁয়ে গেল। এমনিতেই ব্যাঙের মন খুশিতে ভরপুর হয়ে গেল তারা তিন বন্ধু সিদ্ধান্ত নিল এবার বনে তারা পিকনিক খাবে ও ঘুরে বেড়াবে। ব্যাঙ বলল, বুনোহাঁস শুনছো! ঘাসফড়িং বন্ধু কি বলছে? বুনোহাঁস বলল, কি কথা? বললেই হলো। ব্যাঙ বলল, ঘাসফড়িং চাচ্ছে, এবার আমরা পাতার নৌকায় পিকনিক খাব আর ঘুরব। বুনোহাঁস বলল, মজার ব্যাপার! কিন্তু...। এবার ঘাসফড়িং বলল, কিন্তু আবার কি! চলো নৌকা বানাই। পাতার নৌকা খুব মজার। তারা তিন বন্ধু মিলে পাতা দিয়ে নৌকা বানাল। নৌকাটা খুব চমৎকার হলো। নৌকায় তিনজন চড়ে বসল। তারা নদীতে চলতে লাগল। নৌকা চালাচ্ছিল ব্যাঙ। আর ঘাসফড়িং পিকনিকের খাবার তৈরি করছিল। বুনোহাঁস মিষ্টি গলায় গান ধরল। হঠাৎ জোরে হাওয়া উঠল। নৌকা গেল উল্টে। ঘাসফড়িং পানিতে পড়ে গেল এবং বাতাসে দূরে ভেসে যেতে লাগল। ঘাসফড়িং চেঁচিয়ে বলতে লাগল, বাঁচাও! ব্যাঙ ও বুনোহাঁস সাঁতার জানত। ব্যাঙ বলল, চিন্তা করোনা বন্ধু, আমরা তোমাকে বাঁচাবোই। ব্যাঙ ঘাসফড়িংকে টেনে নৌকায় তুলল। এদিকে ঘাসফড়িংয়ের ডানা গেছে ভেঙে। সে ব্যথায় কাঁদতে লাগল। বুনোহাঁস আবার কিছু চিকিৎসা জানত। বনের পশু-পাখিদের বিভিন্ন অসুখে সে বন্যলতাপাতার ওষুধ দিত। আর সঙ্গে সঙ্গে তারা আরোগ্য লাভ করত। ওরা ঘাসফড়িংকে কাশবনে বুনোহাঁসের বাসায় নিয়ে এলো। বুনোহাঁস লতাপাতা দিয়ে ওষুধ বানিয়ে ঘাসফড়িংয়ের ডানায় লাগিয়ে দিল। আর সঙ্গে সঙ্গে ওর ডানা জোড়া লাগল। ঘাসফড়িং ব্যাঙ ও বুনোহাঁসকে ধন্যবাদ জানাল। তারা সিদ্ধান্ত নিল, তারা সারা জীবন একে অন্যকে সাহায্য করবে। তারা সে বনে সুখে-শান্তিতে বাস করতে লাগল। শিক্ষা : একে অন্যকে সাহায্য করাই হলো প্রকৃত বন্ধুত্ব।