রিয়ামণির গ্রাম ভ্রমণ

প্রকাশ | ২০ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

সৈয়দ শরীফ
ক'টা দিন ধরে রিয়ামণির প্রচন্ড মন খারাপ। শহুরে চার দেয়ালের মধ্যে রিয়ার ছোট জীবনটাও যেন কারাবন্দি। ওর আব্বু-আম্মু সারাক্ষণই নিজেদের কাজে ব্যস্ত থাকেন। রিয়াকে নিয়ে তারা একটুও খেলতে বসেন না। রিয়ার খালামণি থাকতে সারাক্ষণই ওর সঙ্গে খেলতেন। ঘুরে বেড়াতেন। কিন্তু তার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় ভীষণ একা হয়ে গেল রিয়া। এবার ছুটি পেলে খালামণির কাছে বেড়াতে যাবে বলে ও ঠিক করেছে। কিন্তু আব্বু ছুটি পাবে কিনা তা নিয়েই ভীষণ চিন্তা হচ্ছে ওর। তবু রান্নাঘরে গিয়ে আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বলল- চলো না আম্মু এবার ছুটিতে খালামণির বাড়িতে বেড়াতে যাই। রিয়ার আম্মু বললেন- এখন যাও, কাজ করছি। রাতে তোমার আব্বুকে বলো। রিয়ামণির মনটা আরও খারাপ হয়ে গেল। রাতে আব্বু এসে রিয়াকে আদর করে ডাকছে- 'লিয়ামণি ও লিয়ামণি তুমি কোতায়?' অনেক ডাকার পরও কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না রিয়ার। আব্বু-আম্মু মিলে সারাঘর খুঁজেও কোথাও পেল না রিয়াকে। তবে কোথায় গেল রিয়া? বাড়ির আশপাশ খোঁজার পর রিয়ার আব্বু-আম্মু যখন বাসায় এলো, তখন দেখতে পেল রিয়া ঘরে বসেই একা একা খেলছে। তাড়াহুড়ো করে যখন রিয়াকে তারা ছুঁতে গেল ও তখন বলল- যাও, তোমাদের সঙ্গে আমার কোনো কথা নেই। তোমরা একদম পচা। আমার কোনো কথাই তোমরা শোনো না। রিয়ার আব্বু তখন বলল- তোমার সব কথাই শুনবো আম্মু, আগে বলো তুমি কোথায় লুকিয়েছিলে? রিয়া বলল- আলমারিতে। রিয়ার কথা শুনে আব্বু-আম্মু দুজনই বেশ হাসা শুরু করল। রিয়ার চতুর্থ শ্রেণির পরীক্ষা শেষ। তাই বেশ কিছুদিন ছুটি পেয়েছে। এদিকে রিয়ার আব্বুরও কাজের তেমন চাপ নেই। তাই আজ রাতেই রিয়ামণি আব্বু-আম্মুর সঙ্গে খালামণির বাড়ি যাচ্ছে। খালামণি গ্রামে থাকেন। গ্রামে খালামণির বাড়িতে আসার পর, ঢাকায় থাকা ছোট মানুষ গ্রামে গিয়ে ওখানের ছোট্ট বন্ধুদের সঙ্গে যেভাবে খেলাধুলা ও আনন্দ-উলস্নাস করে, ঠিক তেমনই করছে রিয়া। বৌছি, গোলস্নাছুট, টিপ-রুটির মতো নানান রকমের গ্রাম্য খেলার সঙ্গে পরিচিত হলো রিয়া। শরতের নীল-সাদা আকাশের সঙ্গে এখানকার বিকালগুলো বেশ কোমল হয়ে ওঠে। প্রতিটি সন্ধ্যায় জোনাক ও ঝিঁঝির দুষ্টুমি খুব উপভোগ করছে রিয়া। এখানে আসার পর নতুন সবকিছুর সঙ্গে মিশে রিয়া খালামণির সঙ্গেও আগেকার মতো খেলতে ভুলতে গেছে। ভোরে পাখির কিচিরমিচির ও মোরগের 'কুকুরুকু' ধ্বনি বোধ হয় এই প্রথম এভাবে উপভোগ করল রিয়া। ক'দিনেই গ্রামটির প্রতি ভীষণ মায়া জন্মে গেছে। ওর তো এখন ইচ্ছে করছে এখানেই থেকে যেতে। কিন্তু পড়াশোনার প্রতিও যে ও ভীষণ মনোযোগী। ভদ্র মেয়ের মতো চলে আসতে হবে ভাবতেই রিয়ার মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল। বুদ্ধি করে আব্বুর কাছ থেকে মোবাইলটা এনে নতুন বন্ধু এবং গ্রামের চারপাশটা ভিডিও করে নিল। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আব্বু-আম্মুর সঙ্গে রিয়াও ঢাকায় চলে এলো। কাল থেকে স্কুল শুরু। স্কুলের সব বন্ধুকেই শেখালো নতুন নতুন মজার খেলাগুলো। এই কারণে রিয়া সবার কাছে হয়ে উঠল প্রিয় থেকে প্রিয়। এমনকি স্কুলের বার্ষিক প্রতিযোগিতায় এ বছর কয়েকটি খেলায় রিয়া অর্জন করল প্রথম স্থান। সেই খালামণির গ্রাম ও বন্ধুদের রিয়া কখনোই ভুলতে পারবে না। রিয়ার স্মৃতির পাতায় সারাজীবন আঁকা থাকবে খালামণির গ্রামের ছবি।