রাজস্থানের লোক-কাহিনি

ঢোল

প্রকাশ | ২০ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

অনুবাদক: রাকিবুল রকি
অনেক দিন আগের কথা। এক গরিব মহিলা তার সন্তানকে নিয়ে গ্রামে বাস করত। বেঁচে থাকার জন্য মহিলা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করত। এত পরিশ্রমের বিনিময়ে যে টাকা আয় হতো তা দিয়ে দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা হলেও না কিনতে পারত ভালো জামা-কাপড়, না কিনতে পারত ছেলের জন্য খেলনা। একদিন সে বাজারে যাওয়ার সময় ছেলেকে জিজ্ঞেস করল, 'বাজার থেকে তোমার জন্য কী নিয়ে আসব সোনামণি?' ছেলে সঙ্গে সঙ্গেই বলল, 'আমার জন্য একটি ঢোল নিয়ে এসো মা।' সে বাজারে গিয়ে প্রথমে আটা এবং লবণ কিনল। আটা এবং লবণ কিনেই তার সব টাকা শেষ হয়ে গেল। ঢোল কেনার জন্য কোনো টাকাই তার কাছে রইল না। বাড়ি ফেরার সময় সে দেখল দুই টুকরো সুন্দর কাঠ পড়ে আছে পথে। সে কাঠ দুটো কুড়িয়ে নিল। বাড়ি নিয়ে এলো ছেলের জন্য। বাড়ি আসতে ছেলে দৌড়ে এলো তার কাছে। সে ছেলেকে কাঠের টুকরো দুটো দিল। ছেলে বলল, 'মা, আমি এ দুটো নিয়ে খেলতে যাই।' মা বলল, 'ঠিক আছে যাও। তবে সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরে এসো। তুমি তো জানো, বাড়িতে তুমি না থাকলে আমি একা হয়ে যাই।' 'তুমি কোনো চিন্তা করো না মা।' ছেলে বলল, 'আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসব।' এই বলে সে খেলতে চলে গেল। কিছুদূর যাওয়ার পরই ছেলেটি দেখল, একজন বুড়ো মহিলা চুলোতে শুকনো গোবর দিয়ে আগুন ধরানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু আগুন ঠিকমতো ধরছিল না। ধোঁয়াতে চারপাশ ভরে গেছে। বুড়ো মহিলা বারবার আগুন ধরানোর চেষ্টা করছেন আর কাঁদছেন। ছেলেটি বুড়িকে জিজ্ঞেস করল, 'বুড়ি মা, তুমি কাঁদছো কেন?' বুড়ি বললেন, 'দেখ না, আমি এত চেষ্টা করেও আগুন ধরাতে পারছি না। আমার ছেলেমেয়ে সবাই ক্ষুধার্ত। খাবারের জন্য তারা কাঁদছে। যেভাবেই হোক, তাদের জন্য আমাকে খাবার বানাতেই হবে। বুঝতে পারছি না, এখন আমি কী করব?' \হছেলেটি বলল, 'আমার কাছে দুই টুকরো শুকনো কাঠ আছে। তুমি এ কাঠ নিয়ে আগুন ধরাতে পারো।' বুড়ি খুবই খুশি হলেন। কাঠ দিয়ে খুব সহজেই তিনি আগুন ধরালেন। তারপর কিছু রুটি বানিয়ে ছেলেটিকেও একটি রুটি দিলেন। রুটি নিয়ে ছেলেটি হাঁটতে লাগল। এমন সময় দেখা হলো এক কুমোরের স্ত্রীর সঙ্গে। কুমোরের স্ত্রীর পাশে বসে তার ছেলে জোরে জোরে চিৎকার করে কাঁদছিল। ছেলেটি কুমোরের স্ত্রীকে তার ছেলের কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করল। কুমোরের স্ত্রী বলল, 'বাড়িতে খাবারের কিছু নেই। তাই সে কাঁদছে।' ছেলেটি কুমোরের ক্ষুধার্ত ছেলেকে তার রুটি দিয়ে দিল। কুমোরের স্ত্রী খুবই খুশি হলো। কৃতজ্ঞতায় তার মন ভরে উঠল। সে খুশি হয়ে ছেলেটিকে একটি পাত্র উপহার দিল। ছেলেটি পাত্র নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সেখান থেকে চলে এলো। কিছুক্ষণ হাঁটার পর এক নদীর তীরে পৌঁছালো। সেখানে এসে সে দেখল এক ধোপা তার স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করছে। ছেলেটি তাদের কাছে ঝগড়ার কারণ জানতে চাইল। ধোপা বলল, 'আমার স্ত্রী কাপড় সিদ্ধ করার পাত্রটি ভেঙে ফেলেছে। আমার ওই একটা মাত্র পাত্র ছিল। এখন কাপড় সিদ্ধ করার জন্য আমার কোনো পাত্র নেই।' ছেলেটি বলল, 'আমার পাত্রটি নিয়ে আপনি ব্যবহার করতে পারেন।' ধোপা খুশি হয়ে ছেলেটিকে একটি চাদর উপহার দিলেন। সে চাদর নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি ব্রিজের সামনে এসে পড়ল। সেখানে সে দেখল, একজন লোক শীতে ঠক্‌ ঠক্‌ করে কাঁপছে। ছেলেটি তাকে জিজ্ঞেস করল, 'আপনার কাপড় কী হয়েছে?' লোকটি বলল, 'ডাকাত আমার সবকিছু ছিনিয়ে নিয়েছে। এমনকি আমার পরা কাপড়ও নিয়ে গেছে।' ছেলেটি বলল, 'থাক, এখন আর দুঃখ করে কী হবে? আপনি আমার চাদরটা নিতে পারেন।' লোকটি বেশ খুশি হয়ে ছেলের দেয়া চাদর নিল। বিনিময়ে ছেলেটিকে একটি ঘোড়া উপহার দিল। ছেলেটি ঘোড়ায় চড়ে বসল। ঘোড়া দুলকি চালে এগোতে লাগল। পথে তার সঙ্গে এক দল বরযাত্রীর দেখা হলো। বরযাত্রীদের সবাই মন খারাপ করে গাছের তলে বসে ছিল। ছেলেটি তাদের এমন মন খারাপ করে বসে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করল। এমন সময় বরের বাবা এগিয়ে এসে বলল, 'আমরা সবাই আমার ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে যাব। কিন্তু যে লোকের ঘোড়া নিয়ে আসার কথা, সে এখনো এসে পৌঁছায়নি। এখন ঘোড়া ছাড়া বরকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ওদিকে বিয়ের লগ্নও পার হয়ে যাচ্ছে। আমরা যদি আর কিছুক্ষণ দেরি করি, তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।' ছেলেটি তাদের তার ঘোড়া নিয়ে যেতে বলল। ছেলের এ উদারতায় সবাই খুব খুশি হলো। বরের বাবা বলল, 'তুমি আমাদের অনেক উপকার করলে বাবা। কিছু একটা চাও আমার কাছে।' ছেলেটি বলল, 'বাদকদের কাছ থেকে নিয়ে একটি ঢোল আমাকে দিন।' বরের বাবা তখন একজন ঢোলবাদককে বললেন, তার ঢোলটি ছেলেকে দিয়ে দেয়ার জন্য। ঢোলবাদক তখন তার ঢোল ছেলেটিকে দিয়ে দিলেন। ছেলেটি নতুন ঢোল নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো। তারপর দুটো কাঠের বদলে কীভাবে ঢোল পেল, সেই সব কথা খুলে বলল মাকে।