বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী

এলিয়েন সেইটি

প্রকাশ | ০১ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

সুজন সাজু
কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাথার মধ্যে একটা চক্কর দিয়ে উঠল। সবকিছু যেন ওপর-নিচ দোলাচ্ছে। আর আমিও সঙ্গে সঙ্গে দোলাচ্ছি। চেষ্টা করলাম নিজেকে স্থির করতে। মাথাটা পুরোপুরি কাজ করছিল না। তবে কিছু একটা হচ্ছে সেটা আন্দাজ করতে দ্বিধা হচ্ছিল না। বেশ কতক্ষণ পর সম্বিত ফিরে ফেলাম। সামনের দিকে পা বাড়ালাম। কিন্তু আগের মতো সাবলীল শক্তিটা যেন পাচ্ছি না। কেন এমন হচ্ছে বোঝার চেষ্টা করলাম। এমন সময় বিদ্যুৎও ফঁাকি দিয়ে চম্পট দিল। কোনো রকমে হাতড়িয়ে খুঁজে নিলাম টচর্টা। টচের্র আলোর বদৌলতে হারিকেনটা জ্বালিয়ে নেয়ার সুযোগ হলো। এরই মধ্যে নড়াচড়াটা কেন জানি বীভৎস লাগছে আরও। মাথাটা ঝঁাকিয়ে শ্রবণ ইন্দ্রিয়কে স্থির করে স্থানটি লক্ষ্য করার বাসনায় নিয়োজিত করলাম। আসলেই হচ্ছেটা কী? সব জিনিসপাতিই ঠিকটাক রয়েছে। টুল, টেবিল, চেয়ার, টেলিভিশন, আলনা কোনো কিছুই এদিক-সেদিক হয়নি বা পরিবতের্নর চিহ্নও লেশমাত্র দেখা যাচ্ছে না। তবে কিছু কী একটা ভেলকি দেখাচ্ছে আমাকে? কী লাভ ভেলকি দেখিয়ে? এসব শুধু নীরব ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে মাথার ভিতর। চাইলাম ভুলে গিয়ে একটু চেয়ারে বসে থাকি। ঠিকই ধীর পায়ে গিয়ে নরম ফোমে যেন জোর করে নিজেকে বসালাম। কোন সাড়াশব্দ এই মুহ‚তের্ যেন পলাতক। চোখ দুটি ঘুমের কোলে ঢলে পড়তে চেষ্টা চালাচ্ছে। আমি কিন্তু দখল দিতে রাজি হচ্ছি না। কিছুক্ষণ স্থির থাকলাম নীরবে। অকস্মাৎ আবারও বীভৎস শব্দ বামদিকটায় কান ঘেঁষে দ্রæতবেগে চলে গেল। উঠে দঁাড়ালাম। শব্দ আসার দিকটায় দৃষ্টি ফেরালাম। পা বাড়িয়ে নিজেকে শক্ত করতে সমস্ত শক্তিকে একত্রে করার প্রয়াস চালালাম। সাফল্য পুরোপুরি না পেলেও যা পেয়েছি তা দিয়েই শক্ত হতে চাইলাম। কিছু একটা আমাকে বঁাধা দিতে চাইল। আমিও পাল্টা ডান হাতটা বাড়িয়ে দিলাম বঁাধা অঁাটকাতে। এবার সজোরে একটা অট্টহাসির শব্দ শোনলাম। জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কে, এমন হাসছো যে? তোমার অবয়ব কী নেই? প্রশ্ন শুনে হাসির তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিল! হাসির শব্দটা যে খুব দূরে তা নয়। ঠিক আমার পাশেই। কিন্তু অস্তিত্বটার বিন্দুমাত্র রেশ অনুভব করতে পারছি না। তাহলে এটা কী হতে পারে? ভাবনার জগতে ডুবে গেলাম। এবার যেন আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইল। বলল তুমি প্রায় প্রতিদিন আমাদের নিয়ে ভাব কেন? কী দরকার তোমার আমাদের? তুমি ভাবলেই কী আমাদের সব কিছু করায়াত্ত করতে পারবে বলে ভাবছ? এসব প্রশ্ন শুধু শুনছি, কে বলছে তা খালি চোখের দৃষ্টিতে দেখার সম্ভব হচ্ছে না। না দেখলেও আমি জবাব দিতে চাইছি। বললাম, তুমি কে, কীভাবে জান যে আমি তোমাদের নিয়ে ভাবি? আগে পরিচয় দাও। উত্তরে বলল আমি কে জানতে চাও? হ্যঁা বলে মাথা ঝঁাকালাম। আবারও হাসি। হাসি থামিয়ে বলল, আমাকে তোমরা দেখতে পাবে না। তবে আমাদের অস্তিত্বকে তোমরা বিশ্বাস করো এটা জানি। আমি তোমাদের এই পৃথিবীটা দেখতে এলাম। ভাবলাম তুমি প্রায় ভাবনায় মশগুল থাকো, তাই তোমার কাছে আসার আগ্রহ করলাম। আমরা পৃথিবীর বাইরে ভিনগ্রহের বাসিন্দা। আমরা দল বেঁধে মাঝেমধ্যে তোমাদের পৃথিবীতে ঘুরতে আসি। আমরা ইচ্ছা করলে যে কোনো রূপ ধারণ করার ক্ষমতা রাখি। যেটাকে তোমরা এলিয়েন বলে প্রচার করো। আসলে তোমরা আমাদের এলিয়েন বলো আর যাই বলো না কেন, আমাদের অস্তিত্ব আবিষ্কার করার মতো ক্ষমতা এখনো তোমরা মানুষের মধ্যে নেই বললে চলে। আমরা মুহ‚তের্ই হাওয়ার সঙ্গে বিলীন হয়ে যেতে পারি। তোমাদের পৃথিবীতে অনেক বড় বড় বিজ্ঞানী আমাদের অস্তিত্ব সম্পকের্ জানতে আগ্রহের পরিসীমা রাখে নাই। যেমন ধরো বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং তো বলেই দিয়েছেন পৃথিবীর বাইরেও অনেক প্রাণীর অস্তিত্ব আছে। আমরা তাদের খুঁজে পাচ্ছি না। তবে জেনে রেখো আমাদের নিয়ে গবেষণার পর গবেষকরা করে যাবে, কিন্তু সন্ধান পাওয়ার সুযোগ অত সহজে পাবে না। এই যেমন তোমার সঙ্গে এত লুকোচুরি খেললাম তুমি কিছুই টের পেলে না আমায়। ঠিক তেমনই সব। আজকের মতো বিদায়। গুড নাইট বলে হাওয়া হয়ে গেল নিমিষেই এলিয়েন সেইটি!