শিশুতোষ গল্প

পিউয়ের বন্ধু পিলপিলানি

প্রকাশ | ০৩ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

জ্যোৎস্নালিপি
পিল, পিলা ও নি তিমজ ভাইবোন। পিল ও পিলা ভাই আর নি বোন। খুব ভাব তাদের। ঝগড়াও হয়। তবে কেউ কাউকে ছেড়ে থাকতে পারে না। বর্ষাকাল এমনই; দিনরাতের বেশির ভাগ সময়েই বৃষ্টি হয়। তাই গ্রামের সব পিঁপড়ে পাতার বাসা ছেড়ে ইটের ঘরে নতুন বসতি গড়েছে। তাদের সবারই পাতার বাসায় যে খাবারটুকু সঞ্চিত ছিল, তা ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। মা পিঁপড়ে মন খারাপ করে বলে, এই বৃষ্টি তোর বুঝি অনেক খিদে, আমাদের সব খাবার কেড়ে নিলি। পিলপিলানি মাকে বলে, তুমি কোনো চিন্তা করো না মা, আমরা সবার খাবার জোগাড় করব। তিন ভাইবোন খাবারের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে। চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে তারা। নি বলে, পথ যে আর ফুরোয় না। তবে কি আমরা খাবারের সন্ধান না নিয়েই ঘরে ফিরব। এ সময় পিলা বলে ওঠে, পেয়েছি। পিল বলে, কী? পিলা আনন্দ প্রকাশ করে বলে, খাবার। তিন ভাইবোন চিনির কৌটার মুখের ছোট্ট ফাঁক দিয়ে ভেতরে ঢুকতে গেলে কেমন একটা গন্ধ পায়। সেই গন্ধে তাদের খুব কষ্ট হয়। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চায়। পিল বলে, খাবারের তো খোঁজ পেলাম, তবে এই খাবার আমরা তো নিয়ে যেতে পারব না। ভেতরে তো ঢুকতেই পারছি না। নি বেশ বুদ্ধি রাখে। সে বলে, দেখি না কি হয়। মা আমাকে একবার বলেছিল এখন মানুষ বেশ চালাক হয়ে গেছে। আমরা চিনি খাই বলে তারা কৌটার ভেতর লবঙ্গ নামে একপ্রকার মসলা দিয়ে রাখে। তোরা ভাবিস না, একটা বুদ্ধি তো বের করতেই হবে। কাশতে কাশতে ছোট্ট মেয়ে পিউ মাকে জড়িয়ে ধরে রান্নাঘরের দিকে আসে। নি বলে, ওই দেখ কারা আসছে। বলেছিলাম না, একটা বুদ্ধি বের করবই। পিল বলে, কথা বলিস না, দেখি কী হয়! ছোট্ট মেয়েটিকে তার মা বলে, পিউসোনা তোমার তো কাশি হয়েছে, আদা আর লবঙ্গ দিয়ে চা খেলে ভালো লাগবে। পিউ মাথা নাড়ে। মা চিনির মধ্যে থাকা লবঙ্গগুলো বেছে নেয়। তারপর চা বানিয়ে কৌটার মুখ খোলা রেখেই পিউকে নিয়ে চলে যায়। তিন ভাইবোন তো মহাখুশি। তারা পেটপুরে চিনি খায় আর সঙ্গে করে কিছুটা খাবার মায়ের জন্য নিয়ে যায়। তিনজন যখন দেয়াল বেয়ে ওদের ঘরের দিকে যাচ্ছিল, তখন ওদেরই মতো বর্ষাকালে আশ্রয় নেয়া অসংখ্য পিঁপড়ে খাবারের খোঁজে বের হয়েছে। ওরা সবার মুখে মুখ ঠেকিয়ে খাবারের খবর জানিয়ে দেয়। পিলপিলার বোন নি হয়েছে ভারি দুষ্টু। সে সুযোগ পেলেই বৃষ্টি দেখতে বারান্দার গ্রিলে গিয়ে বসে। কখনও বা বারান্দার ঝুলে থাকা টবে লাগানো গাছের নীল ফুলটার ওপর গিয়ে দু পা উঁচু করে দাঁড়ায়। \হদু-এক ফোঁটা বৃষ্টি ওর গায়ে এসে পড়লে দুলে দুলে নাচে, আর নি.. নি...পিন...পন বলে গান গায়। পিলপিলা বলে, আর বৃষ্টিতে ভিজিস না, ঠান্ডা লেগে যাবে তো। নি কারও কথা শোনে না। ফুল ছেড়ে সে পাতার উপর নাচতে থাকে। আর বলতে থাকে ভারি মজা! ভারি মজা! ছোট্ট মেয়ে পিউ নি'র মতোই বারান্দায় হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছোঁয়। বাবা বারণ করলে বলে, বৃষ্টি খুব ভালো বাবা। পাশ থেকে মা হেসে বলে, তাই বুঝি! ঢল নামলে আমরা ছাদে গিয়ে একসঙ্গে ভিজব। সত্যি সত্যিই জোরে বৃষ্টি নামে। মা-মেয়ে ছাদে গিয়ে হাত ধরাধরি করে বৃষ্টিতে ভেজে। বৃষ্টি দেখতে নি ও পিলপিলাও দেয়াল বেয়ে ছাদে যায়। ওরা অবাক হয়ে মা-মেয়ের ডানা মেলে বৃষ্টিতে ভেজা দেখে। বৃষ্টির তোড়ে ওদের ছোট্ট শরীর ভেসে যেতে চায়। ওরা কোনো রকমে পিউয়ের পা বেয়ে বাঁচার চেষ্টা করে। পিউ বলে, মা মা দেখো দেখো আমার সঙ্গে পিঁপড়েরাও ভিজছে। মা বলে, কুট করে তোমায় কামড়ে দিলে তবে টের পাবে। পিউ বলে, না মা, কামড়াবে না, দেখছ না বৃষ্টিতে কেমন ভেসে যাচ্ছিল ওরা। আমাকে ধরেই তো ওরা বাঁচার চেষ্টা করছে। মা বলে, বাহ! ভারি বুদ্ধি হয়েছে তো তোমার পিউসোনা। তুমি এভাবেই কারও বিপদে এগিয়ে এসো। পিউ পিলপিলানিকে সিঁড়িতে নামিয়ে দেয়। তিন ভাইবোন খুব খুশি হয়। ওরা ওদের ঘরে চলে যায়। বৃষ্টিতে ভিজে খুব জ্বর হয় পিউয়ের। মা অফিসে, বাবাও অফিসে। বাসায় পিউ একা। জ্বরে ছটফট করতে থাকে সে। পিলপিলানি বুঝতে পারে পিউয়ের খুব কষ্ট হচ্ছে! কিন্তু কী করবে ওরা। পিল বলে, আমরা তো খুব ছোট প্রাণী, কি করে বন্ধু পিউকে সাহায্য করবে। নি বলে, কিন্তু কিছু একটা তো করতে হবে। তিন ভাইবোন মাকে গিয়ে পিউয়ের কথা বলে। তারপর সারি সারি পিঁপড়ের দল মুখে চিনি নিয়ে পিউয়ের গস্নাসের দিকে এগোতে থাকে। একদল টেবিল থেকে এক টুকরো লেবু টানতে টানতে পিউয়ের টেবিলে রাখা গস্নাসে ছেড়ে দেয়। জ্বরে পিউয়ের খুব তেষ্টা পায়। গস্নাস মুখে নিয়ে এক ঢোক খেয়েই বুঝতে পারে, শরবত। পিউ ভাবে, মা তো বাসায় নেই, তাহলে শরবত এলো কীভাবে! সে দেখতে পায় এক টুকরো লেবু নিয়ে পিঁপড়েরা আসছে। পিউ এবার বুঝতে পারে চিনিও ওরাই এনেছে। সে লেবুর টুকরোটি গস্নাসের জলে চিপে নেয়। তারপর খেয়ে অনেকটা ভালো বোধ করে। এর মধ্যে মাও এসে যায়। পিউ মাকে বলে পিলপিলানির কথা। ওদের তিন ভাইবোনকে হাতের ওপর তুলে আদর করে খুব সাবধানে; কারণ ওদের ছোট্ট তুলতুলে শরীরে ব্যথা লাগবে তো!