মশা রাজা টিংটিং

প্রকাশ | ০৩ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

মিতুল সাইফ
মশা রাজার দরবার। বুড়ো মন্ত্রী গুনগুন চেঁচিয়ে উঠল- তোদের তো কোনো মানবতা থুক্‌কু মশাবতা নেই। গরিবের বাড়িতে হানা দিস। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কামড়াস, আমরা মশা হতে পারি তাই বলে মায়া-মমতা কিছু থাকবে না? ডেঙ্গু ও টেঙ্কু মশা বলল- কি করব, আমাদের কাজই তো এরকম। মানুষের রক্ত নিয়ে বংশবিস্তার করায় আমাদের কাজ। মশা রাজ টিংটিং হুংকার দিয়ে উঠল- যা হওয়ার হয়েছে এখন থেকে নতুন নিয়ম কেউ গরিবের বাড়িতে উৎপাত করবে না। ফুটপাতে রেলস্টেশনে অসহায় মানুষের উপরে হানা দেবে না। বুড়ো উজির কটাং বলল- এমন বেছে বেছে মানুষ ধরতে গেলে আর রক্ত খেতে হবে না। আমরা মশা, অত মায়া-দয়া কেন আমরা দেখাব? মানুষই তাই মানুষকে দেখতে পারে না, খুন-খারাবি করে, সারাক্ষণ যুদ্ধ লাগিয়ে রেখেছে। বোমা অস্ত্র গোলাবারুদ দিয়ে নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করছে তখন? রাজা মশাই বলল- মানুষের কাজ মানুষ করেছে, আমরা কেন অমন হবো? এই কারণেই তো তোদের কেউ দেখতে পারে না। তোদের গানও পছন্দ করে না, তোদেরও ঘেন্না করে। মন্ত্রী গুনগুন বলল- রাজা মশায় আপনিই এর সমাধান করে দিন। আমরা নাদান, না বুঝে, বুঝে কত কিছুই করি। তার ভালো-মন্দ আপনিই ভালো বোঝেন। রাজা মশাই আদেশ দিলেন- সামনে ঈদ এবার ঈদেই আমার এই নতুন নিয়ম চালু হলো। কোনো গরিব অসহায় মানুষকে কামড়ানো চলবে না। এবং খোঁজ নিয়ে ঘুষখোর, অত্যাচারী, জুলুমবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মোট কথা যারা সমাজের ক্ষতি করে তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ো। শিশু এবং বৃদ্ধদের কিছু বলবে না। উজির কটাং বলল- দুই একটা ছেলেমেয়ে পড়ে না, মায়ের কথা শোনে না বাঁদর টাইপের এদের নিশ্চয় কামড়ানো যাবে? রাজা মশায় বলল- না, কোনো শিশুকে কামড়ানো চলবে না। ডেঙ্গু বলল- মানুষ অকৃতজ্ঞ। এত উপকার করি তাও আজও পাখির মর্যাদা পেলাম না। দুষ্টু পেঁচা, কাক তারাও পাখি, আর আমরা? নোংরা পোকা? রাজা মশাই বললেন- কি এত উপকার করিস শুনি? তোদের যন্ত্রণায় মানুষের ঘুম হারাম। ডেঙ্গু বলল-আমরা আছি বলেই এত মশার কয়েল ফ্যাক্টরি, মশা নাশক স্প্রেসহ কত কারখানা। কত লোক আয়-ইনকাম করে খাচ্ছে। আবার কেউ কেউ আমাদের নিধন করার নামে দেদার সরকারি টাকায় পকেট মোটা করছে। আমরা কত গান শুনাই বিনিময়ে শুধু একটু রক্ত পান করি। এটা দোষের? মশার এত বিস্তারের জন্য মানুষও তো দায়ী। যেখানে-সেখানে আবর্জনা, জলাবদ্ধতা, ওরাই সৃষ্টি করে মশা বিস্তারে কাজ করেছে। রাজা মশায় বললেন- চুপ! আর একটাও কথা না। যা বলেছি বলেছি আমার আদেশ পালন করোগে। যারা মানবে না তাদের কঠিন শাস্তি। যাও আজকের মতো দরবার শেষ, আর গরিব, অসহায়, টোকাই সবাইকে জানিয়ে দাও আমার ইচ্ছের কথা। কি আর করা ডেঙ্গু, টেঙ্গু, কটাং, গুনগুন, সব মশারা রাজার ইচ্ছের কথা প্রচার করে বেড়ালো এবং সে মোতাবেক কাজ শুরু হলো ঈদের আগেই। অসহায় গরিব আর টোকাইরা তো মহাখুশি সবাই মশা রাজ টিংটিংযের নামে স্স্নোগান দিতে লাগল। আর ওদিকে দুষ্টু ঘুষ খোর সন্ত্রাসী, মোট কথা শয়তান মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে নিজেদের কু-কর্মের কথা শিকার করে সবাই আইনের কাছে ধরা দিল। সর্বত্র ফিরে এলো শান্তি। সবখানে মশারাজ টিংটিংয়ের নামে জয়ধ্বনি শুরু হলো।