'মানুষের উপকার'

প্রকাশ | ১৭ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

রবিউল ফিরোজ
আজ কাশিয়া বাড়ির হাট। ফাহিমকে ডাকে ওর মা। কিছু টাকা হাতে দিয়ে সওদা কিনে আনতে বলে। খুশি হয় ফাহিম। হাটে যেতে ওর ভালো লাগে। হাট তো হাট নয়- যেন লোকের মেলা। আন্ডা বাচ্চা, জোয়ান বুড়ো, কত্ত রকম মানুষ! আলুপট্টি, ধানপট্টি, বেতপট্টি, গমপট্টি, তরকারিপট্টি আরও কত পট্টি! কেউ আসে বেচতে কেউ আসে কিনতে। বড় বড় পাইকার আসে দূরদূরান্ত থেকে। তারা মালামাল কিনে নৌকায় অথবান্ত্রাকে করে নিয়ে যায়। নদীর তীরে গড়ে উঠেছে কাশিয়াবাড়ি হাট। শনি আর মঙ্গল সপ্তাহের এই দুদিন হাট বসে এখানে। নদীর মুখ থেকে একটি ক্যানেল গিয়েছে সোজা মাঠের দিকে। দুই পাড়েই রাস্তা। প্রশস্ত ক্যানেলটি পারাপারের জন্য রয়েছে উঁচু করে তৈরি সাঁকো। সাঁকো মানে পারাপারের সংকীর্ণ সেতু। যেটা সাধারণত বাঁশ দিয়ে তৈরি হয়। পাদানি হিসেবে থাকে একটি বা দুটি বাঁশ। সামনে এগিয়ে যেতে তাল সামলাতে হয়। এজন্য হাত রাখার জন্য হাতল হিসেবে আরেকটি বাঁশ। এই হলো সাঁকোর মোটামুটি সংজ্ঞা। হাটের দিনে পারাপারের জন্য এখানে খুবই ভিড় হয়। সিরিয়াল ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তা ছাড়া বেশি লোক চড়লে সাঁকোটি মচমচ শব্দ করে। যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। ফাহিম সবেমাত্র হাই স্কুলে সিক্সে ভর্তি হয়েছে। মায়ের দেয়া টাকা হাতে নিয়ে সে হাটের দিকে রওনা দেয়। কখনো সে হাঁটে কখনো দৌড়ায়। বলতে গেলে দৌড়িয়েই সাঁকোটি পার হয়ে যায়। বিপত্তি ঘটে আসার পথে। ফাহিম যখন সাঁকোটিতে পা রেখেছে তখনই ঘটে ঘটনাটি। ওর সামনে থাকা বৃদ্ধ লোকটি ঝপ করে পানিতে পড়ে গেছে। এপার-ওপার দুই পারের লোকজনই চিৎকার করে ওঠে, ধরো..ধরো..মরে গেল...মরে গেল। বর্ষাকালের ভরা নদী। অথৈ পানিতে বৃদ্ধ লোকটি বাঁচার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। কূলে এসেও উঠতে পারছে না। আশ্চর্যের বিষয় হলো- দর্শক সবাই ধরো ধরো করলেও পানিতে নামছে না কেউ। হয়তো লোকটি তাদের কেউ নয়। বাঁচাতে গেলে কাপড় ভিজে যাবে ভয়টা সেটাও হতে পারে। মানুষের উপকারের সুযোগ জীবনে খুব কম আসবে। তবে ক্ষতি করার সুযোগ আসবে অনেক। নাটক সিনেমাতে নায়ক কত মানুষের উপকার করে। এখানে সবাই কমবেশি সেগুলো দেখে। অথচ কেউ এগিয়ে যাচ্ছে না কেন? ফাহিম আর দেরি করে না। হাতের সওদাগুলো সব ছেড়ে দেয়। এরপর সেও ঝাঁপ দিয়ে পড়ে পানিতে। প্রাণপণে চেষ্টা করে লোকটিকে তীরে নিয়ে আসার। দুজনই পানিতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। বুঝতে পারে ডুবন্ত মানুষকে পানি থেকে তোলা খুবই কঠিন কাজ। একটু পরই মাটি স্পর্শ করে ফাহিমের দুটি পা। ধারের লোকজন হইহই করে ওঠে। তাদের কেউ কেউ হাঁটু পানিতে নেমে আসে। ফাহিমের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। বলতে থাকে, হাত ধরো-হাত ধরো। ফাহিম একহাতে পাঁজাকোলা করে ধরে বৃদ্ধ লোকটিকে। আরেকটি হাত বাড়িয়ে ধরে লোকজনের হাতের দিকে। অবশেষে দুজনই নিরাপদে উঠে আসে পানি থেকে। বৃদ্ধ লোকটিকে নেয়া হয় ডাক্তারের কাছে। কাকভেজা ফাহিমও রাস্তা ধরে। ফাহিম শূন্য হাতে ফিরে আসে বাড়িতে। সবকথা শুনে ছেলের কপালে চুমু খায় ওর মা। পরম আদরে বুকে জড়িয়ে নেয় ভেজা জবুথবু ফাহিমকে।