তোমাদের গল্প

চড়ুই পাখির উপদেশ

প্রকাশ | ১৭ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

বাসুদেব নাথ
তপু পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। খুবই খোশমেজাজী ছেলে। সবসময় কোনো না কোনো বিষয়ের ওপর তার আগ্রহ, ছুটে চলা লেগেই থাকে। বলা যায়, শৈশবের সময়টাই তো এমন হয়। গত কিছুদিন আগেই তার চোখ পড়ল চিলেকোঠায় থাকা চড়ুই পাখির বাসাটার উপর। এবার তার ভাবনা ছুটে চলে সেই বাসাটার পিছনে। পাখির বাসাটা ছিল খুবই কাঁচা। চড়ুই পাখি মাত্র কয়েকটা খড়কুটো দিয়ে বানিয়েছে বাসাটা। বাসার উপরে চিলেকোঠার টিনের ফুটো দিয়েও ফোঁটা ফোঁটা পানিও পড়ে বাসার মধ্যে। এসব দেখে তপুর রাতে ঘুম নেই। পরদিন স্কুলেও সে আনমনা। সে শুধু ভাবছে পাখির বাসাটিকে কি করা যায়। স্কুলে বসে বসেই বুদ্ধি করল। স্কুল থেকে ফিরে তাড়াহুড়োর মধ্যে খেয়েই সে ঘরে ঘরে ঘোরাঘুরি করছে এবং ছোট ছোট কিছু জিনিস খুঁজতে লাগল। তপুর মা খেয়াল করল সে বাঁশ, ধানের খড়, সুতোসহ টুকিটাকি আরও কিছু বস্তু একত্র করল। তখন মা কৌতূহলী হয়ে যখন তাকে জিজ্ঞেস করল 'তপু তুমি কি করতে যাচ্ছো? তখন তপু উত্তর দিল মা, একটি পাখির বাসা তৈরি করব'। সে কেন বাসা বানাচ্ছে সেটা জানতে চাইলে মাকে সব খুলে বলল। মা এবার একটু হেসে কাজের ছলে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেল। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক পর সে একটি মজবুত এবং পোক্ত বাসা তৈরি করল। এবার সে তার তৈরি বাসাটি ও একটি মই নিয়ে চিলেকোঠায় গেল এবং চড়ুই পাখির বাসাটির থেকে প্রায় এক হাত দূরত্বে তার তৈরি করা বাসাটি সুন্দরভাবে বেঁধে দিল। চড়ুই পাখি বাসায় ফিরবে ভেবে সে ঘরে চলে গেল। ঘরে গিয়ে অন্যদিনের তুলনায় অনেক খুশি ছিল এবং অস্থির ছিল কিছু আশা নিয়ে। তার নিয়ত শুধু একটিই পাখিগুলো তার তৈরি বাসায় থাকবে। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল তপু। রাতের আঁধার কাটিয়ে সামান্য আলোকিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে ঘুম থেকে উঠে পড়ল এবং মুখে ব্রাশ দিয়ে চিলেকোঠায় ছুটে গেল। চিলেকোঠায় গিয়ে সে একটু হতাশ হলো। চড়ুই পাখিগুলো এখনো তাদের কাঁচা বাসাটিতেই আছে, উড়াউড়ি করছে, ডুকছে- বেরুচ্ছে। তপু আশা হারালো না। সকালের নাশতা সেরে স্কুলে গেল। স্কুলের বন্ধুরা সবাই খেলাধুলা ও মজা করা নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু সে শুধু ভাবছে 'পাখিগুলো কি আমার তৈরি বাসায় ঢুকেছে? তারা কি সেখানে থাকবে?' এমন অনেক ভাবনার মধ্য তার স্কুলের ছুটির ঘণ্টা বেজে উঠল। স্কুল থেকে ফিরেই আবার একদৌড়ে সেই চিলেকোঠায় কিন্তু সে আবারও হতাশ হলো পাখিগুলো এখনো আগের মতোই তাদের কাঁচা ঘরেই আছে, ওড়াউড়ি করছে। এভাবে দুদিন পেরিয়ে গেল সে আরও হতাশাগ্রস্ত হতে লাগল। তার বিষণ্নতা তার বাবা লক্ষ্য করল। দিন শেষে রাত, সে বিষণ্ন মন নিয়ে পড়ার টেবিলে বসল তখন তার বাবা তার পাশে এসে বসল এবং তার বিষণ্নতার কারণ জানতে চাইল। তখনি তপু তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করল এবং সব বলতে লাগল। তার বাবা সব বুঝতে পারল। তখন সে তপুর চোখ মুছে দিয়ে বলল 'শোনো তপু, সবসময় নিজের অর্জনের ওপর সন্তুষ্ট থাকা উচিত, আত্মনির্ভরশীল হওয়া উচিত। চড়ুই পাখিগুলো তাদের কাঁচা ঘর নিয়েই সন্তুষ্ট কারণ সেটি তারা নিজেরা তৈরি করেছে। আমাদের সবার উচিত চড়ুই পাখির কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। নিজের অর্জনের ওপর সন্তুষ্ট হওয়া এবং আত্মনির্ভরশীল হওয়া।' তপু তার বাবার কথা বুঝতে পারল এবং পরদিন পাখিরা যখন খাদ্যের সন্ধানে বের হলো তখনি সে তার হাতে তৈরি বাসাটি নামিয়ে নিল। চড়ুই পাখির কাঁচা বাসায় যেন টিনের ফুটো দিয়ে পানি না পড়ে সেটির জন্য ব্যবস্থা নিল এবং পানি পড়া বন্ধও করল। এরপর থেকে সে প্রতিদিন চিলেকোঠায় যায় পাখিগুলোর ওড়াউড়ি দেখে এবং ফেরার সময় পাখিগুলো যেখানে বেশি বসে সেখানে চালের খুদ ও গমের গুঁড়ো রেখে আসে। সঙ্গে সঙ্গে সেও চড়ুই পাখির মতো নিজের অর্জনে সন্তুষ্ট এবং আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পণ করে।