ফুলকলি ও পরীর বন্ধুত্ব

প্রকাশ | ৩১ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

শেখ বিপস্নব হোসেন
শরতের এক পড়ন্ত বিকালে খোলা সবুজমাঠের এক কোণে একটি আমগাছের ছায়ায় শুয়েছিল একটি ফুলকলি। সে প্রচন্ড জ্বরে কাঁপছিল। তাকে দেখার মতো আশপাশে কেউ ছিল না। দেখে মনে হয় না-জানি কতদিন হলো নাওয়া-খাওয়া নেই তার। যেন একটু নাড়া দিলেই বাসি ফুলের পাপড়ির মতো ঝরে পড়বে মাটিতে। পাশেই একটা মানুষ চলাচলের রাস্তা ছিল। কিন্তু, কেউই যেন তাকে দেখেই দেখল না। সবাই তাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। আস্তে আস্তে আগের সূর্যটা পশ্চিমে হেলে পড়ল। দেখতে দেখতেই চারপাশে অন্ধকার নেমে এলো। চারপাশটা একেবারেই ফাঁকা। সুনসান। কোথাও যেন কারও টু-শব্দটিও নেই। ফুলকলি তো প্রচন্ড জ্বর ও ক্ষুধার জ্বালায় মরিমরি অবস্থা। এখন কী হবে ওর? কে ওকে একটু আদর ভালোবাসা দেবে? কে ওকে সেবা দিয়ে সুস্থ করবে? এর কোনো সঠিক উত্তর জানা নেই! শরতের রাত বেশ সুন্দর লাগছে। চাঁদের মায়াবী আলোয় যেন সারা পৃথিবীতে আলো-ছায়ার খেলা চলছে। চাঁদের আলোয় সবকিছুই পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। খোলা মাঠের পাশেই ছিল একটি ফুলের বাগান। সেখানে একটি পরী ঘুরছিল। হঠাৎ কার যেন গোঙানির আওয়াজ শুনতে পেল সে। পরী তখন এদিক-ওদিক খুঁজতে লাগল। কে ওভাবে গোঙাচ্ছে? সে খুঁজতে খুঁজতে আমগাছের কাছে এলো। দেখে একটি ফুলের ছানা গাছের নিছে শুয়ে আছে। পরীটি তার কাছে গেল। গায়ে হাত বুলাতেই পরীর চোখ ছানাবড়া! ওমা! সে কী! জ্বরে তো গা পুড়ে যাচ্ছে। সে ভাবতে লাগল, এটুকু বাচ্চা এখানে এ অবস্থায় পড়ে আছে? কি করে সম্ভব? থাক, ওসব পরে হবে। আগে মেয়েটাকে সুস্থ করি। পরী চম্পাবতী তার হতের জাদুর কাঠি ফুলকলিকে ছুঁইয়ে দিতেই সে আবার আগের মতো সুস্থ হয়ে উঠল সে। ফুলকলি চোখ মেলে তাকাতেই দেখতে পেল একজন সুন্দরী রমণী তার সামনে দাঁড়িয়ে। সে বিস্ময় নিয়ে বলল, কে তুমি গো? আমাকে সুস্থ করে দিলে? উত্তরে চম্পাবতী মিষ্টি হেসে বলল, আমি পরীর স্থানের পরী চম্পাবতী। তুমি কে? তোমার নাম কী? কোথায় থাকো? ও নড়েচড়ে বসল। বলল, আমি শিউলি ফুলের কন্যা। আমার নাম তুবা। আমি পাশের ওই ফুলবাগানে থাকি। তুমি খুব ভালো। তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। দেখো না! এই পৃথিবীর মানুষ কত নিষ্ঠুর। কত কঠিন। কারও বিপদে কেউই এগিয়ে আসে না। অথচ, তুমি আমাকে সাহায্য করলে। তুমি না এলে হয়তো আমি মরেই যেতাম। চম্পাবতী আদর করে বলল, তুবা! বিপদের সময় ধৈর্য হারাতে নেই। মনে সাহস রাখতে হয়। ধৈর্য ধরতে হয়। বুদ্ধি খাটিয়ে বিপদকে জয় করতে হয়। বিপদের সময় মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করতে হয়। তিনি ঠিক কাউকে না কাউকে সাহায্য করতে পাঠিয়ে দেন। এবার বলো, তোমার বাবা-মা কোথায়? আর তুমিই বা এখানে একা এ অবস্থায় পড়েছিলে কেন? পরীর কথা শুনে তুবা কাঁদতে লাগল। সে কাঁদতে কাঁদতে বলল, চম্পাবতী, তুমি কি জানো এ পৃথিবীতে আমার আপন বলতে আর কেউই নেই। আমি একা! আমাকে দেখার কেউ নেই বলেই তো এখানে পড়েছিলাম। তুবার কথা শুনে অবাক হলো পরী। বলে কী! সে তুবার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, তোমার বাবা-মার কী হয়েছিল? তুবা, কান্না থামিয়ে বলল, সে অনেক কথা। আমরা বাবা-মায়ের এক ছেলে, এক মেয়ে। আমাদের ছোট্ট পরিবার ছিল। আমাদের সুখেই কাটছিল দিন। হঠাৎ একদিন আমাদের এই ফুলের বাগানে একদল রাক্ষুসে বানর এলো। তারা মুহূর্তের মধ্যেই আমাদের এই সুন্দর ফুলের বাগান তছনছ করে ফেলল। ওই রাক্ষুসদের অত্যাচারে আমার বাবা মারা গেল। মা মারা গেল। একদিন ভাইটিও নিখোঁজ হলো। সবাইকে হারিয়ে আমি হয়ে গেলাম একা। বড় একা। তুবা ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। চম্পাবতী তার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল, তুমি আর কেঁদনা সোনামণি! কে বলেছে তোমার কেউ নেই? এই দেখো, আমি তো আছি। আজ থেকে তুমি আমার সাথে থাকবে। খেলবে। আবার আগের মতো হাসি-খুশি থাকবে। কেমন? পরী চম্পাবতীর কথা শুনে তুবার মনে আনন্দের ঢেউ খেলে গেল। সে দু'হাতে চোখের পানি মুছে বলল, তাহলে আজ থেকে তুমি আমার বন্ধু। পরী মিষ্টি করে হেসে বলল, হঁ্যা। আজ থেকে আমি তোমার বন্ধু। চলো। আমার দেশে চলো।