ছোটদের নজরুল

প্রকাশ | ৩১ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

পৃথ্বীশ চক্রবর্ত্তী
নজরুল বড়দের জন্য যেমন লিখেছেন তেমনি শিশু-কিশোর-কিশোরীদের জন্যও লিখেছেন মজাদার ছড়া, কবিতা, গান, নাটক ও ছোট গল্প। কিশোর মন ঘরে থাকতে চায় না। অজানাকে জানতে আর অদেখাকে দেখতে তার মন টগবগ করে। আর তাই তো 'সংকল্প' কবিতায় নজরুল কৈশোর মনের বহিঃপ্রকাশ ঘটালেন এভাবে: 'থাকব না কো বদ্ধ ঘরে দেখব এবার জগৎটাকে কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে। ...' কিশোরদের উপযোগী তার আরেকটি কবিতা : 'আমি হব সকাল বেলার পাখি সবার আগে কুসুম বাগে উঠব আমি ডাকি। সূয্যি মামা জাগার আগে উঠব আমি জেগে হয়নি সকাল ঘুমো এখন মা বলবেন রেগে। বলব আমি আলসে মেয়ে ঘুমিয়ে তুমি থাকে হয়নি সকাল তাই বলে কি সকাল হবে না কো? আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে তোমার ছেলে উঠলে মা গো রাত পোহাবে তবে।' কবির এই সহজ-সরল কবিতার আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে সমগ্র ভারতের স্বাধীনতার ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য। সকালবেলার পাখিরা যেমন কিচিরমিচির সুর তুলে মানুষকে জানান দেয়- 'ভোর হয়েছে-সবাই ঘুম থেকে ওঠো' তেমনি কবি সারা ভারতের মানুষকে ভোরের পাখি হয়ে জাগাতে চেয়েছেন। এ দেশের তরুণরা জেগে উঠলে ব্রিটিশদের তাড়ানো যে সহজ হবে এবং ভারতের পুবের আকাশে স্বাধীনতার সূর্য উঠবে এমন উপলব্ধি থেকেই তিনি বিখ্যাত এই কিশোর কবিতাটি আমাদের উপহার দিয়েছিলেন। ছোটমণিদের জন্য তার আরেকটি প্রিয় ছড়া:'ভোর হল দোর খোলো খুকুমণি ওঠোরে ওই ডাকে জুঁই-শাখে ফুল-খুকি ছোটরে। খুলি হাল তুলি পাল ওই তরী চলল এইবার এইবার খুকু চোখ খুলল। আলসে নয় সে ওঠে রোজ সকালে রোজ তাই চাঁদা ভাই টিপ দেয় কপালে।' (প্রভাতী) ছোটদের উপযোগী তার আরেকটি আকর্ষণীয় ছড়া 'ঝিঙেফুল' : ঝিঙেফুল ঝিঙেফুল সবুজ পাতার দেশে ফিরোজিয়া ফিঙে-কুল- 'ঝিঙেফুল।' গুল্মে পর্ণে/ লতিকার কর্ণে/ ঢল ঢল স্বর্ণে ঝলমল দোলে দুল / ঝিঙেফুল' -পরিবেশ চেতনা অর্জন ও প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টিতে এ ছড়াটি অনবদ্য ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি। শিশু-কিশোর- কিশোরীদের প্রায় পাগল করা নজরুলের একটি চমকপ্রদ ছড়া 'খুকি ও কাঠবিড়ালী'। ছড়াটি- এরকম: কাঠবিড়ালী কাঠবিড়ালী পেয়ারা তুমি খাও? বাতাবি লেবু, লাউ বিড়াল বাচ্ছা কুকুর ছানা, তাও? -এমন ব্যঙ্গাত্মক ও রসাত্মক শিশু-কবিতা বাংলা শিশুসাহিত্যে বিরল। যেখানে কবি ওই ছড়াটি লিখতে গিয়ে মনে হয় নিজেই খুকি হয়ে গিয়েছিলেন। 'কালো জামরে ভাই' ছড়া-কবিতায় লিখেছেন- 'কালো জামরে ভাই! \হআমি কি তোমার ভায়রা ভাই? \হলাউ বুঝি তোর দিদিমা আর \হকুমড়ো তোর দাদামশাই' 'শিশু-সওগাত'-এ লিখেছেন: 'তোর দিন অনাগত, শিশু তুই আয়, জীবন-মরণ দোলে তোর রাঙা পায়। তোর চোখে দেখিয়াছি নবীন প্রভাত,/তোর তরে আজিকার নব সওগাত।' 'নতুন খাবার' তার আরেকটি হাসির ছড়া। ছড়াটি হলো: 'কম্বলের অম্বল কেরোসিনের চাটনি/ চামচের আমচুর/ খাইছ নি নাতনি? আমড়া-দামড়ার/ কান দিয়ে ঘষে খাও/ চামড়ার বাটিতে/ চটকিয়ে কষে খাও।...' এরকম আরও কত ছড়া-কবিতা তিনি শিশু-কিশোরদের জন্য রেখে গেছেন।