ধূর্ত শিয়াল

প্রকাশ | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

দীপংকর দীপক
খেজুর বাড়ি গ্রাম। পাশেই ছোট্ট একটি বন। সেখানে বাস করে একটা ধূর্ত শিয়াল। রাতের আঁধারে এবাড়ি, ওবাড়ির খোঁয়াড়ের হাঁস-মুরগি প্রায়ই খেয়ে ফেলে সে। তার কারণে গ্রামবাসী ভীষণ অতিষ্ঠ। অবশেষে একদিন গ্রামের কয়েকজন মিলে শিয়ালটির খোঁজে বের হয়। চতুর শিয়াল মানুষের টের পেয়েই গর্তে লুকিয়ে পড়ে। তাই দিনভর খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরদিন পূর্ণিমা রাত। শিয়ালটি বনের বাইরে এসে মনের সুখে 'হুক্কা হুয়া' সুরে ডাকাডাকি করতে থাকে। এতে অনেকের ঘুম ভেঙে যায়। রেগে গিয়ে কয়েকজন তরুণ ঝুঁপি হাতে তাকে মারতে যায়। কিন্তু শিয়ালটি বেজায় চালাক। মানুষের টের পেয়েই বনের দিকে এগিয়ে যায়। তরুণরাও তার পিছু নেয়। বনের পাশেই একটি আমগাছ। তার চিকন-চাকন একটি ডালে মৌমাছিরা বাসা বেঁধেছে। শিয়ালটি ধীর পায়ে গাছটিতে ওঠে। ইতোমধ্যেই তরুণরাও এর গোড়ায় চলে আসে। এমন সময় শিয়ালটি মৌচাকের ডালটিতে দুই পা রেখে সজোরে দেয় ঝাঁকি। আর তো মৌমাছিরা যায় ক্ষেপে। চতুর শিয়াল তো ঝাঁকি দিয়েই পগারপার। এদিকে মৌমাছিরা তরুণদের জাপটে ধরে। তারা একের পর এক ওদের গাঁয়ে হুল ফোটাতে থাকে। তখন শীতকাল। খেজুরগাছ কাটার ধুম পড়েছে। বনের পাশেও দুটি খেজুরগাছ আছে। হারুণগাছি গাছ দুটি কেটে তাতে মাটির হাঁড়ি ঝুলিয়ে দেন। কিন্তু হায়, কী সর্বনাশ! প্রতিদিন সকালে তিনি এসে দেখেন, হাঁড়ি দুটি ভাঙা অবস্থায় গাছের নিচে পড়ে আছে। মহাচিন্তায় পড়েন গাছি। এর রহস্য খুঁজে বের করতে একদিন রাতে তিনি ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকেন। রাত কিছুটা গভীর হতেই শিয়ালটি গুটিগুটি পায়ে বন থেকে বের হয়ে আসে। এরপর সে তরতর করে বড় খেজুরগাছটিতে উঠে পড়ে। শিয়ালের নখ বড় বড়। তাই তারা বিড়ালের মতো শাঁই শাঁই করে গাছে উঠতে পারে। গাছে ওঠার পর শিয়ালটি গলাটা লম্বা করে হাঁড়ির মধ্যে মুখ ঢুকিয়ে দেয়। এক টানেই সব রস খেয়ে ফেলে। তারপর মাথা বের করার জন্য সজোরে দেয় ঝাঁকি। আর হাঁড়ি ছিটকে গিয়ে মাটিতে পড়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এবার হারুণগাছির মাথায় একটি বুদ্ধি আসে। পরদিন তিনি মাটির হাঁড়ির বদলে সিলভারের কলস ঝুলিয়ে রাখেন। কিন্তু শিয়ালটি তা বুঝতে পারেনি। ওই রাতেও সে কলসের ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে রস খায়। রস খাওয়া তো শেষ। কিন্তু একি বিপদ! শিয়ালটি তো আর কোনোভাবেই মাথা বের করতে পারে না। কিছু সময় পর ধুম করে সে মাটিতে আছড়ে পড়ে। ব্যথায় একেবারে কুঁকড়ে যায়। কিন্তু কলসটা তার মাথায়ই আঁটকে থাকে। তা দেখে হারুণগাছি লাফ দিয়ে ঝোপ থেকে বের হয়। মানুষের শব্দ শুনে সে ভয়ে এদিক-ওদিক ছুটতে থাকে। কথায় আছে, চোরের দশ দিন আর গৃহস্থের একদিন। শিয়ালেরও হয়েছে একই দশা। হারুণগাছির চিৎকারে গ্রামের তরুণরা ছুটে আসে। তারা শিয়ালের দুর্দশা দেখে হাসাহাসি করতে থাকে। এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে করতে ক্লান্ত শিয়ালটি এক সময় খালের পানিতে ঝুপ করে পড়ে। আর যায় কোথায়! সবাই মিলে তাকে ধরে ফেলে। তারপর শিয়ালটিকে বস্তার ভেতর ঢুকিয়ে সে কি মার!