বিজ্ঞান কল্প গল্প

রোবটের নাম পূর্বিতা

প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

মোহাম্মদ আব্দুলস্না হেল বাকী
মিথিলার ছোট কাকা জাপান থাকেন। তার সঙ্গে মিথিলার সরাসরি দেখা হয়েছে মাত্র একবার। তখন মিথিলা খুব ছোট। তবে নেটে তাদের প্রায় প্রতিদিন দেখা হয়। কথা হয়। তার কাকা তার সঙ্গে জাপানের গল্প বলেন। জাপান খুব সুন্দর। ছবির মতো। মিথিলা তার সঙ্গে স্কুলের গল্প করে। সে প্রায়ই তার কাকার কাছে অনুযোগ করে, তার কোনো খেলার সাথী নেই। সে বাসায় একা একা সময় কাটায়। তার মা-বাবা দুজনই তাদের চাকরি নিয়ে ব্যস্ত। তাকে সময় দেয়ার মতো তাদের সময় নেই। এ কথা শুনে তার মন খারাপ হয়। সে বিদেশ-বিভূঁইয়ে থেকে একা। মিথিলা সবার সঙ্গে থেকেও একা। ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে যায়। আস্তে আস্তে পরিবারের বাঁধন হালকা হয়ে যাচ্ছে। এর শেষ কোথায়! তিনি মিথিলাকে বলেন, আমি তোর খেলার সাথী পাঠাবো। মিথিলা হাসে। মনে মনে ভাবে, কাকা কীভাবে খেলার সাথী পাঠাবে। একদিন সত্যি সত্যি তার খেলার সাথী হাজির। ফুটফুটে একটি মেয়ে। মাথায় ঝাঁকড়া চুল। হাত নেড়ে নেড়ে সুন্দর করে কথা বলে। মিষ্টি করে হাসে। আবার মাঝেমধ্যে ব্যথিতও হয়। মিথিলা যত দেখছে তত বিস্মিত হচ্ছে। যে কোনো প্রশ্ন করলে উত্তর দেয়। তবে সঙ্গে সঙ্গে দেয় না। একটু সময় নিয়ে দেয়। মনে হয় ভেবে উত্তর দিচ্ছে। তার কাকা বলেছেন, এটা নাকি আবেগপ্রবণ রোবট। মানুষের কথা বোঝে। ডাকে সাড়া দেয়। মিথিলা এর নাম দিয়েছে পূর্বিতা। মিথিলার আনন্দ আর ধরে না। মনে হয়, সে ভিনগ্রহের এক এলিয়েন পেয়ে গেছে। সে খুব উত্তেজিত। এখন তার স্কুলে মন বসে না। সে তার বন্ধুকে পেয়ে গেছে। একথা সে তার স্কুলের বন্ধুদের বলল না। তাদের সারপ্রাইজ দেবে। পূর্বিতা এখন সারাক্ষণ মিথিলার সঙ্গে সঙ্গে থাকে। পড়ার সময় পাশে বসে থাকে। তার সঙ্গে ঘুমায়। মিথিলার মাথায় তেল ম্যাসেজ করে দেয়। তাকে প্রজাপতি ধরে দেয়। কিন্তু মিথিলা কিছু খেতে বললে- মিষ্টি একটি হাসি দিয়ে-ডানে-বায়ে মাথা নাড়ে। একদিন মিথিলা তার বান্ধবীদের বাসায় নিমন্ত্রণ করল। তাদের সঙ্গে পূর্বিতাকে পরিচয় করিয়ে দিল। বলল, আমার কাজিন। কেউ ধরতে পারল না। পূর্বিতার ব্যবহার খুব ভালো। তার ব্যবহারে সবাই মুগ্ধ হলো। দিনে দিনে পূর্বিতা বাসার একজন হয়ে গেল। বাসার বেশ কিছু কাজ সে করে দেয়। কোনো কাজের কথা একবার বললে আর দ্বিতীয়বার বলতে হয় না। তার সহায়তায় বাসার সামনে খুব সুন্দর একটি ফুলের বাগান করেছে মিথিলা। এখানে খুব সুন্দর বিকাল কাটে তাদের। বাগানের পরিচর্যা করে। দুজনে লুকোচুরি খেলে। একদিন ঘটল বিপত্তি। পূর্বিতার যে কী হলো! তাকে ঘাস কাটার জন্য ধারালো কাঁচি দেয়া হলো। সে ঘাস কাটা বাদ দিয়ে ফুলঝারি কাটতে লাগল। একেবারে কচুকাটা যাকে বলে। মিথিলা অপলক পূর্বিতাকে দেখছে। দেখতে দেখতে তার কালো গোলাপের ঝাড়টা কেটে ফেলল। 'হায় আলস্নাহ্‌' বলে চিৎকার দিল মিথিলা। কালো গোলাপটা তার অনেক পছন্দের। তার বাবাও এটা পছন্দ করেন। এভাবে কেটে ফেলল গাছটা! ওর হয়েছে কী! কাছে গিয়ে গায়ে ধাক্কা দিল মিথিলা। অমনি তার দিকে তেড়ে আসল পূর্বিতা। সে আজ পাগলা হাতির মতো সবকিছু তছনছ করছে। মিথিলাকেও কি কেটে ফেলবে? ভয়ে দৌড় দিল মিথিলা। ঘরে ঢুকে খিল এঁটে দিল। পূর্বিতা কাঁচি নিয়ে ঘরের চারদিক ঘুরছে আর রাগে গোঙাচ্ছে। মিথিলা অনেক অনুনয়-বিনয় করে তাকে থামানোর চেষ্টা করল। সে কিছুতেই থামছে না। তার মাথায় আজ খুন চড়ে গেছে। তাকে থামাতে না পেরে মিথিলা কাঁদতে লাগল। মিথিলার বাবা গাড়ি নিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই পূর্বিতা আরও বেপরোয়া হয়ে গেল। গাড়ির শব্দে তার মেজাজ যেন কয়েকশ গুণ চড়ে গেল। দৌড়ে গিয়ে গাড়ির বডি গস্নাসে ধুম করে মারল এক বাড়ি। গস্নাস না ভাঙলেও মচকে গেল। তার বাবা যা বোঝার তা বুঝে ফেললেন। চলন্ত গাড়ি দিয়ে সজোরে ধাক্কা দিলেন। ছিটকে পড়ে গেল পূর্বিতা। এবার গাড়ি ওপরে উঠিয়ে দিলেন। পিষে ফেললেন পূর্বিতাকে। গাড়ির পেষণে পূর্বিতার দেহ খন্ড-বিখন্ড হয়ে গেল। কিছু যন্ত্রাংশ খুলে গেল। পূর্বিতা নিস্তব্ধ হয়ে গেল। মিথিলা বাইরে এসে দেখল- পূর্বিতার ছিন্নভিন্ন দেহ। তার সবচেয়ে কাছের বন্ধুর এমন পরিণতি মেনে নিতে পারল না। ডুকরে ডুকরে কাঁদতে লাগল।