তোমাদের লেখা

শরৎবেলায় ফুলের দোলায়

প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

তাহসিনা এনাম তৃষা
প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে ঋতু বৈচিত্র্যের বাংলাদেশে আসে শরৎকাল। ভাদ্র ও আশ্বিন এই দুই মিলিয়ে ষড়ঋতুর তৃতীয় ঋতু শরৎকাল। শরৎকালের পরিবেশটাই যেন ভীষণ অন্যরকম। না আছে গ্রীষ্মের মধ্যে তীব্র তাপদাহ, আর না বর্ষার মতো বৃষ্টির অবিশ্রান্ত রিমঝিম। শরতের পরিবেশ ভীষণ মনমুগ্ধকর। শরতের পরিষ্কার নীল আকাশে ভেসে চলে সাদা মেঘের ভেলা, এই রোদ্দুর তো এই ছায়া। দিনের বেলায় খানিকটা গরম থাকলেও, রাতের দিকে তাপমাত্রা পড়ে যায়। একটা ঠান্ডা অনুভূতি পাওয়া যায়। শরৎ মানেই সবুজ ধান ক্ষেতের বুকে সোনালি আভায় ছোঁয়া পাওয়া। শরৎ যেন নবান্নের আগমনী বার্তা দেয়। পাকা তালের মধুর গন্ধে ম-ম করে চারদিক। ঘরে ঘরে ধুম পড়ে তালের পিঠে, তালের বড়া, তালের ক্ষীর খাওয়ার। শরৎকালেরও কিন্তু নিজস্ব কিছু ফুল আছে। ফুলগুলো শরতের শোভা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। আজ আমরা জানব এমনই কিছু শারদ ফুলের গল্প। কাশফুল: শরৎকালের নাম শুনলেই সবার প্রথমে মনে আসে কাশফুলের কথা। নদীর ধারে কাশবনের যে অপরূপ সৌন্দর্য তা কেবল শরৎকালেই দেখা যায়। যেন মনে হয় আকাশের সাদা সাদা মেঘগুলো নেমে এসেছে মাটির বুকে। তুলোর মতো নরম কাশফুলের মধ্যে খেলে বেড়ায় দুষ্টু ঘাসফড়িঙের দল। কাশফুল মূলত ঘাসজাতীয় জলজ উদ্ভিদ। নদীর ধারের বালু মিশ্রিত মাটিতে কাশবন সৃষ্টি হয়। কাশফুলের ঘাস সাধারণত ৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। কাশফুলের বৈজ্ঞানিক নাম ঝধপপযধৎঁস ংঢ়ড়হঃধহবঁস. শউলি ফুল: শরতের ভোর মিষ্টি হয় মিষ্টিমধুর সুগন্ধময় শিউলি ফুলের মধ্যদিয়ে। মাটিতে বিছিয়ে থাকে ছোট্ট ছোট্ট তারার মতো কমলা বৃন্তযুক্ত সাদা ফুলগুলো। শিউলি ফুলের যে কি অপরূপ সৌন্দর্য ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়। নিক্টান্থেস প্রজাতির এই ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম ঘুপঃধহঃযবং ধৎনড়হ :ৎরংঃরং. ইংরেজি নাম ঘরমযঃ ভষড়বিৎরহম ঔধংসরহব। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো যেমন- ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমারে এই ফুলের আদি নিবাস। ধবধবে সাদা পাঁচ থেকে সাতটি পাপড়ি একটি কমলা রঙের টিউবের মতো বৃন্তের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। \হ ছাতিম ফুল: শরৎকালের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য ছাতিম ফুল। সৌরভ বিশিষ্ট সবুজ মেশালে সাদা রঙের থোকা থোকা ছাতিম ফুল ঝুলে থাকে গাছ থেকে। ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই ফুলের আদি নিবাস। ছাতিমগাছের কান্ডের মূলাবর্তে সাতটি করে পাতা থাকে বিধায় সংস্কৃতে এই গাছের নাম সপ্তপর্ণা। অ্যাপোসাইনেসি বর্গের এই গাছের বৈজ্ঞানিক নাম অষংঃড়হরধ ংপযড়ষধৎরং। ইংরেজি নাম উবারষ'ং :ৎবব। \হ জবা: জবা আমাদের খুবই পরিচিত একটি ফুল। সারা বছর ফুটলেও এটি মূলত শরৎকালের ফুল। মালভেসি গোত্রের এই ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম ঐরনরংপঁং ৎড়ংধ-ংরহবহংরং। ইংরেজি নাম ঈযরহধ ৎড়ংব। পাঁচ পাপড়িযুক্ত গন্ধবিহীন জবাফুল বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। মালয়েশিয়ার জাতীয় ফুল জবা। এটি মূলত চিরসবুজ গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। জবা ফুল দেখতে অসম্ভব সুন্দর। \হ পান্থপাদপ: পান্থপাদপ গাছ অনেকটা হাতপাখার মতো। গাছের পাতাগুলো পূর্ব থেকে পশ্চিমে ছড়িয়ে থাকে। রাভেনালাদের একমাত্র প্রজাতি এই গাছের বৈজ্ঞানিক নাম জধাবহধষধ সধফধমধংপধৎরবহংরং। ইংরেজি নাম ঞৎধাবষষবৎ'ং ঞৎবব. এই গাছের পাতাগুলো পূর্ব থেকে পশ্চিমে ছড়িয়ে থাকে বলে পথিক সহজেই দিক নির্ণয় করতে পারে বলেই এই নাম। এই গাছের ফুলগুলো ছোট ছোট। তিনটি অসম পাপড়ি যুক্ত হয়ে একটি গোলাপি রঙের ফুল গঠন করে। এই গাছের আদি নিবাস মাদাগাস্কারে। \হএছাড়া শরৎকালে প্রকৃতিতে আরও অনেক ধরনের ফুল দেখতে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে গগন শিরীষ, হিমঝুরি, বকফুল ইত্যাদি উলেস্নখযোগ্য।