তোমাদের লেখা

জাদুর আয়নার গল্প

প্রকাশ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

মিনহাজ উদ্দীন শরীফ
বহুদিন আগের কথা। ময়নামতি শহরের খানিকটা দূরে একটা রাজ্য ছিল। সেই রাজ্যের রাজা ছিল কিংসলে ডিভেস। তার ছিল একমাত্র মেয়ে দুর্গা। দুর্গা খুব মিষ্টি মেয়ে। দুর্গাকে রাজ্যের প্রজাগণ খুব স্নেহ করত। দুর্গা পুঁথি শিক্ষা অর্জনের জন্য প্রতিদিন রথে চড়ে নীরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পাঠশালায় যেত। এবং এই রাজ্যের কাঠুরিয়ার ছেলে অন্তিমও সেই পাঠশালায় যেত। পন্ডিত মশাই যখন পুঁথির পড়া। পড়িয়ে সবাইকে জিজ্ঞাসা করত। তখন অন্তিম ছাড়া আর কেউ-ই বলতে পারত না। দুর্গা ও বলতে পারত না। তাই প্রায় সময় দুর্গার মন খারাপ থাকত। কয়েকদিন যাওয়ার পর অন্তিমের সঙ্গে দুর্গার ভাব হয়েছিল। তারপর থেকে তারা মিলেমিশে রোজ স্কুলে আসা-যাওয়া করত। কিন্তু দুর্গা পড়ালেখার দিক দিয়ে অন্তিমের থেকে পিছিয়ে। তাই সারাক্ষণ নিরিবিলি হয়ে কি জানি ভাবত। অন্তিম জ্বরের জন্য একদিন পাঠশালায় আসতে পারেনি। সেদিন দুর্গা পাঠশালায় সবার চেয়ে বেশি পড়া বলেছিল। পন্ডিত মশাইও খুব প্রশংসা করেছিল দুর্গার। সেদিন দুর্গা নাচতে নাচতে বাড়িতে চলে যায়। টেবিলে পুঁথিটা রেখে খুশিতে বাগানে ছুটে গেল। বাগানে গিয়ে ফুলের সুবাস প্রাণ ভরে নিল। তারপর গেল তাদের দীঘির জলে! গিয়ে দেখে সাদা শাপলা ফুল ফুটে আছে। কাশফুলে মাথা তুলে হেলেদুলে নৃত্য করছে। এসব মনোরম দৃশ্য দেখে দুর্গা মুগ্ধ হয়েছিল। তারপর একটা বিশাল বৃক্ষের ধারে গিয়ে দুর্গা পাখিদের কলতান শুনছিল। হঠাৎ করে তার চোখে পড়ল একটা ভাঙাচোরা আয়না। দুর্গা এগিয়ে হাতে তুলে যখন মুখের সামনাসামনি করল। তখন দুর্গার প্রতিচ্ছবি দেখা গেয়েছিল। দুর্গা সুন্দরী হওয়ার শর্তে ও কোনো উচ্ছ্বাস দেখায়নি। আয়নাটা কেউ রেখে গেছে ভেবে দুর্গা যেখান থেকে তুলেছিল সেখানে রেখে দেয়। কিন্তু আয়নাটা দুর্গাকে বলে আমাকে ফেলে চলে যাবে কি দুর্গা? দুর্গা শুনতে পেয়ে, ভয়ে-ভয়ে বলল কে আপনি আড়াল থেকে কথা বলছেন সামনে আসুন! আয়নাটা বলল দুর্গা আমি তো তোমার সামনেই। তুমি আমাকে দেখতে পাচ্ছ না কি? দুর্গা বলল না! আয়না নিজে থেকে উড়ে দুর্গার হাতে গেল। অলৌকিকভাবে আয়নাটা দুর্গার হাতে যাওয়ায় দুর্গা আশ্চর্য হয়েছে। দুর্গা কিছু বলার আগে আয়না থেকে বলে দুর্গা আমি মাসুদ ডিভেস। আমি অলিপুর রাজ্যের গ্যাটার টাইটেলের একমাত্র রাজপুত্র মাসুদ ডিভেস। দুর্গা জিজ্ঞাসা করল তুমি আয়নায় কি করে ঢুকে গেলে? মাসুদ ডিভেস বলে, আমি আয়নাকে দুই চোখেও সহ্য করতে পারি না। কারণ আয়না মানুষের সঠিক প্রতিচ্ছবি দেখায়। আর এই নিয়ে মানুষ সাদা-কালোর বিভেদ ঘটিয়েছে পৃথিবীতে। স্রষ্টার সৃষ্টি মানুষ সবাই সুন্দর। কিন্তু এই আয়না মানুষের মধ্যে ভেদ সৃষ্টি করছে। তাই আমি আয়নাকে হাতের নাগালে পেলে ভেঙে দিই। তা নাহলে জলে ফেলে দিই। একদিন আমি এক জাদুঘরের জাদুর আয়না নিয়ে সমুদ্রে ফেলে দিয়েছিলাম। তাই জাদুঘর আমাকে জাদুর আয়নার মধ্যে ঢুকে দিয়েছিল। দুর্গা তাকে বলল, আয়না থেকে কীভাবে বের হতে পারবে সেটা জাদুঘর বলেছিল কি? সে বলল হঁ্যা বলেছিল আমার সমবয়সী কোনো রাজকন্যা যদি আমাকে এক রাত তার ঘরে রাখে তাহলে আমি আয়না থেকে মুক্তি পাবো। দুর্গা খুশি হয়ে মাসুদ ডিভেসকে নিজ কক্ষে নিয়ে গেল। এবং তার কথামতো আয়নাটা রেখে দিল তার বিছানার এক পাশে। সকালবেলা দুর্গা দেখে সত্যি সত্যি আয়না থেকে এক ফুট ফুটে রাজপুত্র বেরিয়ে এলো। দুর্গা মাসুদ ডিভেসকে তার বাবার কাছে নিয়ে যায়। মাসুদ ডিভেসের সম্পর্কে দুর্গা তার বাবার কাছে গিয়ে সব খুলে বলে। মাসুদ ডিভেস, কিংসলে ডিভেসের কাছে প্রস্তাব দেয় দুর্গাকে বিয়ে করার। দুর্গা ও বাবা রাজি হয়ে যায়। তারপর কিংসলের ডিভেসের রাজ্যে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পরের দিন মাসুদ ডিভেস নিজের রাজপ্রাসাদে দুর্গাকে নিয়ে চলে যায়। সেখান গিয়ে তারা সুখে-শান্তিতে জীবন কাটাতে লাগল। দশম শ্রেণি, জলসুখা কৃষ্ণ গোবিন্দ পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়, আজমিরিগঞ্জ, হবিগঞ্জ।