কাকের টাকা

প্রকাশ | ০৫ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

আ শ ম বাবর আলী
এক দেশের এক রাজা। বিশাল রাজ্য তার। কোনো কিছুরই কমতি নেই। টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ, বিত্ত-বৈভব অঢেল আছে তার। রাজ্যের প্রজারাও দারুণ খুশি তার রাজ্যশাসনে। সবার মনে তাই শান্তি। রাজার বাড়ির সামনে এক লম্বা তালগাছ। তালগাছের মাথায় এক কাকের বাসা। সেখানে বাস করে এক কাক পরিবার। মানে এক কাক আর তার বউ। দিনে এদিক-ওদিক উড়ে বেড়ায় খাবার সন্ধানে। মাঝেমধ্যে বাসায় ফেরে আর কা-কা করে ডাকে। ডেকে ডেকে তালগাছ মাথায় করে তোলে। একদিন রাজা বসে আছেন রাজদরবারে তার পাত্র-মিত্র সভাসদ নিয়ে। একটা কাক তালগাছের মাথায় বাসায় বসে অনবরত কা-কা করে ডেকে চলেছে। ডেকে বলছে- 'কা-কা-কা...টাকার গরমে মরি...টাকার গরবে মরি। কা-কা-কা...।' কাকটা বিরামহীন এমনভাবে ডেকে চলেছে। রাজা বিরক্ত হয়ে পড়েন। মেজাজটা খারাপ হয়ে যায় তার। উজিরকে ডেকে বলেন- 'কাকটা বিরক্ত করে দিল! এত কী টাকা হয়েছে কাকটার যে, টাকার গরমে মরে, টাকার গরমে মরে? উজির সাহেব, ওর বাসা থেকে টাকাগুলো নিয়ে আসার ব্যবস্থা করুন। দেখি ওর টাকার গরম কোথায় থাকে।' রাজার আদেশ পেয়ে উজিরের নির্দেশে একজন লোক গিয়ে তালগাছে উঠল। কাকের বাসার কাছে গেল। হাত দিয়ে দেখল, বাসায় একটা এক টাকার কয়েন। কোথা থেকে এনে জমিয়ে রেখেছে। লোকটা ওই এক টাকার কয়েনটা কাকের বাসা থেকে পেড়ে নিয়ে এসে উজিরকে দিল। উজির সেটা নিয়ে দিল রাজাকে। কাকটা দূর থেকে সব দেখল। এরপর সে ডাকতে শুরু করল- 'কা-কা-কা..আমার টাকায় রাজা ধনী...আমার টাকায় রাজা ধনী। কা-কা-কা...।' রাজার মেজাজ গেল খারাপ হয়ে। -'কী! এত বড় কথা? এক টাকার মহাজনের এত বড় আস্পর্ধা? ওর মাত্র একটা টাকা নিয়ে আমি রাজা ধনী?' ডাকলেন তিনি তার উজিরকে। তারপর তাকে বললেন- 'যান উজির সাহেব, টাকাটা কাকের বাসায় ফিরিয়ে দিয়ে আসার ব্যবস্থা করুন।' উজির সাহেব তাই করলেন। টাকাটা নিয়ে আবার তালগাছের মাথায় কাকের বাসায় রেখে আসার ব্যবস্থা করলেন আগের লোকটির মাধ্যমে।' এবার কাকটা ডেকে ডেকে বলতে লাগল- 'কা-কা-কা...আমার ভয় কে না করে? আমার ভয় কে না করে?...আমার ভয় রাজাও করে ...আমার ভয় রাজাও করে ...কা-কা-কা...।' রাজার মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। উজিরকে ডেকে বললেন, 'উজির সাহেব, এ তো ভারী বিপদ! মান-সম্মান যে আর থাকে না। সামান্য একটা কাকের মাত্র একটি টাকায় আমি ধনী? আর এমনকি ক্ষমতাধর সে কি, যার জন্য আমাকে সে টেক্কা দিতে চায়? উজির সাহেব একটু মুচকি হাসলেন। তারপর বিনীতভাবে বললেন, 'গোস্তাগি মাফ করবেন জাঁহাপনা। এতে আপনার মন খারাপ করার কিছু নেই। কেউ যদি অবৈধ পথে সামান্যমাত্র রোজগারও করে, তখন ওই সামান্য বোজগারটাকে তার কাছে অনেক বড় উপার্জন বলে মনে হয়। অহংকারে তার মাটিতে পা পড়ে না। নিজকে সে অন্য অনেকের চাইকে অধিকতর ধনী বলে মনে করে। আর ওর ওই টাকাটা তো তার বৈধ উপার্জনের নয়, নিশ্চয়ই সে ওটা কোথাও থেকে চুরি করে নিয়ে এসেছে। সুতরাং এতে আপনার মন খারাপের কিছু নেই জাঁহাপনা। ছোট মনের দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিদের স্বভাবই এই রকম।'