পুজোর গল্প

মা দুর্গার আগমনে

প্রকাশ | ০৫ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

সুজন সাজু
শিবঠাকুর ব্যস্ত নিজের কাজে সর্বদা। পুরো কৈলাশজুড়ে তার ভ্রমণবিলাস। কোথাও কোনো স্থির থাকে না এক বিন্দু। ঘুরে বেড়ায় শ্মশানে, জঙ্গলে। রাত নেই, দিন নেই অহর্নিশ ভবঘুরে। কোথাও কোনো অসুর প্রবৃত্তির উত্থান পরিলক্ষিত হলেই বিনাশ করে দেয় শিবঠাকুর। শিবঠাকুরের কাজই হলো অসুরশক্তি নিধন। মঙ্গল কাজে সব ভক্তের প্রতি সর্বদা সহানুভূতিশীল। সব দেবতাও শিবকে মান্য করে চলে। মানে, গুণেও শিবঠাকুর মহাগুণের অধিকারী। তাই শিবের আরেক নাম মহাদেব। কখনো কোনো ভক্তকুলকে বিপদে-আপদে নিরাশ করে না। জটাধারী শিবঠাকুরের অভ্যাসটাই হলো ভবঘুরে। শিবের এই ভবঘুরের অভ্যাসটা পত্নী দেবী দুর্গার মোটেই পছন্দ নয়। কারণ, শিবঠাকুর ঘরের চেয়ে পরের উপকারে নিয়োজিত হরহামেশা। দেবী দুর্গার কথা হলো, বাইরে, শ্মশানে, জঙ্গলে যেখানেই থাকো কিছু সময় তো নিজের ঘরে পত্নী, ছেলেমেয়েদের দিতে হবে। না, শিবঠাকুর এদিকটা একদম বেখেয়ালি। শ্মশানে, জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো এটাই যেন শিবঠাকুরের মূল কাজ। এ নিয়ে শিব-দুর্গার মধ্যে কতবার রাগ-অভিমান হয়েছে তা কোনো ইয়ত্তা নেই। রাগ-অভিমান হলেও শিব-দুর্গা একে অন্যের প্রতি ভালোবাসার টান একবিন্দুও কমতি হয়নি। কেউ কাউকে না দেখলে অস্থির হয়ে পড়ে সারাক্ষণ। শরতের এই দিনে দেবী দুর্গা শিবকে একান্তে ডেকে বলে, শিবঠাকুর তুমি কি জানো না? আমি বছরের এই দিনে শারদীয় তিথিতে মর্ত্যে বাপের বাড়ি বেড়াতে যাই। দেবী দুর্গার মুখে একথা শুনে শিবঠাকুর উলস্নাসে হেসে উঠল। পতির এমন হাসি দেখে দেবী দুর্গা অত্যাশ্চর্য হয়ে গেল। এক সময় হাসি থামিয়ে শিবঠাকুর বলল, ওরে আমার আদরিণী সখা এখনো তুমি তোমার পতিকে চিনতে পারলে না? তুমি জানো তোমার পতি ভবঘুরে। শ্মশানে, জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়, তাই না? শুনে রাখো প্রেয়সীর, স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল এমন কোনো স্থান বা কাজ নেই তোমার এই ভবঘুরে পতির অজানায় থাকবে বা থাকতে পারে। পতির এমন গুণের কথা দেবী দুর্গা জানে। তবুও কে জানে যদি ভুলে যায়। পতির আদেশ ছাড়া কোনো পত্নী কি বাপেরবাড়ি যেতে পারে? আর বাপেরবাড়ি যেতে সব মেয়েরাই একটু অস্থির থাকে। হয়তো আমার বেলায়ও এই অস্থিরতা কাজ করেছে। তাই স্বামী শিবঠাকুরকে ডেকে মনে করে দেয়ার বাসনা জেগেছে মনে। শিবঠাকুর বলল, তুমি যাবে তোমার সাথে তো আমিও যাই। এবার পত্নীর সাথে একটু তামাশা করল শিবঠাকুর। হঁ্যা প্রেয়সী, নাকি আমাকে না নেয়ার খেয়াল আছে এবার? না নিলে বলে দাও, আমি জোর করে কখনো যাবো না তোমার সাথে। শিবঠাকুরের মুখে এমন কথা শুনে এবার দেবী দুর্গার মুখে অট্টহাসি ফুটে উঠল। ঠাকুর মহাশয়, এমনকি কখনো হয়েছে? না না হয়নি, যদি এমন ভেবে থাকো বলা তো যায় না, প্রেয়সী আমার। শিব-দুর্গার কথোপকথনের মধ্যে এসে হাজির হলো, কার্তিক ও সরস্বতী। কার্তিক বলে ওঠে, মা মা চলো না কালই তো ষষ্ঠী। সরস্বতীও সুর মেলায়, মা ঠিকই তো কালই মহাষষ্ঠী। ছেলেমেয়েদের এমন আগ্রহ দেখে শিবঠাকুর বলে, যাবো যাবো কালই আমরা রওনা দেবো। এরই মধ্যে এসে গেল গণেশ ও লক্ষ্ণী। লক্ষ্ণী কিছু না বললেও গণেশ পেটে হাত বুলাতে বুলাতে বলে আমি কত আগে তৈরি হয়ে আছি মর্ত্যে মামারবাড়ি যাবো আর ঘুরে ঘুরে খেলে বেড়াব। কার্তিক বলে দাদাভাই তোমার সাথে আমিও ঘুরে বেড়াব। মা দুর্গা কয় আচ্ছা আচ্ছা সবাই ঘুরে বেড়াইও। শিব মহাশয় হাসতে হাসতে কয়, ওরে প্রেয়সী দুর্গা যাও যাও, তৈরি হও। কাল সকালেই রওনা দেবো আমরা। মর্ত্যে ভক্তকুলেরা সবাই দেবী দুর্গা আসবে এই উপলক্ষে মন্ডপে মন্ডপে আসন সাজিয়ে রেখেছে। রাতের পরেই মহাষষ্ঠী আরম্ভে কৈলাশ থেকে মর্ত্যে রওনা দিল মা দুর্গা সবাইকে নিয়ে। মা দুর্গার আগমনে মর্ত্যের মধ্যে ভক্তকুলে বয়ে যাচ্ছে আনন্দ খুশির হর্ষোৎফুলস্ন।