বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী

ছোট্ট মনিব

প্রকাশ | ১২ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

জসীম আল ফাহিম
স্কুল গেটের সামনে 'মিরু'নামক একটি কর্মী রোবট দীর্ঘক্ষণ ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়েছিল। এরই মধ্যে স্কুল ছুটি হয়ে গেল। ছাত্রছাত্রীরা হইচই করে গেট দিয়ে বেরোতে শুরু করল। মিরু তার এলইডি লাইটের চোখ মেলে বিশেষ কোনো একজনকে খোঁজাখুঁজি করতে লাগল। এদিক তাকাল। ওদিক তাকাল সে। কিন্তু যাকে সে খুঁজছে তার দেখা মিলল না। মিরু তার হাতঘড়িতে এবার সময় দেখল। বিকেল ৫টা ২০ মিনিট। ৫টা ১০ মিনিটের মধ্যেই গেট দিয়ে ওর বেরিয়ে আসার কথা। ভাবছে আর টেনশন করছে মিরু। সে সময় তারই মতো দেখতে অন্য একটি কর্মী রোবট মিরুর দিকে এগিয়ে এলো। রোবটটির নাম 'নিক'। নিক বলল, 'কী ব্যাপার মিরু? হতাশভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন? কোনো সমস্যা?' 'হঁ্যা। বিরাট সমস্যা।' 'কী সমস্যা?' 'আমার ছোট্ট মনিবকে খুঁজে পাচ্ছি না।' 'কেন? কী হয়েছে তার?' 'ঠিক বুঝতে পারছি না। প্রতিদিন ৫টা ১০ মিনিটের মধ্যে সে স্কুল গেটে এসে আমার জন্য অপেক্ষা করে। আমাকে খোঁজখবর করে। আর আজ সে এখনো আসছে না।' 'বলো কী তুমি! বিরাট সমস্যা দেখছি। একটা কাজ করো তো। স্কুলের ভেতর গিয়ে একবার খোঁজ করে এসো। মানবশিশু বলে কথা। মনের ভুলে হয়তো কোথাও মশগুল হয়ে আছে।' 'স্কুলের ভেতর তো আমার গমনের অনুমতি নেই।' 'অনুমতি না-থাকুক। এখন তোমার বিরাট সমস্যা। সবসময় অনুমতির জন্য অপেক্ষা করতে হয় না।' 'তুমি ঠিক বলেছ নিক। তোমাকে ধন্যবাদ। আমি এখনি স্কুলের ভেতর গিয়ে একবার খোঁজ করব।' বলে রোবট মিরু ঠকঠক পায়ে হেঁটে স্কুল গেটের ভেতর গিয়ে প্রবেশ করল। অমনি স্কুলের নিরাপত্তারক্ষী অন্য একটি রোবট এসে তার পথ আগলে দাঁড়াল। বলল, 'মিরু। তোমার তো পাস নেই। পাস ছাড়া তুমি ভেতরে ঢুকতে পারো না। জলদি তুমি পাস নিয়ে এসো।' রোবটটির কথা শুনে মিরু অনুনয় করে বলল, 'পিস্নজ জন। আমাকে তুমি যেতে দাও। আমার এখন বিরাট সমস্যা। বড় ধরনের সমস্যায় অনুমতি জরুরি নয়।' মিরুর কথা শুনে রোবট জন ওর পথ থেকে সরে দাঁড়াল। জিজ্ঞেস করল, 'সমস্যাটা কী জানতে পারি মিরু? আমি তোমাকে সাহায্য করতে চাই।' 'আমার ছোট্ট মনিব মনে হয় স্কুলের ভেতর আটকা পড়েছে। ওকে একটু খোঁজ করে দাও না ভাই।' 'ঠিক আছে দাঁড়াও। আমি এখনি খুঁজে দেখছি।' বলে রোবট জন স্কুলের ভেতর চলে গেল। গিয়ে তন্ন তন্ন করে ছোট্ট মনিবকে খোঁজ করল। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সে তাকে পেল না। পরে এসে বলল, 'সরি মিরু। ও মনে হয় আজ স্কুলেই আসেনি।' রোবট জনের এরূপ কথা শুনে রোবট মিরু কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়ল। বলল, 'না জন। এটা মোটেও ঠিক নয়। আজ সকালবেলা আমি ওকে সঙ্গে করে স্কুলে নিয়ে এসেছি। ও নিশ্চয়ই স্কুলের ভেতর কোথাও ঘাপটি মেরে আছে। ভারি বজ্জাত ছেলে! আমাকে বড় জ্বালাতন করে। কাজেই আমাকে অবশ্যই স্কুলের ভেতর গিয়ে একবার খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।' 'চলো তাহলে দুজনই যাই।' বলল রোবট জন। পরে দুজনই স্কুলের ভেতর ঢুকে এলইডি লাইটের চোখ মেলে ছোট্ট মনিবকে খুঁজতে লাগল। খুঁজে খুঁজে দুজনই যখন প্রায় হয়রান-তখন স্কুলের ঝোপড়া বকুল ফুলগাছ থেকে সহসা কারও হাসির আওয়াজ ভেসে এলো-হা হা হা। হি হি হি। আচমকা মানবশিশুর এমন মিষ্টি হাসি শুনে রোবট দুজন ঝোপড়া বকুল ফুলগাছের তলে এসে থমকে দাঁড়াল। দুজনই অবাক হয়ে হাসির উৎসটা খুঁজতে লাগল। রোবট জন রোবট মিরুকে জিজ্ঞেস করল, 'আচ্ছা হাসিটা কার?' রোবট মিরু হাসিটা চিনতে পারল। বলল, 'আমার ছোট্ট মনিবের।' 'ছোট্ট মনিব! কোথায় সে?' 'আশপাশেই হয়তো কোথাও লুকিয়ে আছে।' 'কোথায় লুকিয়ে আছে?' 'দাঁড়াও এখনি তুমি তাকে দেখতে পাবে।' বলে সে তার পার্স থেকে একটা ললিপপ বের করল। আর মুখে বলল, 'এই যে আমার ছোট্ট মনিব। কোথায় তুমি? জলদি বেরিয়ে এসো। এই যে তোমার ললিপপ।' 'ললিপপ' নামটি শোনামাত্র ম্যাজিকের মতোই কাজ হলো। বকুল গাছের শাখা থেকে আরেকবার বাঁধভাঙা হাসির আওয়াজ ভেসে এলো। হা হা হা। হি হি হি। তার একটু পরই ছয়-সাত বছরের একজন দুরন্ত বালক বকুলগাছ থেকে নেমে রোবট দুজনের সামনে এসে দাঁড়াল। বালকটির নাম রবিন। ফুটফুটে রবিনকে খুঁজে পেয়ে রোবট দুজনের আনন্দ যেন আর ধরে না। ওর তুলতুলে গালে হাতের মৃদু ছোঁয়া দিয়ে রোবট জন বলল, 'সুইট বেবি!' রবিন অবাক চোখে রোবট জনের দিকে একবার তাকাল। তাকিয়ে কিছু একটা ভাবল। মিরু কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে ওর হাত থেকে ললিপপটি কেড়ে নিল। পরে ওর হাত ধরেই সে চুপচাপ হাঁটতে শুরু করল।