তোমাদের লেখা থেকে

সেই কুকুরটা

প্রকাশ | ১২ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

মোহাম্মদ আল আমিন ইসলাম
এক জঙ্গল থেকে খানিক দূরে বেশ কয়েকটি বাড়ি ছিল। সে বাড়িগুলোর মধ্যে এক বাড়িতে বাস করত এক কুঁজোবুড়ি। বুড়ির আপন বলতে কেউ ছিল না। সম্বল বলে ছিল গরু-ছাগল আর হাঁস-মুরগি। একদিন একলোক বুড়ির বাড়ির সামনে এক কুকুর ছানা রেখে যায়। নাম তার নোঙ্গর। সেদিন থেকে রোজ বুড়ি নোঙ্গরকে তাড়িয়ে দিতে থাকে। একদিন মেরে ক্ষতবিক্ষত করে নোঙ্গরের কায়া! তবু নোঙ্গর একদম বুড়ির বাড়ি ছাড়ে না। বুড়ির বাড়ির যেখানে সংগ্রহ করা জ্বালানিতে ভরপুর ছিল সেখানে সুপ্ত করে থাকত সে। দিবালোকে সে বাইরের গাঁয়ে খেয়ে; রাত্রে ঘুমাত সেখানে। তা এক বিন্দুও টের পেত না কুঁজোবুড়ি। দিনে দিনে নোঙ্গর বড় হয়ে যায়। হয়ে ওঠে এক মস্ত কুকুর। কিন্তু তবুও তার গাঁয়ে থেকে যায় সেই আঘাতের চিহ্নটা! বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাস। বুড়ি একদিন ছাগলকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যায় বনের ধারে। একদিকে বুড়ির বেঁধে থাকা ছাগল আপন মনে ঘাস খেতে থাকে। অন্যদিকে বুড়ি তার ষাঁড়ের জন্য ঘাস সঞ্চয় করতে থাকে। হঠাৎ জঙ্গল থেকে বাঘ বের হয়ে এসে বুড়ির ছাগলকে আক্রমণ করে। তা দেখে বুড়ি নিরুপায়ে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে। আর হঁ্যা বুড়ি জানতই না বাঘ থাকত সে জঙ্গলে। বুড়ি নিজে মরার ভয়ে কিছু বলতে পারে না। এমনকি কিছুই করতেও পারে না। সেসময় একদল কুকুরের তাড়া খেয়ে পাশ দিয়ে যাচ্ছিল নোঙ্গর। নোঙ্গর অমন দৃশ্য দেখতে পেয়ে বাঘ ও ছাগলের কাছে যায়। বাঘটা নোঙ্গর ও নোঙ্গরের পেছনে একদল কুকুরকে দেখতে পেয়ে; সে ভাবে কুকুরগুলো তাকে আক্রমণ করবে। তাই সে ভয়ে পালিয়ে যায়। প্রাণনাশ থেকে মুক্তি পায় বুড়ির ছাগল। বুড়ির উপকার সেরে বুড়ির খুব কাছ দিয়ে যায় নোঙ্গর। তা বুড়ি ভালো করে দেখে। বুড়ি দেখে নিজ হাতে দেয়া তার পুরনো ক্ষতবিক্ষত চিহ্নটাও! বুড়িকে দেখে নোঙ্গরের পেছনে আসা কুকুরের দল অন্যপথে পালিয়ে যায়। বুড়ি নিজের ভ্রম বুঝতে পেরে বারবার নিজেকে দোষারোপ করতে থাকে। কয়েকদিন পর, একরাত্রে বুড়ির গোয়ালঘরে ষাঁড় চুরি করতে আসে এক চোর। সেদিন সে গোয়ালঘরে ছিল নোঙ্গর। চোরের আগমন টের পেয়ে চোরকে তাড়া করে নোঙ্গর। চোরকে ধরে পায়ে বসিয়ে দেয় কয়েক কামড়ও। গভীর রাত। সেসময় নোঙ্গরের ঘেউ ঘেউ শব্দে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয় কুঁজোবুড়ি। সে ঘুম থেকে জেগেই সোজা যায় গোয়ালঘরে। কুঁজোবুড়ি সেখানে গিয়ে দেখে সব ঠিক আছে। কেবল গোয়ালঘরের দোর খোলা। বুড়ি গোয়ালঘরে থাকাকালে ঘেউ ঘেউ করে ফিরে আসে সেই কুকুরটা (নোঙ্গর)। তা দেখে বুড়ি সুপ্ত করে থাকে; যাতে নোঙ্গর তাকে দেখতে না পায়। পরে নোঙ্গর গোয়ালঘরে প্রবেশ করলে, বুড়ি দেখে নেয় তার সুপ্ত বাসস্থান। পরেরদিন, খুব সকালে বুড়ি বাসি ভাত নিয়ে যায় নোঙ্গরের সামনে। তা পেয়ে সে একটুও ডর পায় না। বরং খুবই খুশি হয়। বুড়ি : এই নে; খা। আজ থেকে তুই আমার বাড়ির বাসিন্দা। (খাবারের পাত্র সামনে এগিয়ে দিয়ে) সেই কুকুরটা (নোঙ্গর) আনন্দে সে খাবারগুলো খেয়ে নেয়। তা দেখে বুড়ির মনে এক সুখের দোলা দোল খায়। আনন্দে বুড়ি ছড়া কাটে : দেশের তরে দশের তরে কুকুর ও ভাই উপকারী, তাদের মোরা না তাড়িয়ে বরং করব শিকারি। নবম শ্রেণি, সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা।