তোমাদের লেখা থেকে

একটি খেলা এবং আমরা আটজন

প্রকাশ | ১৯ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

মুশতারী আহমদ
সময় তখন সকাল দশটা। বৃষ্টির দিন। ঘণ্টা পড়ার জন্য সবাই অপেক্ষা করছি। ঘণ্টা পড়ার পর আমরা সবাই নিচে নামছিলাম। নিচে নামা মুহূর্তেই বন্ধ হয়ে গেল। ধুলো উড়তে শুরু করল ঘূর্ণিঝড়ের মতো। আমরা সবাই ভয় পেয়ে গেলাম। তারপর একনাগাড়ে সেই যে বৃষ্টি শুরু হলো! এবার আমরা কী করব? খেলার জন্য আর মাঠে যাওয়া যাবে না। আমাদের সবার মনটা খারাপ হয়ে গেল। সবাই মিলে ঠিক করলাম উপরের সিঁড়িতেই দৌড়াদৌড়ি খেলব। যেই খেলার কথা বললাম, ঠিক তখনই সাহেদা ম্যাডাম সামনে চলে এলেন। ম্যাডামকে দেখে আমরা নির্বাক। ম্যাডাম খুব রাগী মানুষ। স্কুলের সবাই তাকে প্রচন্ড ভয় পায়। ম্যাডাম বললেন, এই বাচ্চারা, স্কুলে বড় ম্যাডাম এসেছেন। উপরে যেন বেশি শব্দ না হয়। কেমন? আমার আবার বেশি কথা বলার শখ। আমি বললাম, এই বৃষ্টির দিনে বড় ম্যাডাম স্কুলে আসতে গেলেন কেন? আমার কথাটা বলার পর পরই দেখলাম, আমার সব বন্ধুরা একটা করুণ দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যে ম্যাডামের সামনে কেউ কোনো কথা বলার সাহস পায় না, আমি সেই ম্যাডামকে পাল্টা প্রশ্ন করে বসেছি! ম্যাডাম মুচকি হেসে বললেন, স্কুলে একটা মিটিং আছে বাবা। এজন্য। ম্যাডাম চলে গেলেন। আমাদের মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল। খেলা যাবে না। এমন সময় আদিবার অগোছালো মাথা থেকে একটা বুদ্ধি বেরুলো। আবিদা বলল, আমরা ট্রুথ অ্যান্ড ডেয়ার খেলি? আবিদাকে অগোছালো মাথার মেয়ে বলার কারণ এবার বলছি। ও সবসময় চুলটাকে অগোছালো করে রাখে। যাই হোক আবিদার কথামতো আমরা ট্রুথ অ্যান্ড ডেয়ার খেলতে বসলাম। আমরা আট জন ছিলাম। আমি, রূপকথা, নাহলা, আদিবা, সামিয়া, তনুশ্রী, আরিফা ও স্নেহা। খেলা শুরু হলো। আমি ভয়ে ভয়ে আছি স্নেহার হাতে আমার ভাগ্য পড়লে আমি শেষ। আমি বোতল ঘুরালাম। স্নেহার ওয়ার্নিং, টিচিং করা যাবে না। ঘুরাতেই বোতলের মাথা গেল আদিবার দিকে আর পেছন গেল নাহলার দিকে। নাহলা আর আদিবা একই রকমের। নাহলাকে আদিবা জিজ্ঞেস করল, তুমি এত ন্যাকামো করো ক্যান? সবাই হাহা করে হেসে উঠলাম। নাহলা একটু রেগে উত্তর দিল, আমার ভালো লাগে তাই! আর এজন্যই ইশতিয়াক স্যার আমাকে খুকি ডাকেন। আমি ন্যাকামো করে বললাম, 'আহারে আমাদের খুকি'। ওকে ব্যস। খেলা শুরু করো। তনুশ্রী বলল। এবার খেলার পালা পড়ল তনু আর সামিয়ার। তনু সামিয়াকে প্রশ্ন করল, কখন কাপড় ভালোভাবে শুকায়? শীতে, গ্রীষ্মে না শরতে? সামিয়া বললো, গ্রীষ্মে। তনু বলল, না। উত্তরটা ভুল। এবার তোকে নাচতে হবে। সামিয়ার মুখ শুকিয়ে একদম কাচুমাচু। সামিয়া এমনিতেই একটু স্বাস্থ্যবান। তার উপরে ও নাচ জানে না। সামিয়া বলল, আমি আবৃত্তি করি? না না। তা হবে না। আমরা জানি তুই ভালো আবৃত্তি পারিস। তোকে নাচতেই হবে। তনু বলল। সামিয়া অনেক সুন্দর আবৃত্তি করে। সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় সবসময় আবৃত্তিতে ফার্স্ট প্রাইজ সামিয়ার। অনেক কষ্টে সামিয়া একটু নাচের ভঙ্গিমায় দু'এক মিনিট হাত-পা নাড়ালো। সবাই হেসে খিল খিল অবস্থা। বেচারিকে দেখে আমার কষ্ট হলো। আমিও উত্তরটা জানতাম না। জানলে অবশ্য সামিয়াকে সাহায্য করতাম। এভাবে খেলা এগুলো লাগল। পালাক্রমে আমার উপরেও এলো। আমাকে প্রশ্ন করবে রূপকথা। আহ! শান্তি। রূপকথা যা জিজ্ঞেস করবে, সহজই হবে। আর রূপকথা আমার ভালো বন্ধু। বন্ধু বিশ্চয়ই আরেক বন্ধুকে বিপদে ফেলবে না। রূপকথার প্রশ্ন ছিল, মুশতারী, সোনালী কাবিনের কবি কাকে বলে? পলস্নীকবি কে? টুনটুনি ও ছোটাচ্চু কার লেখা? আমি শেষের দুইটার উত্তর জানতাম। পলস্নীকবি হলেন জসীমউদ্‌দীন আর টুনটুনি ও ছোটাচ্চু জাফর ইকবালের লেখা। এবার রূপকথা বলল, সোনালী কাবিনের কবি হলেন আল মাহমুদ। নতুন একটা বিষয় জানলাম। আমি একটা প্রশ্নের আনসার দিতে পারিনি। আদিবা আমায় বিপদে ফেলার জন্য বলল, শাস্তিস্বরূপ মুশতারী জসীমউদ্‌দীনের একটা কবিতা আবৃত্তি করবে। ভাগ্য সেদিন আমার হাতেই ছিল বলতে হয়। আমি জসীমউদ্‌দীনের গ্রাম কবিতাটা আবৃত্তি করলাম। আকাশে তখনও একনাগাড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। ক্লাস ফাঁকা। স্যার-মিস কেউ নেই। আমরা আট জনের একটা দল খেলছি বসে বসে। এই বৃষ্টিদিনের গল্পগাথা, সত্যিই। কোনো কল্প নয়।