মিকাত ও তার ময়না পাখি

প্রকাশ | ০২ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

রেজাউল রেজা
মিকাত এবার ক্লাস সিক্সে পড়ছে। সে পাখি খুব ভালোবাসে। পাখিদের কিচিরমিচির তার ভীষণ ভালো লাগে। একদিন গল্পের বই পড়ে সে জানতে পারল, ময়না পাখি কথা বলতে পারে। কোন পাখি যে কথা বলতে পারে সেটা সে জানত না। তাই মিকাতের খুব ইচ্ছে হলো সে তার বাবার কাছে একটা ময়না পাখি চাইবে। সেই পাখিটার সঙ্গে সে কথা বলবে, গল্প করবে, একসঙ্গে দুজনে গান গাইবে। যেই ভাবা সেই কাজ, ছোট্ট মিকাত তার বাবার কাছে গেল এবং একটা ময়না পাখি কিনতে চাইল। বাবার প্রথম সন্তান বলে কথা। প্রথম সন্তান কতটা আদরের হয় সেটা কারও অজানা নয়। ছেলে একটা আবদার করেছে আর সেটা অপূর্ণ থাকবে তা কি করে হয়! সেদিনই মিকাতের বাবা অফিস থেকে ফেরার পথে 'ভাঙা মসজিদ' মার্কেট থেকে একটা সুন্দর, সুস্থ-সবল দেখে ময়না পাখি কিনে আনলেন। মিকাত যেমন প্রকৃতিপ্রেমী ঠিক তেমনই মেধাবী। পড়ালেখায় কখনো ফাঁকিবাজি করে না সে। তখন মিকাত ক্লাসের পড়া পড়ছিল ঠিক সেই সময় কলিং বেল বাজল। ছোট্ট মিকাত এক দৌড়ে দরজা খুলতে গেল, তার বোঝার বাকি নেই যে তার বাবা এসেছে আর নিশ্চয় পাখি নিয়ে এসেছে। দরজা খুলেই বাবার হাত থেকে পাখির খাঁচাটা নিয়ে নিল মিকাত। নিয়েই ময়না পাখিটাকে সালাম দিল কিন্তু পাখিটা কিছুই বুঝতে পারল না। সে ইতস্তত বোধ করতে লাগল। বুদ্ধিমান মিকাত বুঝতে পারল যে, এই পাখিটা সালাম সম্পর্কে জানে না। একে ধীরে ধীরে সব শেখাতে হবে। পাখি নিয়ে নিজ কক্ষে এলো সে। আগে থেকেই খাবার জোগাড় করে রেখেছিল। খেতে দিল পাখিটাকে। তারপর দুজনে গল্প করতে লাগল- মিকাত পাখিটাকে জিজ্ঞেস করল- 'তোমার নাম কি?' পাখিটা নিঃসঙ্কচে জবাব দিল- 'আমার নাম ময়না'। -বাহ্‌! সুন্দর নাম তো তোমার। আচ্ছা ময়না, তুমি কি আমার বন্ধু হবে? মিকাত জিজ্ঞেস করল। পাখিটি জবাব দিল- 'হঁ্যা.....হবো' মিকাত পাখিটিকে লক্ষ্য করে আবার বলল- ময়না, তোমাকে যে তখন সালাম দিলাম তুমি তো সালামের জবাব দিলে না। তুমি কি জানো না, কারও সঙ্গে দেখা হলে প্রথমে সালাম দিতে হয়? -না, আমি জানি না তো। ময়না জবাব দিল। -এখন তো জানলে, এখন থেকে তোমার সঙ্গে কেউ দেখা করতে এলে তাকে সালাম দেবে, কেমন। মিকাত বলল। -ঠিক আছে ভাইয়া। পাখিটির মুখে ভাইয়া ডাক শুনে ছোট্ট মিকাত আবেগে আপস্নুত হয়ে পড়ল। ভাবতে লাগল এই পাখিটাকে সে অনেক কিছু শেখাবে। মিকাতের মা-বাবা যেমন তাকে আদব-কায়দা, শিষ্টাচার শিখিয়েছেন ঠিক তেমনই। নিজের সন্তানের মতো সব কিছু শেখাবে। মিকাত ধীরে ধীরে সব ধরনের শিষ্টাচার শেখাতে লাগল তার প্রিয় ময়নাকে। স্কুলে স্যাররা কোনো উপদেশমূলক কথা বললে মিকাত সেটা বাড়ি এসে ময়নাকেও বলত। ময়না খুশি মনে শিখতে লাগল এবং বাস্তবজীবনে প্রয়োগ করতে লাগল। এখন কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে এলে প্রথমে সালাম দেয় তারপর বসতে বলে। মিকাতের স্কুলের বন্ধুরা জানতে পারল যে, তার একটা কথা বলা পাখি আছে। সবাই অনুরোধ করল, বিকেলে মাঠে খেলতে যাওয়ার সময় যেন পাখিটাকে সঙ্গে নিয়ে যায়। বন্ধুদের আবদার মেটাতে মিকাত তার প্রিয় ময়নাকে সঙ্গে নিয়ে খেলতে যাচ্ছিল। দুজনে নানান গল্প করছিল। হঠাৎ ময়না বলে উঠল 'ঝগড়া করা ভালো নয়, ঝগড়া করা ভালো নয়' চমকে উঠল মিকাত! কি ব্যাপার ময়না, তুমি কাকে বললে 'ঝগড়া করা ভালো নয়'? ময়নাকে লক্ষ্য করে মিকাত বলল। -ওই যে দেখো ওরা ঝগড়া করছে। বলল-ময়না। মিকাত অবাক! আসলেই তো দুটি ছেলে ঝগড়া করছে। মিকাত দৌড়ে ছেলেগুলোর কাছে গেল। ওদের ঝগড়া করতে নিষেধ করল। তার সঙ্গে সঙ্গে ময়নাও বলল। ছেলে দুটো আশ্চর্য হয়ে পাখিটার দিকে তাকাতে লাগল। দুজনে একসঙ্গে বলে উঠল- 'কথা বলা পাখি!!!' তারপর মিকাত মাঠের দিকে এগোলো, ছেলে দুটিও তাদের সঙ্গে যেতে লাগল। -ময়না আবার বলল, 'ছোট ভাইয়ারা, তোমরা ঝগড়া করবে না, মিলেমিশে থাকবে। একে অন্যকে পড়তে সাহায্য করবে। খারাপ কথা বলবে না। এসব ভালো না। দেখো, আমার মিকাত ভাইয়া কত ভালো'। ছেলে দুটি বিস্ময়ে হা হয়ে গেল। আমাদের জ্ঞান দিচ্ছে, তাও আবার একটা পাখি!! দুজনে ভাবতে লাগল, পাখিটা তো ঠিকই বলেছে। আসলেই তো এসব কাজ ভালো নয়। দুজনে কোলাকুলি করল। হাতে হাত রেখে শপথ করল, তারা আর ঝগড়া করবে না। কোনো খারাপ কাজ করবে না। ছেলে দুটির পরিবর্তন দেখে মিকাত খুব খুশি হলো। তার প্রিয় ময়না পাখির জন্য গর্বে তার বুক ফুলে উঠল। কিন্তু সে বুঝতে পারল না যে, ময়না এতকিছু শিখল কীভাবে। ময়নাকে তো সে এতকিছু শেখায়নি। বাড়িতে গিয়ে ময়নাকে জিজ্ঞেস করল- ময়না, তুমি যে তখন ছেলে দুটিকে বললে- 'ঝগড়া করা ভালো না', 'খারাপ কথা বলা ঠিক নয়'। আরও অনেক কিছু বলল। এ সব তুমি শিখলে কোথায়? ময়না জবাবে বলল- আরে ভাইয়া, তুমি তো দেখছি বোকাও আছো! তুমি জানো না 'সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ'? আমি সবকিছু তোমার কাছ থেকে শিখেছি। তুমি যখন বই পড়ো তখন আমি কান পেতে শুনি। তুমি একদিন এসব পড়ছিলে। সেদিন শিখেছি। তা ছাড়া তুমি যখন টিভিতে ভালো ভালো কার্টুন দেখো তখন আমিও দেখি। কার্টুন দেখি ও শিখি এবং নিজে করার চেষ্টা করি। সেদিন তুমি একটা বইয়ে পড়ছিলে- 'তোমরা নিজে ভালো কাজ করো এবং অন্যদেরও করতে বলো'। আর একবার পড়ছিলে- 'তোমরা নিজে খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকো এবং অন্যদেরও নিষেধ কর'। সেদিন শিখেছি। আজ সেজন্যই ছেলে দুটিকে ঝগড়া করতে নিষেধ করেছিলাম। প্রিয় ময়নার কাজ-কারবার দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল মিকাত। খাঁচা থেকে বের করে বুকে জড়িয়ে ধরল। আদর করে দুটো চুমু দিল এবং বলল- তুমি খুব ভালো কাজ করেছো ময়না, তোমার মতো সবার উচিত ভালো কিছুকে অনুসরণ করা এবং খারাপ কিছুকে পরিহার করা। .