অপুর বন্ধু টুনটুনি

প্রকাশ | ০২ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

মোস্তাফিজুল হক
সাপ্তাহিক ছুটির দিন। অপু এবার দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ভোরে ঘুম থেকে উঠেই হাত-মুখ ধুয়ে মায়ের হাতে মাখা মুড়ি-চানাচুর খেয়ে গণিতের বাড়ির কাজ নিয়ে বসেছে। সব অংকই শেষ করেছে। এবার অন্য পড়ায় মন দেবে। কিন্তু পাখিদের চেঁচামেচিতে ও আর পড়ায় মন বসাতে পারছে না টেুনটুনি পাখিদের আজ কী যে হলো কিছুই বোঝা যাচ্ছে না! ওরা তো কখনই এতটা বাজে ভাবে চেঁচামেচি করে না! তবে আজ এমন করছে কেন? অপু জানালা খুলে আমগাছের দিকে তাকায়। ডালে চোখ পড়তেই দেখল দুটো টুনটুনি পাখি কেমন যেন অস্থির হয়ে চেঁচামেচি করছে। ফুড়ুৎ করে একবার আমগাছের ডাল থেকে নেমে ডুমুর চারার দিকে যাচ্ছে আবার সঙ্গে সঙ্গেই ফিরে আসছে।অপু আর ঘরের ভেতর বসে থাকতে পারল না। এবার সে বাইরে বেরিয়ে এলো। সাবধানে ডুমুর চারার দিকে এগিয়ে যেতে থাকল। ধড়ফড় করে একটা নেউল দৌড়ে চলে গেল। এবার অপুর মনে সন্দেহ দানা বাঁধল। নেউল ডুমুর চারার নিচে কেন এসেছিল? এদিকে টোনাটুনিদের গলার স্বর একেবারেই থেমে গেছে। অপু খেয়াল করল, টুনিটা ঘনপাতার আড়ালে চুপটি মেরে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। অপু ডুমুর গাছটা টেনেই দেখতে পেল কী চমৎকার একটা বাসা! তিনটে ডুমুরের পাতা তুলো দিয়ে সেলাই করে আটকে দিয়েছে। আরেকটা পাতার অর্ধেকটা একই কায়দায় সেলাই করে ছাদ তৈরি করেছে। ভেতরে জুতো সেলাই করার মতো সুতোর চেয়ে কিছুটা মোটা আঁশ দিয়ে বোনা গোলগাল ছোট্ট বাসা। বাসাটাকে নরম করার জন্য তাতেও কিছু তুলো বিছানো হয়েছে। বাসায় তুলি-আঁকা নীলচে-কালো ছোপছাপ ফোঁটা দেয়া দুটো ডিম। নেউল বেটা তো ভারি পাজি! এই ডিমগুলোই খেতে এসেছিল। এবার অপু বাড়ির ভেতরে ছুটে গেল। তার ভেতরে কেমন যেন এক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এসব দেখে মা বললেন- এই অপু, কী হয়েছে রে? না মা, কিছু না। কিছু না বললেই হলো? তুই অমন অস্থির হয়ে ছোটাছুটি করছিস কেন? মা, জানালার পাশে ডুমুর গাছটায় টুনটুনি পাখি বাসা তৈরি করেছে। তো কী হয়েছে? এখন শরৎকাল। এসময়ে এরা ডিম দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। তুই বাসা ভেঙে দিচ্ছিস নাকি? মা, কী যে বলো! তোমার ছেলে কি এরকম নাকি? এ নিয়ে এত ঘাঁটাঘাঁটির কী আছে? মা, একটা নেউল ডিমগুলোকে খেয়ে ফেলতে এসেছিল। আমি ওটাকে তাড়িয়ে দিয়েছি। তাহলে আবার দৌড়াদৌড়ি করছিস কেন? মা, গাছটার চারপাশে খেজুরের ডগা কেটে বেড়া দেবো। যাতে নেউলটা আর সেখানে ঢুকে গাছটাকে হেলিয়ে ডিম না খেতে পারে। কিন্তু, এতে তো টুনটুনিই ভয় পেয়ে পালাবে। পালাবে কেন? আমি তো আর ওর ক্ষতি করছি না, বরং উপকার করছি। ঠিক আছে, দেখা যাবে। তবে ঘের দিয়ে আর ওদিকে যাসনে। তাহলে হয়তো বাসা ফেলে যাবে না। ঠিক আছে মা, তাই করব। পনেরো দিন পর অপু খেয়াল করল মা পাখিটা ফড়িং ছানা ধরে নিয়ে নীড়ে যাচ্ছে। বাসা থেকে চিঁচিঁ শব্দ ভেসে আসছে। ওর আর বুঝতে বাকি রইল না যে, টুনটুনির ডিম ফুটে বাচ্চা হয়েছে। অপু চুপিসারে জানালার কাছে চায়ের পেয়ালায় কিছু শর্ষে দানা রাখে। মা পাখিটা খুঁটে খুঁটে ওগুলো মুখে পুরে নেয়। অপুর এতে ভীষণ আনন্দ হয়। সে নিয়মিতই এটা করে যাচ্ছে। এক সপ্তাহ পর দেখল, ছানাগুলো উড়ে গিয়ে আমগাছের ডালে বসেছে। অপু ভাবল, এবার তাহলে আর খাবার দিতে হবে না। কিন্তু দুদিন পর থেকেই টুনটুনি ও তার ছানাগুলো খাবারের খোঁজে প্রায়ই ঘরে ঢুকে যায়। ডাইনিং টেবিলে পড়ে থাকা ভাত খুঁটে খুঁটে খায়। অপু অবাক হয়ে ভাবতে থাকতে আজীবন পোষ না মানা এই ভীরু পাখিও মানুষের থাকার ঘরে ঢুকে যাচ্ছে! তবে কি পাখিরাও মানুষের মমত্ববোধের মর্যাদা দিতে জানে? মা বলেন- কী রে অপু, তোর পাখি তো জ্বালাতন শুরু করেছে। মা, এটাকে জ্বালাতন বলছো কেন? বলো যে, ওরা আমাদের আপন করে নিয়েছে। একদিন অপু টেবিলে বসে পড়ছিল; এমন সময় ছোট্ট তেলচে-হলদে টুনটুনি এসে অপুর কাঁধে ঠোঁট ঘষে দিয়ে ফুড়ুৎ করে উড়ে গেল। ওর আর আনন্দ যেন শেষ হয় না। তবে কি পোষ না মানা টুনটুনিও অপুর বন্ধু হয়ে গেল!