তোমাদের লেখা থেকে

বালক ও তার বাঁশি হোসাইন

প্রকাশ | ০২ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

মোহাম্মদ মোশাররফ
এক যে ছিল বালক। বালকের মনে ছিল বাঁশি বাজানোর প্রবল ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা। তাই সে বাঁশি বিক্রি করেই দিন কাটাতো। বালক দিনভর হাটে, বাজারে, বন্দরে ঘুরে ঘুরে বাঁশি বিক্রি করত। হেঁটে হেঁটে বাঁশি বাজিয়ে বাজিয়ে বিক্রি করতে তার দারুণ ভালো লাগা কাজ করত। তবে সে বাঁশিতে সুর তুলতে পারত না বলে তার বাঁশি তেমন বিক্রি হতো না। কিন্তু অন্যরা আরও মন্দ বাঁশি বেশি দামে বেশি করে বিক্রি করত। কারণ তারা বাঁশির সুর তুলতে পারত। ফলে সবাই আগ্রহ নিয়ে অন্যদের বাঁশি কিনত। এ নিয়ে বালকের তেমন কোনো আফসোস ছিল না। তবে বাঁশিতে সুর তোলা নিয়ে তার মনে দারুণ কষ্ট লাগল। সে কেন এত সুন্দর বাজাতে পারে না। একদিন বালক সিদ্ধান্ত নিল সে বাঁশি বাজানো শিখবে। এজন্য বালক একটি বাঁশি বাজানো শেখার স্কুলে ভর্তি হলো। প্রতিদিন হাটে, বাজারে, বন্দরে ঘুরে এসে সময় মতো ক্লাসে এসে হাজির হতো বাঁশি বাজানো শেখার জন্য। এখন কেমন বিক্রি হলো সেদিক তার কোনো খেয়াল নেই। তার মনে শুধু বাঁশি বাজানো শেখার স্বপ্ন বিরাজমান। কিন্তু সেখানেও দেখা দিল বিপত্তি। দিনের পর দিন যায় সে কিছুতেই বাঁশিতে সুর তুলতে পারছে না। ওস্তাদ এ নিয়ে ক্ষুব্ধ। 'তোমাকে দিয়ে হবে না। তুমি বাঁশি বাজাতে পারবে না। কি বাজাও- বাঁশি না ফাটা বাঁশ? আঙ্গুল নাড়াতে পারছো না আর এসেছো বাঁশি বাজাতে। কি করে বাঁশি বাজাবে। যাও যাও তোমার বাঁশি বাজানো শেখা লাগবে না। অন্য কাজ করো গিয়ে।' এ নিয়ে তার মনে দারুণ কষ্ট জন্ম নিল। কি করবে সে! জীবনে কোনো কাজেই সফল হতে পারেনি। মনের ভিতর সব ব্যর্থতার আগুন জ্বলতে লাগল। বালক চিন্তা করল সে আর এখানে থাকবে না। ভাবনামতো বাঁশিগুলো নিয়ে হাঁটতে লাগল। হাঁটতে হাঁটতে একটি বিশাল বনের মধ্যে ঢুকে পড়ল। তার পরেও বালক থমকে দাঁড়ায় না। চোখের জল মুছতে মুছতে মনের দুঃখে জ্বলতে জ্বলতে হাঁটতেই থাকে। বিকাল পেরিয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে তারপরও বালক হাঁটে। চারদিক থেকে ঝিঁঝি পোকার ডাক আতঙ্ক সৃষ্টি করছে, সেদিক কর্ণপাত নেই। হাঁটতে হাঁটতে শেষ পর্যন্ত এমন এক প্রান্তে গিয়ে পৌঁছায় যেখান থেকে যাওয়ার আর কোনো রাস্তা নেই। সামনে বড় দীঘি, দীঘির পাশে তিনটি সুবিশাল বৃক্ষ। শরীরও ক্লান্ত হয়ে এসেছে। ক্ষুধা ভাব জেগে উঠেছে। দীঘি থেকে জল তুলে খেয়ে গাছের নিচে বসে ভাবতে লাগল। ওস্তাদের কথাগুলোও মনে পড়ে যায়। খুব করে কাঁদতে লাগে। জেদের বসে থলি থেকে বাঁশিগুলো এক এক করে ছুড়ে ফেলতে থাকে। এক সময় বালক গাছের তলায় ঘুমিয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর বালক শুনতে পায় কে যেন তাকে ডাকছে। 'বালক ওঠো'। বালক তাড়াতাড়ি ঘুম ভাঙায়। চেয়ে দেখে বিশাল আকারের একটি পাখি তাকে ডাকছে। পাখিটি কি অপরূপ সুন্দর। চারপাশ চকচক করছে। সেই আলোয় আশপাশ আলোকিত হয়ে গেছে। বালক তার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। পাখিটি জিজ্ঞেস করল, তুমি কাঁদছো কেন? তোমার কিসের এত কষ্ট?' বালক পাখিটিকে সব খুলে বলল। ওহ এ ঘটনা। তুমি বাঁশি বাজানো শিখতে চাও। পারছিলে না বলে তোমার মনে এত কষ্ট? বেশ তো বেশ ভালো। না পারার যে কষ্ট তোমার মনে সৃষ্টি হয়েছে এ থেকে বোঝা যায় তুমি পারবে। এ থেকে বোঝা যায় তুমি তোমার কাজ ?ও লক্ষ্যকে কতটা ভালোবাসো। কষ্টকে শক্তিতে রূপান্তর করে এগিয়ে যাও দেখবে ঠিক সফলতা পেয়েছো। তা মনে রাখবে 'পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রসূতি'। তুমি কখনই ভেবো না তোমাকে দিয়ে এ কাজ, ও কাজ হবে না। তুমি একবার না পারলে সময় নিয়ে বারবার করতে থাকো দেখবে একবার হয়ে যাবে। যদি কেউ তোমাকে বলেও তুমি পারবে না। তুমি তাতে কর্ণপাত না করে বলবে 'আমি পারব'। এখন শোনো, তুমি বাড়ি ফিরে যাও, তোমার সাধনায় মগ্ন হও। কিন্তু তার আগে এই বনের পশ্চিম কোণে একজন একজন বৃদ্ধ দেখবে বাঁশি বাজানো শেখায়। তুমি সেখানে গিয়ে আমার কথা বলবে রানী পাখি পাঠিয়েছে। তার কাছ থেকে কিছুদিন শিক্ষা নিয়ে তবেই বাড়ি যাবে। এই বলে পাখিটি চলে যায়। বালকের মনে পড়ে সে তো সব বাঁশি ফেলে দিয়েছে। খুঁজতে খুঁজতে দুর্বল একটি বাঁশি থলিতে পায়। বালক সে বাঁশি নিয়েই নতুন গুরুর কাছে যায়। অতঃপর গুরুকে সব খুলে বলে এবং শিক্ষা গ্রহণ করতে থাকে। গুরুও আগ্রহ নিয়ে তাকে শেখাতে থাকে। প্রত্যেক সুরেই তাকে উৎসাহ দেন। বলেন, 'এই তো বেশ ভালো হচ্ছে, কে বলে হবে না'। কিন্তু বালক জানত- হয় না। তবু সে দিনভর চেষ্টা চালাতে লাগল। দেখা গেল একদিন বালক দারুণ বাঁশি বাজানো শিখে গেল যা সে আগে ভালো বাঁশি দিয়েও পারেনি। অবশেষে বালক বাড়ি ফিরে আবার আগের মতো জীবন কাটাতে শুরু করল। ইতিমধ্যে সারা দেশে তার নাম ছড়িয়ে পড়ল। দেশসেরা বাঁশিওয়ালা খ্যাতি পেল। 'যদিও বনের মধ্যের যাবতীয় ঘটনা ছিল বালকের স্বপ্নে'।