পিঁপড়ে ও দোয়েল পাখি

প্রকাশ | ০৯ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

জুবায়ের দুখু
বহুদিন আগে এক নির্জন বনে একটি পিঁপড়ে পরিবার ও এক দোয়েল পাখি বাস করত। তারা খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। দোয়েল পাখি যে গাছটাতে বাসা বেঁধে জীবনযাপন করত, ঠিক সেই গাছের নিচে পিঁপড়ে বসবাস করত। তারা সারাদিন বনের সবুজ পাতার বাতাসে গা দুলিয়ে নিজেদের জীবনের গল্প করত। কিছুদিন পর বর্ষাকাল পিঁপড়ে এখনোই তার খাবার সংগ্রহে ব্যস্ততায় ভরপুর। বর্ষার পানি এলে তারা কোথাও যেতে পারবে না। আবার খাবার সংগ্রহ করতে পারবে না। ছেলেপুলে না খেয়ে মরবে। এসব কথা ভেবে পিঁপড়ে খাবার সংগ্রহের সংগ্রাম করছে। এদিকে দোয়েল পাখিও ব্যস্ততায় দিন কাটাচ্ছে, তার বাসা নতুন করে মেরামত করছে নতুন সুতা এবং নতুন খড়কুটা দিয়ে। যেন তার বাসার মধ্যে বর্ষার পানি বা বাতাস হানা না দিতে পারে। এই নিয়ে পিঁপড়ে ও দোয়েলের গল্প এখন খুবই কম হচ্ছে। এভাবেই ধীরে ধীরে বর্ষাকাল চলে এলো তাদের দ্বারপ্রান্তে। ঝড়ো ঝড়ো বৃষ্টি দিনে দুই থেকে তিনবার হয়ে যায় এতে পিঁপড়ে ও দোয়েল পাখির গল্পে বিঘ্ন ঘটে। তবু তারা নিরাশ না হয়ে সময় পেলেই বৃষ্টির ফাঁকে ফাঁকে তারা দুজন মধুর গল্পে মত্ত হয়ে পড়ে। ভালোই যাচ্ছিল বর্ষার কিছুদিন। এখন ধীরে ধীরে বানের পানি বেড়ে যাচ্ছে খালে-বিলে এবং গ্রামের সব মেঠো পুকুরেও। এই নিয়ে দোয়েল পাখি ভীষণ চিন্তিত। পিঁপড়ে দোয়েলকে জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে বন্ধু? কিছুদিন ধরে তোমার মন খারাপ মনে হচ্ছে। দোয়েল খুবই বিষণ্ন মনে বলতে লাগল তার বিপদের কথা। পিঁপড়ে মুচকি হেসে বলল বন্ধু তুমি এই নিয়ে এত চিন্তিত হয়ে পড়েছ? আজ থেকে এসব চিন্তা মাথা থেকে মুক্ত করে দাও। আমি তোমাকে আমার এই বর্ষায় খাবার দিয়ে সাহায্য করব। আমার কাছে এখনো অনেক খাবার সংগ্রহ আছে। তাই তুমি খাবার নিয়ে চিন্তা করো না। পিঁপড়ের কথা শুনে দোয়েল খুবই আবেগে আপস্নুত হলো। দোয়েল নিশ্চিন্তে দিন কাটাচ্ছে। খাবারে চিন্তা খুবই কম করতে হচ্ছে। এদিকে পিঁপড়ের একটি বাচ্চা হয়েছে সে দু-তিনদিন পর নিজে নিজেই চলতে পারবে। এই নিয়ে পিঁপড়ে এক মহাচিন্তায় দিন কাটাচ্ছে। এই দেখে দোয়েল পাখি ভাবল আমার মতো পিঁপড়ে বন্ধুও হয়তো কোনো বিপদে পড়েছে। সে আরও চিন্তা করল পিঁপড়ে আমাকে সাহায্য করেছে আমারও উচিত পিঁপড়েকে সাহায্য করার। তার সমস্যা সমাধান করা। দোয়েল পাখি জিজ্ঞেস করল পিঁপড়ে বন্ধু তোমার বাচ্চা কই? সে কি এখন নিজে নিজেই চলতে পারে? পিঁপড়ে কথাগুলো শুনে চোখ ছলছল করে বলতে লাগল, বন্ধু আমি আমার বাচ্চাকে নিয়ে খুবই চিন্তিত আছি। দেখতেই পাচ্ছো দিনে দিনে বানের জল আমাদের প্রায় কাছে চলে এসেছে। আর আমার পিঁপড়ে বাচ্চা সবে নিজে নিজে চলতে শিখেছে। তাই কখন না জানি হাঁটতে গিয়ে বানের জলে পড়ে। দোয়েল পিঁপড়েকে বলল, তুমি চিন্তা নিও না বন্ধু আমরা দুজন মিলে তোমার ওই পিঁপড়ে বাচ্চা দেখে রাখব। আর এখন বর্ষাকাল তুমি আমি বাইরে খাবারও সংগ্রহ করতে যাব না, তাই আমরা দুজন তোমার বাচ্চাকে চোখে চোখে রাখব সারাদিন। নিমিষে পিঁপড়ে সাহসী হয়ে উঠল দোয়েল পাখির কথা শুনে। একদিন সকালেই খুব বৃষ্টি শুরু হলো এবং বানের জলে ভীষণ ঢেউ তোলপাড় খাচ্ছে। কোনোক্রমে দোয়েল পিঁপড়ের কাছ থেকে কিছু খাবার নিতে এসেছে। এসে দেখে পিঁপড়ে বাচ্চার খুব অসুখ, বানের জলে ভিজে ভিজে ঠান্ডা ও জ্বর বাধিয়েছে। তাই তার অতি প্রিয় বন্ধু পিঁপড়ের মন খারাপ। দোয়েল বলল, তুমি চিন্তা করো না আমি এখনি যাচ্ছি বনের মধ্যে ওষুধ তৈরির গাছের শিকড় আনতে। বলেই সে এক উড়াল দিল ওষুধের খোঁজে এই বৃষ্টির মধ্যে। কিছুক্ষণ পর গাছের শিকড় নিয়ে ফিরেও এলো এবং শিকড়ের রস পিঁপড়েকে খাওয়ালো। পিঁপড়ে বাচ্চা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়। একদিন পিঁপড়ে দোয়েল পাখিকে কৃতজ্ঞ জানাতে লাগল। তখন দোয়েল পাখি বলল, এখানে কৃতজ্ঞ জানানোর কি আছে। আর তুমিও তো আমাকে সাহায্য করেছ এই বর্ষায় আমাকে জীবিকা নির্বাহের জন্য খাবার দিচ্ছ এটা কম কিসে? আর তার থেকে বড় হলো আমরা দুজন বন্ধু। আমাদের উচিত একে অন্যের দুঃখে এগিয়ে আসা। পিঁপড়ে বলল ঠিক বলেছ দোয়েল বন্ধু। সব থেকে বড় হলো বন্ধুত্বের মর্যাদা রাখা ও তার দুঃখে পাশে থাকা।