হৃদ্যতার মন খারাপ

প্রকাশ | ৩০ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

মাহমুদা শিরীন
হৃদ্যতার স্কুলে আজ খুব মন খারাপ। গালে হাত দিয়ে বসে আছে। ম্যাডাম কেজি ক্লাসে প্রবেশ করে প্রথমেই হৃদ্যতাকে চোখে পড়ল গালে হাত দিয়ে বসে থাকতে। ম্যাডাম বলল- কি ব্যাপার, গালে হাত কেন? কি হয়েছে তোমার? হৃদ্যতা চুপ, কোনো কথা বলছে না, মন খারাপ করে কি যেন ভাবছেই। ম্যাডাম উত্তর না পেয়ে বলল, ক্লাসে কিছু জিজ্ঞেস করলে বলতে হয়, বলো কি হয়েছে তোমার, এত মন খারাপ কেন? এবার হৃদ্যতা বলল, ম্যাডাম আমার চুল দেখে বুঝতে পারেননি, চুল বাঁধার একটাও ব্যান্ড নেই বাসায় সব রেইদ ফেলে দিয়েছে জানালা দিয়ে। ম্যাডাম হৃদ্যতার অভিমানী গলা শুনে কাছে গিয়ে চুলে আলতো ছুঁয়ে বলল, তাই তো দেখছি চুলে কোনো ব্যান্ড ক্লিপ নেই। রেইদ কে, তোমার ছোট ভাই নাকি? হৃদ্যতা মাথা নেড়ে বলল, জি আমার ছোট ভাই, রেইদ ভারী দুষ্ট। হাতের কাছে যা পায় সব জানালা-বারান্দা দিয়ে ফেলে দেয়। আমার এখন একটাও ক্লিপ ব্যান্ড নেই। হৃদ্যতার কথায় ক্লাসের সব বন্ধুরা হেসে ফেলল, হৃদ্যতার তখন চোখে জল টলমল করছে। জোরে কেঁদে দেবে দেবে ভাব। ম্যাডাম সবাইকে হাত নাড়িয়ে থামিয়ে বলল কেউ হাসবে না। হৃদ্যতার দিকে তাকিয়ে ম্যাডাম বলল শোনো হৃদ্যতা, তোমার ছোট ভাইয়ের বয়স কত বলতে পারো? হৃদ্যতা বলে দেড় বছর। ম্যাডাম বলে তোমার ভাই এখন তো অনেক ছোট, আর একটু বড় হলে আর ফেলবে না। হৃদ্যতা বলে শুধু আমার জিনিস নয়, টিভির রিমুট অনেকগুলো ফেলে ভেঙেছে। সব এলোমেলো করে। আমার বই-খাতা, রং পেনসিল কোনো কিছুই রাখা যায় না। ম্যাডাম বলে, আর একটা বছর পর আর ফেলবে না। ও একটু বুঝলে এমন আর করবে না। আর বড় হলে তোমাকে অনেক জিনিস কিনে দেবে। তাই মন খারাপ করতে নেই। ছোট ভাইকে আদর দিতে হয়। ওদের সঙ্গে খেলতে হয়। হৃদ্যতা ম্যাডামের কথায় সন্তুষ্ট নয়, সে বলে আপনি জানেন না ম্যাডাম, রেইদ বড় হলেও ঠিক হবে না। ওর খুব জিদ, ও ভেঙেই মজা পায়। আমি রেইদকে দুচোখে দেখতে পারি না। মাঝেমধ্যে আমি মারি ওকে। ম্যাডাম বলে না না হৃদ্যতা এমন করবে না। আজকে বাসায় গিয়ে ওর সঙ্গে খেলবে মজা করবে। আদর করবে। আর কয়েকটা দিন ধৈর্য ধরো, ও আর ফেলবেও না ভাঙবেও না। আর ছোট ভাইকে কখনো মারতে নেই। ওরা বোঝে না। দেখবে আর একটু বড় হলে তোমার জন্য অপেক্ষা করবে, তুমি কখন স্কুল থেকে বাসায় যাবে, তোমার সঙ্গেই খেলবে। অনেক ভালো হয়ে যাবে। বলো হৃদ্যতা বাসায় গিয়ে আজ থেকে ওকে কিছুই বলবে না, মারবেও না। হৃদ্যতা হেসে বলে জি আচ্ছা। ম্যাডাম ক্লাসের সবার দিকে তাকিয়ে বলে তোমাদের বাসায় যাদের ছোট ভাই-বোন আছে তাদের কখনো মারবে না ঝগড়াও করবে না। ওদের সঙ্গে আনন্দ করে খেলবে। সবাই এক সঙ্গে বলে উঠল জি আচ্ছা। স্কুল ছুটির পর হৃদ্যতা তার মাকে বলল, মা দুইটা চকোলেট নাও রেইদের জন্য, আমি ওকে দেবো। হৃদ্যতার মা অবাক, সকালে এত রাগ করে আসলে, রেইদকে দেখতেই পারো না। আর এখন বলছ চকোলেট নিতে। হৃদ্যতার মা কথা না বাড়িয়ে চকোলেট নিল। হৃদ্যতা বাসায় গিয়ে রেইদকে কোলে নিয়ে চুমু খেয়ে চকোলেট দিল ভাইয়া বলে। হৃদ্যতার মা জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ওদের ঝগড়া মারামারি থামাতেই অন্য কাজের সময় চলে যায়, জানিনা এমন মিল কতদিন থাকবে। এমন মিল থাকলে তো ভালোই।