মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
তোমাদের লেখা

বানরের অনুতাপ

মোহাম্মদ আল আমিন ইসলাম
  ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

সবুজ-শ্যামল গাছ-গাছালি আর পাখ-পাখালির শোভায় সমৃদ্ধ ছিল, অটবিরাজ বন।

সে বনের রাজা ছিল বাঘ। শিয়াল ছিল মন্ত্রী। হাতি, বানর, কচ্ছপ, হরিণ, ভালস্নুক ও নেকড়ে ছিল সে বনের বাসিন্দা। বছরে বছরে সেখানে বনের রাজা পরিবর্তন হতো। কেবল মন্ত্রী শিয়ালে থেকে যেত। সময় গড়িয়ে যেতে যেতে বনের রাজা নির্বাচনের সময় এসে গেল। রাজা বাঘ ডাকল জরুরি এক সালিশ। রাজার সালিশ বলে কথা! রাজা বাঘের ডাকে বনের প্রত্যেকটি জন্তু সালিশে হাজির হলো।

বাঘ সবার উদ্দেশ্যে : তোমাদের সবার সমর্থনে আমি তো বেশ বনের রাজার দায়িত্ব পালন করলাম। এবার আমার রাজার দায়িত্ব ফুরিয়ে গেছে। এমনকি বয়সটাও বড্ড বেড়ে গেছে! তাই আমি আমার দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছি। এবার তোমাদের সবাই মিলে বনের রাজা বানানোর পালা। তোমরা আমি ছাড়া যাকে বনের রাজা বানাবে, আমি তাকে বনের রাজা মেনে নেবো।

শিয়াল : বাহ! বাহ!

কচ্ছপ : আপনার আচরণে মুগ্ধ হলাম বাঘ ভাই।

বাঘ : সে কী, এ তো আমার কর্তব্য।

খরগোশ : বনের রাজা হাতিকে বানালে কেমন হয়?

হরিণ : বানানো যায়।

নেকড়ে : মন্দ হয় না।

হরিণ : হঁ্যা।

বাঘ : এবার তাহলে বনের রাজা হাতিকে বানানো হোক।

শিয়াল : তাই হোক।

হাতি : আপনারা যদি মনে করেন, আমি বনের রাজা হওয়ার উপযুক্ত; তো বানান। এতে আমার কোনো আপত্তি নেই।

বানর : আমি কিছুতেই হাতিকে বনের রাজা মানব না।

বাঘ : কেন?

বানর : কারণ হাতি আস্ত মোটা। সহজে চলতে পারে না। বরং আমাকে রাজা বানানো হোক। দেখ এগাছ থেকে ওগাছে আমি কত সহজে টপকে যেতে পারি।

শিয়াল : তুমি বানর। এগাছ থেকে ওগাছে লাফালাফি তোমার স্বভাব। তাই বলে কি তোমাকে বনের রাজা বানাতে হবে? একটা বিপদ এলে সামলানোর মুরাদ নেই যার; তার আবার বনের রাজা হওয়ার শখ!

শিয়ালের কথায় বানরের চোখ লালে লাল হয়ে গেল। সে অপমানে একদম চুপ করে রইল। মনে মনে সে সংকল্প করল, যে করেই হোক শিয়ালকে তার চরম অপমানের জবাব দিতে হবে; সেই সঙ্গে আস্ত মোটা হাতিকে বন থেকে তাড়িয়ে সেই হবে বনের রাজা! ভিক্ষুকের ছেঁড়া কাঁথায় থেকে রাজা হওয়ার স্বপ্ন যেমন- ঠিক তেমনি বানরের বনের রাজা হওয়ার প্রত্যাশাও। সেদিনের মতো সালিশ সেখানে শেষ হলো। বানর আগের পদে বহাল থাকল। হাতি বনের রাজা হওয়ায় ভীষণ খুশি।

কয়েকদিন ধরে বানর হাতিকে বন থেকে তাড়ানোর ফন্দি আটল। শুধু তাই নয়- শিয়ালকে তার অপমানের উচিত শিক্ষা দিতে চাইল। কিন্তু শুদ্ধ পরিকল্পনার অভাবে তা মোটেও পাচ্ছিল না।

একদিন বানরের ভীষণ তৃষ্ণা পেল। সে পিপাসা মেটাতে এক নদীর ধারে গেল জল পান করতে। সে সময় বনের রাজা হাতি নদীর ধারের কলাগাছ খাচ্ছিল। মন্ত্রী শিয়াল ছিল তার সঙ্গে। তা জানত না বানর। বানর যেই না নদীর ধারে জল পান করতে গেল, সেই থেকে সে নদীর জোয়ার ভাটায় একটু একটু করে তলিয়ে যেতে লাগল আর 'বাঁচাও বাঁচাও' বলে চিৎকার করতে লাগল। সে সময় হাতি ও বানর সেখানে জল পান করতে এসে, বানরের আর্তনাদ শুনতে পেল। অতঃপরে শিয়াল ও হাতি বানরকে বাঁচাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

হাতি, শিয়ালকে উদ্দেশ্য করে : বলত কি করে বাঁচাই বানর বেচারাকে? (বানরকে তলিয়ে যেতে দেখে)

শিয়াল : হুজুর, আপনি আপনার শুঁড়টা শিয়ালের দিকে এগিয়ে দিন। আর বানর তুমি শিয়ালের শুঁড় ধরে উপরে উঠে আস। শিয়ালের কথামতো হাতি তার শুঁড়টাকে বানরের দিকে এগিয়ে দিল। তা ধরে চটপটে জোয়ার-ভাটা থেকে ডাঙ্গায় উঠে এলো বানর। মৃতু্যর মুখ থেকে বেঁচে গেল বানর। বানর তার ভুল বুঝতে পেরে হাতি ও শিয়ালের কাছে ক্ষমা চাইল ও চিরকৃতজ্ঞতা জানাল তাদের প্রতি।

শিয়াল আনন্দে ছড়া কাটল :

এমনি বাজাইও না

আর ভাইরে নেটা,

যে- যে পদের যোগ্য

তারে দিব সেটা।

নবম শ্রেণি, সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<78730 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1