ছোটগল্প

বিজয়ের সূর্য

প্রকাশ | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

আব্দুর রাজ্জাক
তখন সময় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। চারদিকে গুলির ধোঁয়া উড়ছে, দাদুর ভাঙা ঘরে বসে নোংরা কাপড় পরে রাস্তার দিকে চেয়ে রয়েছি। কখন বাবা আসবে, কখন বাবা কোলে নেবে? মা তো অনেক আগেই মারা গেছে। কখনো দাদুর চোখের দিকে চেয়ে রয়েছি, আবার কখনো দাদুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরছি। শীতের কুয়াশার সঙ্গে গুলির ধোঁয়া মিশে একাকার হয়ে গেছে। একটু পর দেখলাম দাদুর চোখের পানি টপটপ করে আমার কপালে এসে পড়ছে। দুই হাত দিয়ে দাদুর চোখের পানি মুছে দিয়ে দাদুকে বললাম- -কাঁদছ কেন দাদু, কি হয়েছে তোমার? দাদু আমার চোখের দিকে চেয়ে রইল, শুধু বারবার কেঁদে কেঁদে দুচোখ ভেসে ফেলছে! আমি দাদুর এমন কান্না দেখে নিজেও কেঁদে ফেললাম, আর কান্না চোখে দাদুকে বললাম- -না না দাদু তুমি কেঁদো না, তুমি নিশ্চয় আমার বাবার জন্য কাঁদছ তাই না দাদু? দাদু আমার কথায় সাড়া দিয়ে একটু মাথা নাড়ালো! শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম দাদুকে। -জানো দাদু বাবা যুদ্ধে যাওয়ার সময়, আমার কপালে চুমু দিয়ে বলেছিল 'যতই কষ্ট হোক বিজয়ের সূর্য এনে দেবে আমার হাতে' জানো দাদু সেই কথাগুলো সবসময় ভাবী আমি। এমনি সময় দূর থেকে কে যেন চিৎকার করে খোকা খোকা বলে, ডাকছে দাদুর কোল থেকে ছুটে গিয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে পড়লাম। কিছুই দেখা যাচ্ছে না শুধু ধোঁয়া ধোঁয়া কুয়াশার ছবি। চারদিকে ঘুরে ঘুরে দেখছি কোথা থেকে আওয়াজ আসছে। হঠাৎ দেখতে পেলাম আমার বাবা দৌড়ে আসছে, দেখলাম বাবার হাতে লাল-সবুজ রঙের একটি পতাকা বাতাসে দুলছে, বাবার সারা শরীর রক্তে ভিজে রয়েছে, বাবার কোলে উঠে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম বাবাকে। বাবা তখন হাসিমুখে আমার হাতে পতাকা তুলে দিল। পতাকার গোল লাল বৃত্তের ভেতর দেখলাম একটি সূর্য হাসছে। বাবা আমার মুখে অনেক চুমু দিল। তারপর দাদুর কাছে গেলাম। কাছাকাছি যেতে দাদু ছুটে এসে বাবাকে জড়িয়ে জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করল। বাবা তখন দাদুর কান্না মুছে দিয়ে বলতেই আকাশের দিকে চেয়ে দেখি সূর্য হেসে উঠেছে। -বাবা আজ থেকে এদেশ স্বাধীন। দেখো বাবা ওই দূর আকাশে বিজয়ের সূর্য হেসে উঠেছে। তখন আমার হাতে লাল-সবুজের পতাকার মধ্যে থাকা সূর্যকে দেখছি, আর দূর আকাশে থাকা সূর্যকে দেখছি। দুই সূর্যকে খুব সুন্দর লাগছে। পতাকা নিয়ে ছুটে চলেছি মাঠেঘাটে সব প্রান্তে। আর মন ভরে দেখছি দূর আকাশের বিজয়ের সূর্যকে। আর দুহাতে সূর্যকে ধরে চুমু খাচ্ছি।