বিড়াল ও বাঘ

প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

নূর মোহাম্মদ দীন
সকালবেলা বনের পথ দিয়ে ইঁদুর ধরতে যাচ্ছিল এক বিড়াল। হঠাৎ কীসের যেন কান্না শুনতে পেল বিড়ালটি। কিন্তু কীসের কান্না ঠিক বুঝতে পারল না। কিছু দূর সামনে আগাতেই কান্না আরও স্পষ্ট শুনতে পেল। বিড়ালটি আরও কিছুদূর এগিয়ে দেখতে পেল রাস্তার পাশে একটি ঝোপের নিচে বিড়াল ছানা কাঁদছে। কিন্তু বিড়ালটি ছানার আশপাশে কাউকে দেখতে পেল না। ছানাটি ছিল খুব ক্ষুধার্ত। ছানাটির এ অবস্থা দেখে খুব মায়া হলো বিড়ালের। তার ছানা দুটির কথা মনে পড়ল। তখন বিড়ালটি ভাবল, 'আমার থাকা-খাওয়ার যত কষ্টই হোক আমি এই ছানাটিকে বাড়ি নিয়ে যাব। আমার ছানাদের সঙ্গে লালন-পালন করব। এই ভেবে বিড়ালটি ছানাটিকে ঝোপ থেকে বের করে কোলে তুলে নিল। গালে-মুখে চুমু খেলো। মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দিল। এরপর বিড়াল ছানাটিকে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হলো। বাড়িতে পৌঁছে তার ছানা ইনি ও মিনিকে ডেকে বলল, 'এই তোমরা কই, দেখো দেখো কাকে নিয়ে এসেছি!' ইনি ও মিনি একসাথে বলল, 'ও কে মা? তুমি কাকে নিয়ে এসেছো?' সব ঘটনা বলার পর বিড়াল ইনি ও মিনিকে বলল, 'ওর নাম টনি। ওর বাবা-মা কেউ নেই। এখন থেকে ও আমাদের সঙ্গেই থাকবে। ও তোমাদের ভাই। এখন থেকে তোমরা তিন ভাই-বোন। তোমরা তিন ভাই-বোন এক সঙ্গে মিলেমিশে থাকবে। আমি টনিকে তোমাদের মতোই আদর-যত্নে বড় করব। তোমরা ওকে আপন ভাই বলে গ্রহণ করো।' মায়ের কথা শুনে ইনি ও মিনি খুব খুশি হলো এবং টনিকে জড়িয়ে ধরে আদর করল। ইনি মিনি যা খায় টনিকেও তাই খেতে দেয়। এক সঙ্গে খেলে, ঘুমায়, দুষ্টুমি করে। এভাবে আদর-যত্ন পেয়ে টনি অল্প কিছু দিনে বেশ মোটা আর নাদুসনুদুস হয়ে উঠল। টনি কেমন যেন ইনি ও মিনির চেয়ে দ্রম্নত বেড়ে উঠতে লাগল। আর দিনে দিনে টনির মধ্যে কেমন যেন কিছু শারীরিক ও আচরণগত পরিবর্তন হতে লাগল। যেমন- টনি ইনি ও মিনির খাবার কেড়ে খেত। ঝগড়া করত। মারামারি করত। হাত-পায়ে নখের আঁচড় দিত। নাক ডেকে ঘুমাত। মাঝেমধ্যে হুংকার দিত। গর্জন করে উঠত। টনির হাত পায়ের নখগুলোও একটু অস্বাভাবিক। পাগুলো একটু মোটা মোটা। মুখের দাড়িগুলোও একটু অস্বাভাবিক- বড় বড়। যা সাধারণ বিড়ালের মতো নয়। এ নিয়ে ইনি ও মিনি ওদের মাকে বললেও বিড়াল এ বিষয়ে কোনো মাথা ঘামাতো না। একসময় বিড়াল বুঝতে পারল এবং ইনি ও মিনিকে নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। কিন্তু তত দিনে টনি বেশ বড়, শক্তিশালী ও হিংস্র হয়ে উঠেছে। টনি তাদের কোনো কথাই শুনতো না। কিছু বললেই খাবলে ধরতে আসত। আর বলত, 'মাংস খাবো ! মাংস খাবো!' একদিন বিড়াল গেল বনে ইঁদুর ধরতে। ফিরে এসে দেখল ইনি মিনি টনি কেউ ঘরে নেই। বিড়াল ইনি...মিনি...টনি...বলে ডাকতে শুরু করল। এমন সময় ইনি মাচার নিচে থেকে বেরিয়ে এসে ভয়ে ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল, 'মা সর্বনাশ হয়ে গেছে! টনি মিনিকে মেরে ফেলেছে। মিনিকে খেয়ে ফেলেছে টনি। বিড়াল ঘটনা শুনে মিনি বলে এক চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেল। এরপর বিড়াল ও ইনি প্রতিবেশীদের সব ঘটনা জানালো। সবাই লাঠি, ফলা, সুরকি, বলস্নম নিয়ে বিড়ালের বাড়ি এলো এবং টনিকে খুঁজতে লাগল। হঠাৎ একটি ঝোপের নিচে টনিকে চোখে পড়ল। আর সবাই বাঘ! বাঘ! বলে হামলা করল টনির ওপর।