চাঁদের বুড়ি

প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

মাহাথির মোবারক
সিনতা আজ দাদির সঙ্গে শুয়েছে গল্প শুনবে বলে। দাদির কাছে খুব বায়না ধরেছে আজ তাকে সারারাত গল্প শোনাতে হবে, নয়তো কাল থেকে সিনতা আর স্কুলে যাবে না। কোনো কিছু খাবেও না। অবশেষে তার দাদিমা বলল, আচ্ছা আর পাগলামি করো না গল্প শুনাবো। এবার আমাকে ছেড়ে সোজা হয়ে আগে শুয়ে পড়ো তারপরই আমি গল্প বলতে শুরু করব। সিনতা তো দাদির মুখে গল্প বলার কথা শুনেই আনন্দে একেবারে নেচে উঠল। তো দাদিমা! দাদিমা! কোন গল্পটা বলবে শুনি? সিনতার দাদি উওর দিল, ওই যে জানালার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে দেখো একটা বাঁকা চাঁদ দেখা যাচ্ছে। আর ওই চাঁদের ভেতরই আছে তোমার দাদি মায়ের মতো একটি বুড়ি। এই বুড়িটিকে আমরাও ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি। আমার বাপ-দাদারাও দেখে এসেছে কিন্তু দেখতে দেখতে আজ আমিও ওই চাঁদের বুড়ির মতো বুড়ি হয়ে গেলাম কিন্তু চাঁদের বুড়িটি এখনো ঠিক আগের মতোই রয়ে গেছে একটুকুও পালটেনি। বুড়িটি আজও একটি লাঠি হাতে নিয়ে চাঁদের গায়ে বসে আছে। জানো সিনতা! আমিও আমার দাদির কাছে এই চাঁদের বুড়িকে নিয়ে একটা সুন্দর গল্প শুনেছিলাম আজ সেই গল্পটিই ইচ্ছে করেছে আজ তোমাকে বলব। সিনতা ছোট্ট প্রশ্ন করল তুমিও কি এই গল্পটি তোমার দাদির কাছ থেকে শুনেছো? সিনতার দাদি মাথা ঝুঁকিয়ে উত্তর দিল হঁ্যা আমিও আমার দাদির কাছ থেকে শুনেছি। সেই দিনটি ছিল অনেক সুন্দর চাঁদনী রাত চতুর্দিকে চাঁদের আলোয় আলোকিত ছিল সারা গ্রামটি। আমরা কয়েক জন গ্রামের উঠোনে একটি শীতল পাটি বিছিয়ে বসে ছিলাম দাদির মুখে চাঁদের বুড়ির গল্প শুনবো বলে। রাত তখন ১০টা বাজে বাজে এমন সময় সবাই দাদিকে ঘিরে বসে পড়লাম কেউ কোনো কথা না বলে সবাই হা করে দাদির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। দাদি গল্প শুরু করল, পরে কি হলো জানিস সিনতা? সিনতা বলল, তুমি না বললে জানবো কি করে? তখন আমি আর আমার দাদু গল্প করতে করতে অনেক দূরে হারিয়ে গেলাম রাত তখন প্রায় ২টা বাজে বাজে ভাব। কারও চোখে কোনো ঘুম নেয়। সবাই শুধু দাদিমায়ের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে এমন সময় পশ্চিমের জঙ্গল থেকে ঠিক চাঁদের বুড়ির মতো একটি বুড়ি বের হয়ে এলো। তার হাতে একটি বাঁকা লাঠি আর গায়ের কাপড়গুলো কেমন নোংরা, মাথার চুলগুলো কেমন এলোমেলো, হাতে একটি মোমবাতিও আছে। আমরা তাকে দেখা মাত্রই অনেক ভয় পেয়ে গেলাম। আস্তে আস্তে করে সেই বুড়িটি আমাদের দিকেই আসতে লাগল। আমরা সবাই তখন ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম। ভয়ে আমার শরীর কাঁপতে শুরু করে দিল। সঙ্গে সঙ্গেই আমরা চাঁদের বুড়ির গল্প বন্ধ করে দিয়ে রাজা-রানীর গল্প শুরু করে দিলাম। কিন্তু তারপরও বুড়িটি আস্তে আস্তে আমাদের দিকে আসতেই লাগলো। এমন সময় আমি ভয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলাম। পরদিন সকাল থেকে আমার গায়ে প্রচন্ড জ্বর চলে এলো। তারপর আর কোনো দিন আমি চাঁদের বুড়ির গল্প শুনতে চাইনি।