পান্ডা ভালুকের গল্প

প্রকাশ | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

মামুন-সিরাজী
হুয়ান নামে চীন দেশে এক শিকারি ছিল। একা একা জঙ্গলের মধ্যে কষ্ট করে দিন কাটতো তার। একবার জঙ্গলের মধ্যে বহু কষ্টে একটা পান্ডা ভালুক ধরে ফেলল সে। পান্ডা ভালুকের চামড়ার অনেক দাম শহরে। যে দাম পাবে তাতে তার বেশ কিছু দিন আরামে চলে যাবে। তাই সে মনে মনে গান গাইতে গাইতে চললো, তাইরে নাইরে না না / ধরেছি একখানা পান্ডা ভালুক ছানা / চামড়া কেটে পশম হবে মাংস কেটে খানা বাড়িতে নিয়ে এসে পান্ডার হাত-পা বেঁধে ঝুলিয়ে রেখে। সে বড় বড় ছুরিতে শান দিতে লাগল। পান্ডা তখন হাত-পা ছোড়ে আর কাঁদে হো হো হো হো হো/ ভালোমানুষের পো আজকে আমার জন্মদিনে/ মেরে ফেললে গো কান্না শুনে হুয়ানের মন একটু নরম হয়ে এলো। হুয়ান কবে জন্মেছে সে নিজেই জানে না। কে যে তাকে জঙ্গলের মধ্যে ফেলে রেখে গিয়েছিল কে জানে। হুয়ান তখন তাকে নামিয়ে বলল, 'মিথ্যে বলছিস না তো? আজ তোর জন্মদিন? ঠিক আছে তবে আজ তোকে না মেরে কাল মারব।' পান্ডা তখন কাঁদতে কাঁদতে বলল, 'আমার জন্মদিনে মিষ্টি মনিচাই পাতা দিয়ে নুডলস করে দেবে বলেছিল আমার মা।' হুয়ান বলল আমি কাঁচা মাংস পুড়িয়ে নুন গোলমরিচ দিয়ে খাই। কাল খেয়েছি ইঁদুরের মাংস, আজ পেয়েছিলাম তোকে। ঠিক আছে তোর যখন শেষ ইচ্ছে এটাই তবে তাই হবে। কোথায় পাবো সেই মিষ্টি মনিচাই পাতা?' পান্ডা ভেবেচিন্তে বলল, 'পাহাড় তলায় পথ দেখাবে হলুদ ব্যাঙের ছাতা \হসেইখানে এক কুয়োর গায়ে সেই মনিচাই পাতা সবুজ কচি পাতার গায়ে তারার মতো ফুল বেগুনি রং, চিনতে তাদের করবে না তো ভুল' হাঁটতে হাঁটতে হুয়ান চলল জঙ্গলের মধ্যদিয়ে বহুদূর। বৃষ্টি হলো ঝুপঝুপিয়ে, পাহাড়ের মাথায় সাতরঙা রামধনু উঠল। সেই রামধনুর ছায়া পড়ল ভেজা রাস্তার ওপরে সেখানে হুয়ান দেখে হলুদ হলুদ সোনা রঙের ব্যাঙের ছাতা। সেই ছাতাগুলোর রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে হুয়ান দেখে এক মস্ত কুয়ো। সেই কুয়োর একদম তলার দিকে বেগুনি রং ছোট্ট ছোট্ট ফুল ফুটে রয়েছে। হুয়ান দড়ি বেঁধে কোমরে আস্তে আস্তে নামতে লাগল কুয়োর একদম নিচে। বেশ অন্ধকারের মধ্যে সেখানে আস্তে আস্তে ঠাহর হলো একটা সুন্দর ফুটফুটে মেয়ে বসে আছে। সে অবাক হয়ে বলল- 'কে তুমি? এখানে কী করে এলে?' মেয়েটার মুখে কোনো কথা নেই। অনেকদিনের খিদে তেষ্টায় মুখ শুকিয়ে গেছে। হুয়ান তাকে কুয়োর বাইরে তুলে এনে তার মুখে জল দিল। মেয়েটা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল- 'আমার নাম ন্যান্সি নিওয়া। আমি সু হান বংশের রাজকুমারী। একটা পান্ডাকে বাঁচাতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম এই কুয়োর মধ্যে।' দিনের শেষে হুয়ান সেই মনচাই পাতা আর রাজকুমারীকে নিয়ে যখন ঘরে ফিরে এলো। তখন দেখল সেখানে এক সাদা পোশাকের বৃদ্ধ বসে আছেন। তিনি হেসে বললেন, আমি কু্য ইউয়ান, অর্কিডের দেবতা। জঙ্গলের প্রহরী। তুমি ভালো মানুষ হুয়ান। শিকারের মতো নিষ্ঠুর কাজ করো না। তোমার মঙ্গল হোক।' এই বলে তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। হুয়ান তখন রাজকুমারীকে প্রাসাদে পৌঁছে দিয়ে এলো। রাজা তাকে অনেক পুরস্কার দিলেন আর রাজকুমারীর কথায় দেশের সব জঙ্গল দেখাশোনার ভার তার হাতে তুলে দিলেন।