টেলিগ্রাম

প্রকাশ | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

মাহফুজ সুমন
প্রায় ৩ মাস পরে ওরা আমাকে একখানা পত্র হাতে দিয়েছিল। পত্রখানা লিখেছে মা। বাবা রবি, সুন্দর ফুটফুটে একটা দাদুভাই হয়েছে, দেখতে অবিকল তোমার মতো। কবে ছাড়া পাবে বাবা? মনে হয় দাদুভাই তোমাকে দেখতে চায়, কিছু বলতে চায়! দুঃখ করিস না বাবা, একদিন পৃথিবী ছেড়ে সবাইকে যেতে হবে। মলি, দাদুভাই প্রসবের সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তিনদিন পরে মারা যায়। মৃতু্যর আগে জ্ঞান ফিরে দাদুভাইকে চুমু খেয়ে বলেছে মা ওকে দেখে রাখবেন। ও যেন, ওর বাবার মতো প্রতিবাদী ভাষাসৈনিক হয়। ওকে অবশ্যই বাংলা কোনো স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবেন। আর ওর বাবা যদি কখনো জেল থেকে ছাড়া পায় তাহলে বলবেন ওর একটা সুন্দর নাম দিতে, নামটাও যেন হয় সহজ-সরল বাংলা ভাষায় গড়া। প্রায় বছর দুয়েক পরে মা ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে দেখছেন ওরা রবিকে নিয়ে যাচ্ছে, কোথায় যেন? রবি বলল মা, তোমার দাদুভাইয়ের নাম দিও অর্জন। আমার খুব ইচ্ছা হচ্ছে মলির, তোমার দাদু ভাইয়ের, তোমার মুখটা দেখার। আর তোমার হাতের পিঠা খাওয়ার! মাগো ওরা মধ্যরাত্রে আসে, পায়ের বুটের খট-খট শব্দে, কালো পোশাকে, হাতে চাবুকসহ। ওরা উর্দু ভাষায় কথা বলে। আর বলে উর্দুতে কথা বলতে, জাতীয় সংগীত বলতে। না বললে তোমার রেহাই নেই। মাগো বেঁধে দেয়া সময় অতিবাহিত হলো একদিন শেষরাত্রিতে আমার হাত বেঁধে নিয়ে যায় ফায়ারিং রেঞ্জে। শেষবারের মতো বলে এখনো সময় আছে উর্দুতে কথা বল। আমি চিৎকার করে না! না! বললে, পাশে থেকে গুলি করে দিল যেখানে তুমি সহস্র চুম্বন দিয়েছ 'মা', কপালে। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। মায়ের বুকটা ধড়ফড় শুরু করছে। মা এক গস্নাস পানি খেয়েও বুকটা ঠান্ডা করতে পারছে না। অশ্রম্নভরা চোখ মুছে নিল আঁচলে। দাদি কি হয়েছে? না দাদুভাই, তেমন কিছু না। তোমার বাবাকে স্বপ্নে দেখলাম। মনে হয় তোমার বাবা অতিশিগগির আসবে। বাহ্‌ বাবার সঙ্গে প্রথম দেখা হবে। দাদি বাবাকে ছবিতে দেখেছি কত্ত সুন্দর। না জানি বাস্তবে আরও কতই না সুন্দর! বাবা আসলে আমাকে কোলে নেবে, কপালে চুমু দেবে, তাই না...! রাত্রি শেষ। শেষ প্রহর, পৃথিবী নিস্তব্ধ। আধো আলোয় রবিটা হাসছে ... ঠিক বেলা ১১টায় পিয়ন গেটে কলিং চাপলো। হাতে দিল একটা খাকি রঙের ইনভিলাপ। টেলিগ্রাম.... চষবধংব পড়ষষবপঃবফ জঙইণ'ং ফবধঃয নড়ফু. \হইু ডবংঃ চধশরংঃধহ .