রুনার বিড়াল

প্রকাশ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

আনিসুর রহমান
রুনার পোষা বিড়ালছানাটি দেখতে খুব সুন্দর। গায়ের লোমগুলো ধবধবে সাদা। মাঝে মাঝে কালো ডোরাকাটা। বিড়ালছানাটিকে রুনা ভীষণ আদর করে। ইচ্ছে হলেই তুলতুলে লোমগুলোর উপর আলতু করে হাত বুলিয়ে দেয়। খাবার সময় হলে মিঁউ মিঁউ ডেকে বিড়ালছানাটি রুনার গা ঘেঁষে বসে থাকে। রুনা বিড়ালছানাটিকে শুধু দুধভাত আর মাছের কাটা নয়, প্রতিদিন তার পাতের অর্ধেকটা মাছ দিয়ে দেয়। একদিন রুনার আম্মু বিড়ালছানাকে প্রতিদিন এভাবে মাছ দিতে তাকে বারণ করল। রুনা বিনয়ের সুরে বলল, মা তুমিই তো আমাকে শিক্ষা দিয়েছ যে, বিড়াল দেখলে আদর করতে। কারণ ওরাও আলস্নাহর সৃষ্টি প্রাণী। তাই ওদের কখনো কষ্ট দিতে নেই। তোমার কথা শোনেই তো আমি এই বিড়ালছানাটি পুষছি। আরদ যত্ন করে চলছি। মা, আমি যদি প্রতিদিন বিড়ালছানাটিকে মাছের কাটা না দেই, তাহলে তো মনে মনে সে খুব কষ্ট পাবে। ওর কি মাছ খেতে মন চায় না? আর আমি যদি তাকে মাছ না দেই, হয়তো সে আমার প্রতি রাগ অভিমান করবে। আমি তো আমার পুষা বিড়ালছানাটিকে খুব ভালোবাসি। তাইতো আমি খাবার খেতে বসলেই দেখ না মিঁউ মিঁউ করে কেমন কাছে এসে চুপটি মেরে বসে থাকে? মা মুচকি হেসে বললেন, ঠিক আছে মা-মণি তোমার মাছটি তুমি খেয়ে নেবে। বিড়ালছানাকে মাছ আমিই দেব। রুনা মাথা নাড়িয়ে বলল, আচ্ছা তাই হবে। এবার তাহলে আমি দাদিমার কাছে যাই। এই বলে রুনা একদৌড়ে তার দাদির ঘরে চলে গেল। দাদির কাছে গিয়ে বসতেই সঙ্গে সঙ্গে বিড়ালছানাটিও এসে হাজির। দাদিমা বললেন, বিড়ালছানাটি দেখি সব সময় তোমার পেছন পেছন ছুটে চলে। আসলে দাদুমণি তুমি যেমন বিড়ালছানাটিকে আদর যত্ন কর, ঠিক তেমনি সেও তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে। তাই তো সব সময় তোমার পেছন পেছন ঘুর ঘুর করে। রুনা বলল, একদম ঠিক বলেছ দাদিমা। আমাকে ছাড়া যেন ওর একমুহূর্তও চলে না। তাই দেখ না, আমাকে একটুখানি না দেখলেই কেমন করে মিঁউ মিঁউ ডাকে সারাবাড়ি মাতিয়ে তুলে। আমার জন্য বিড়ালছানাটির এত ভালোবাসা দেখে মনে মনে ভীষণ আনন্দিত হই। দাদিমা বললেন, হঁ্যা তাই তো দেখছি। রুনা বলল, না দাদিমা। তুমি পুরোটা দেখনি। আমার জন্য বিড়ালছানাটির কতটা ভালোবাসা একটা ঘটনা বললে তুমিও ভীষণ অবাক হয়ে যাবে! কি বলব? দাদিমা ছোট্ট করে বললেন, হঁ্যা বলতো শুনি কি ঘটনা। রুনা একটু থেমে বলল, ঠিক আছে তাহলে শুনাচ্ছি। এই তো সেদিন রাতের ঘটনা। বাহিরে ঘন কুয়াশা আর হালকা বাতাস ছিল। তাই ঘরেও প্রচন্ড শীত লাগছিল। আমি আম্মুর সঙ্গে খাটের উপর ভালো করে লেপকাঁথা জড়িয়ে শুয়েছিলাম। বিড়ালছানাটিও প্রতিদিনের মতো আমার পায়ের কাছে লেপের তলে এসে শুয়ে পড়ল। তখন অনেক রাত। লেপের তলে শুয়েও আমার শরীর যেন শীতে কাঁপছিল। তাই হঠাৎ করেই আমার ঘুম ভেঙে গেল। সজাগ হয়ে দেখি আম্মু ঘুমিয়ে আছেন। আর আমার গায়ে লেপ নেই। আর এ জন্যই বিড়ালছানাটি লেপের একমাথায় কামড় দিয়ে খুব কষ্ট করে টেনে আমার গায়ে লেপটা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। অনেকটা সফলও হয়েছে। কিন্তু পুরো লেপটি আমার গায়ে দেওয়ার আগেই আমার ঘুম ভেঙে যায়। আমার জন্য বিড়ালছানাটির এমন ভালোবাসা দেখে আমি ভীষণ অবাক হলাম। তারপর ধীরে ধীরে উঠে বসলাম। বিড়ালছানাটিকে কোলে নিয়ে একটু আদর দিয়ে লেপের তলে ঘুমাতে দিলাম। তারপর আবার লেপটা গায়ে জড়ায়ে আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম। রুনার এ ঘটনা শুনে দাদিমা অবাক হয়ে গেলন। এত দারুন মজার ঘটনা। এতদিন বলনি কেন দাদুমনি। রুনা বলল, দাদিমা তোমাকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। দাদিমা বললেন, আচ্ছা এতে কোনো অসুবিধে নেই। তবে এখন থেকে তোমার পুষা বিড়ালছানাটির প্রতি আমার দরদটাও কিন্তু আরো বেড়ে গেল। আর আলস্নাহর সৃষ্টজীবের প্রতি তোমার এমন আদর যত্ন, ভালোবাসা দেখে আমি ভীষণ মুগ্ধ। সত্যিই দাদুমণি তুমি মহান।