দিপুদের শহিদ মিনার
প্রকাশ | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০
শরিফুল ইসলাম
সময় ফাগুন মাস!
ঋতু রাজ বসন্তের ছোঁয়ায় বনে বনে ফুলে ফুলে ভরে উঠছে গাছের কোমল ডগা। মৌমাছি ফুলে ফুলে ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করছে ফুলের মধু। ছোট ছোট কচি কচি ছেলেমেয়েরা নতুন নতুন বই নিয়ে ঝিনাই খালের বাঁধ পেরিয়ে বিদ্যালয়ের দিকে যাচ্ছে, সবার মনেই কেমন জানি একটু খুশি খুশি ভাব!
গাছে ফুটছে নয়া ফুল, হাতে আছে নতুন বই আবার যাচ্ছে নতুন শ্রেণিকক্ষে, খুশি তো থাকবেই তাই না?
ঝিনাই খালের বাঁধ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় দিপুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, দিপুর বয়স এগারো বছর, সে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। পড়ালেখায় খুব একটা ভালো না থাকলেও দিপুর মাথার ব্রেন একদম টাটকা। তবে খুব একটা কথা বলে না দিপু, একটু চুপচাপ স্বভাবের, তাই তো পড়ালেখাও ওই রকম চুপচাপ স্বভাবের।
আবার দিপুর মুখ চুপচাপ থাকে বলেই যে তার হাত স্তব্দ থাকে তা কিন্তু নয়- দিপুর হাত যথেষ্ট চঞ্চল।
দিপু বেশ ছোটবেলা থেকেই নানা রকম ফেলনা জিনিস থেকে অনেক ধরনের খেলনা তৈরি করত, ছবি আঁকতো, আবার মাঝেমধ্যে তো নিজে নিজেই ছড়া কাটত মনের সুখে।
দিপু তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াকালে তার ভাঙা বিমানের এক অংশ দিয়ে একটি ব্যাটারি চালিত ফ্যান তৈরি করে, যা দিয়ে গ্রীষ্মের ঋতুতে ঠান্ডা হাওয়া গ্রহণ করছে আবার বাল্বের সাহায্যে আঁধার ঘর আলোকিত করছে। এভাবেই সে একেক সময় একেক জিনিস তৈরি করে থাকে।
আজ নতুন শ্রেণিকক্ষে যাচ্ছে দিপু, রহিত, রানু, রাসেল, লালু আর মুন্না। লালু, রাসেল, মুন্না এবার তৃতীয় শ্রেণিতে আর রহিত ও রানু চতুর্থ শ্রেণিতে। এখানে সবার বড় দিপু, দিপুকে সবাই দিপু ভাই নামেই জানে ওরা সবাই দিপুর কথা মেনে চলে।
ফাগুন মাস মানেই শীতের শেষের দিক, আর শীতের শেষ দিক মানেই তো আসন্ন ফেব্রম্নয়ারি মাস।
আর ফেব্রম্নয়ারি মাসেই শুরু হয় শহিদ মিনার সংস্কারের কাজ। দিপুদের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বেশ দূরে একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। সেখানে পালন করা হয় মাতৃভাষা দিবস। ছাত্রছাত্রীরা ভোরে ঘুম থেকে উঠে হাতে একগুচ্ছ ফুল নিয়ে খালি পায়ে চলে আসে বিদ্যালয়ে শহিদ মিনারে ভাষা শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা কেউ আসে না, আসে না তার কারণ হলো তাদের শহিদ মিনার নেই, তারা এসে কোথায় ফুল দেবে?
দিপুদের বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। যাতায়াতে সময় লাগে এক ঘণ্টার মতো। উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মতোই দিপুদের মনেও সাধ জাগে ভোরে খালি পায়ে এসে ভাষা শহিদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর; কিন্তু বিদ্যালয় যে অনেক দূরে।
তারপরে দিপু, রহিত, রানু, রাসেল, লালু আর মুন্না একসঙ্গে বসে বুদ্ধি পরামর্শ শুরু করল, কি করা যায়? ভাষা শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা যে জানাতেই হবে।
এক সময় দিপু বলল চলো আমরা সবাই আমাদের বাড়ির পাশে কোনো এক ফাঁকা স্থানে শহিদ মিনার স্থাপন করি?
তখন রহিত বলে উঠল, এত ইট-পাথর-সিমেন্ট পাবো কোথায়? অনেক টাকা লাগবে তো, আর আমরা কি তৈরি করতে পারব?
দিপু উত্তরে বলল- শুধু কি ইট-পাথর দিয়েই শহিদ মিনার বানাতে হবে নাকি?
এটা শুনে সবাই এক সঙ্গে বলে উঠল- তাহলে....?
দিপু বলল- তোমরা সবাই তোমাদের বাড়ি থেকে মোটা-মোটা পাটকাঠি নিয়ে আসবে আর বাকি কাজ আমি করব, তোমরা শুধু আমাকে সাহায্য করবে।
তারপরে বাড়ি ফিরে তাদের কাজ শুরু করে দিল এবং একপর্যায়ে তাদের শহিদ মিনার তৈরি সম্পূর্ণ হলো এবং একুশে ফেব্রম্নয়ারির ভোরবেলা সবাই ''একুশে ফেব্রম্নয়ারি অমর হোক, অমর হোক 'এই স্স্নোগানে ফুল দিতে লাগল ভাষা শহিদদের নবনির্মিত শহিদ মিনারে।
এভাবেই শেষ হলো দিপুদের ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো।