হাফসার কাগজের ফুল

প্রকাশ | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

জুয়েল আশরাফ
বিকাল থেকে হাফসার মন খারাপ যাচ্ছে। একুশে ফেব্রম্নয়ারি, শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর দিবস। কাল ভোর সকালে তাদের স্কুল মাঠ প্রাঙ্গণে শহিদ মিনারে সবাই আসবে ফুল হাতে। এজন্য তরু, মিনু, রত্না, সিতারা সবাই আজকে ফুল কিনে রেখেছে। শুধু হাফসা কিনতে পারেনি। তার কাছে টাকা নেই। আজ স্কুলে টিফিনের সঙ্গে মা তাকে ফুল কেনার জন্য টাকা দিয়েছিল। কিন্তু সেই টাকাটা সে একজন ভিক্ষুককে দিয়েছে। রোজ তাদের স্কুল গেটে একজন বৃদ্ধা-ভিক্ষুক এসে দাঁড়ায়। পেটে খিদে, খাবারের কথা বলে হাত পাতলো। হাফসার খুব মায়া হলো, তার কাছে ফুল কেনার যেই টাকাটা ছিল সেটা সে দিয়ে দিল। মায়ের কাছে আর টাকা চাওয়া যাবে না, মা রাগ করবেন। টাকা নেই, ফুল ছাড়া কাল শহিদ মিনারে যাবে কীভাবে, এজন্য হাফসা খুবই বিচলিত। রাত শুরু হতেই হাফসার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। অবশ্য হাফসার মাথা এমনিতেই বুদ্ধিতে ভরা। তার বুদ্ধির খবর বাড়ির আর কেউ জানে না, শুধু রুবেল মামা ছাড়া। তার পড়ার ঘরের দেয়ালে, টেবিলে, দরজায় তাকালেই বোঝা যায় অল্প বয়সি মেয়েটার মাথায় এত বুদ্ধি আসে কীভাবে! তার দেয়ালে তাকালে দেখা যাবে- ঘরের ভেতর ফেলে দেয়া উচ্ছিষ্ট কাগজ সংগ্রহ করে সেটায় সে ছবি এঁকে তাতে রং করে একেবারে জীবন্ত ছবির মতো করেছে! তার মা সেলাই মেশিনে কাজ করে, সুতা শেষ হয়ে যাওয়ার পর কাগজের যেই রোল মা ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলে দেয়, সেখান থেকে সে তুলে এনে রং আর আঠার সাহায্যে চমৎকার একটা খেলনা তৈরি করে ফেলল। আর একবার সে কী করল- টিসু্য পেপারের রোলার দিয়ে এত সুন্দর একটা কলমদানি সে তৈরি করল যে, বাড়িতে এসে যেই দেখত রীতিমতো সবাই অবাক, সবাই ভাবত এত সুন্দর ডিজাইনের একটা কলমদানি! নিশ্চয়ই এটার দাম পড়েছে অনেক। অথচ বাইরের কেউ জানতই না এই জিনিসটা সামান্য টিসু্য পেপারের রোলার দিয়ে তৈরি। এরকম আরও বহু কিছুই হাফসা নিত্য-নতুন নতুন জিনিসের তৈরিতে তার মাথার বুদ্ধি কাজ করে। তার এসব কাজে বাবা-মা খুবই বিরক্ত হন, তারা শুধু চায় হাফসা পড়াশোনা ছাড়া অন্য কিছুতে মন না লাগাক। কিন্তু তার রুবেল মামা তার এসব তৈরি জিনিসের প্রশংসা করেন। আর বলেন- পৃথিবীতে সব মানুষের ভেতরেই আলস্নাহ প্রতিভা দিয়ে রেখেছেন। আমাদের হাফসার প্রতিভা এসব। রুবেল মামা বলেছে, হাফসার তৈরি জিনিস দিয়ে আগামী মেলায় প্রদর্শনী দেবে, এতে বাড়তি আয় হবে। কাল শহিদ মিনারে ফুল নিয়ে যাওয়ার হঠাৎ একটা বুদ্ধি এলো হাফসার। সে কাজ শুরু করে দিল- কাঁচি নিল, কাগজ কাটলো, আঠা আর রং নিয়ে টেবিলে বসল। কিছুক্ষণের ভেতরেই অদ্ভুত ব্যাপার ঘটিয়ে ফেলল সে! সাধারণ কাগজ দিয়ে সে একটা গোলাপ ফুল তৈরি করল, তাতে রং করে এমন সুন্দর করে বানিয়েছে যে দেখে মনেই হচ্ছে না এটা যে কাগজের ফুল! মনে হচ্ছে একটা জীবন্ত গোলাপ! পরের দিন স্কুলে গিয়ে হাফসা সবার সঙ্গে মিলে শহিদ মিনারে গিয়ে সেই কাগজের ফুল দিয়ে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালো। চারদিকে বেজে চলেছে- 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রম্নয়ারি, আমি কী ভুলিতে পারি'...!