শিশুতোষ গল্প

এক যে আছে আজব দেশ

প্রকাশ | ০৭ মার্চ ২০২০, ০০:০০

আহমাদ স্বাধীন
সবুজ সবুুজ আকাশ। আকাশের নিচে নীল নীল ঘাস, নীল নীল গাছ। আকাশের গায়ে ভেসে বেড়ায় হলুদ ও লাল রঙের মেঘ। কী মজার একটা ব্যাপার, তাই না? চাঁদের আলোও দেখা যাচ্ছে! দিনের বেলায় চাঁদের আলো। হলুদ হলুদ আলো। কেমন সব ওলট-পালট ব্যাপার। এটা একটা আজব দেশ। আজব এই দেশটাতে হুট করেই ঢুকে পড়েছে তুবা। সে এখানে কীভাবে এলো তার কিছুই জানে না। যেভাবেই আসুক, তুবার খারাপ লাগছে না। বেশ মজাই লাগছে। তুবা হাঁটতে হাঁটতে একটা নদীর পাড়ে চলে যায়। কী নরম বাতাস বইছে নদীর পাড়ে, তুলতুলে বাতাস। একেবারে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। তুবা নদীর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়। সেখানে সাঁতার কেটে বেড়াচ্ছে নানা রকম পাখি। চিল, কাক, শালিক, চড়ুই অনেক পাখি। পাখিরা ডুব সাঁতারও কাটছে। পাখিগুলো খুব আনন্দে সাঁতার কাটছে জলে। তুবার বেশ ভালো লাগে ওদের আনন্দ দেখে। ওরও ইচ্ছে হয় সাঁতার কাটতে পাখিদের মতো। নদীর পাড়ের নীল ঘাসে তুবা হাত-পা ছড়িয়ে বসে। কে যেন হাতের আঙুল ছুঁয়ে যায়। তুবা চেয়ে দেখে মাছেদের ঝাঁক। মাঠে হেঁটে বেড়ায় মাছ। রুই, কাতলা, বোয়াল, চিতল আরও কত জাতের মাছ। দূরে দেখা যাচ্ছে বড় বড় জাহাজ চলছে ডাঙায়। আর গাড়ি চলছে নদীর জলে। তুবা এই মজার আজব দেশ দেখে ভীষণ মজা পায়। তুবা হাঁটতে হাঁটতে চলে আসে হাটখোলায়। হাটখোলা কাকে বলে জানো তো? হাটখোলা হচ্ছে গাঁয়ের বাজার। যেখানে সব ধরনের সদায়-পাতি কেনাবেঁচা হয়। হাটখোলায় গিয়ে দেখে আরও আজব ব্যাপার। গাঁয়ের অনেক লোকজন হাটে এসেছে সদায়-পাতি কেনার জন্য। কিন্তু কারোরই চোখ খোলা নেই। সবার চোখ বন্ধ। তুবা একজন বুড়ো চাচাকে ডেকে জিজ্ঞেস করে- তোমরা সবাই চোখ বুজে চলাফেরা করছো কীভাবে? চাচা বলল- তুমি জানো না বুঝি? আমাদের দেশে তো সবাই চোখ মুদলেই দেখতে পায়। আর ঘুমানোর সময় হলে চোখ খুলে ঘুমায়! তুবা আর দেখতে পায় দুজন ছাতা পায়ে ধরে হাতে ভর দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। শুধু তাই নয়- ঘোড়া মানুষের মুখে লাগাম দিয়ে পিঠে বসে চলছে। তুবা অবাক হয় আর দেখে। জিলিপি ভাজা হচ্ছে ময়রার দোকানে। গরম গরম জিলিপি। সাইজেও বেশ বড়। তুবার জিলিপি খাওয়ার ইচ্ছে হয়। এক পা দু পা করে জিলিপির দিকে এগিয়ে যায়। তখন ঘটে এক মহা অবাক কান্ড! জিলিপি নিজেই তুবার দিকে এগিয়ে আসে মুখ হাঁ করে। তুবা ভয় পেয়ে কয়েক পা পিছিয়ে যায়। বুঝতে পারে এই আজব দেশে জিলিপিরাই মানুষ খায়। জিলিপির তাড়া খেয়ে অন্য এক মিষ্টির দোকানে বসে। বসে সেখানকার মন্ডা মিঠাই খায়। তবে মিঠাই ভীষণ তেতো লাগে। এত তেতো স্বাদের যে মিঠাই হয় তুবা সেটা জানতোই না। তেতো স্বাদে তুবার মুখ কেমন কুচকে যায়, তাই দেখে দোকানি বলেন- তুমি তেতো খেতে পারো না বুঝি? তবে মিষ্টি কিছু খাবে? এক কাজ করো। ওষুধ খাও। আমাদের ওষুধ খুব মিষ্টি! কারও মিষ্টি খেতে ইচ্ছে হলে সে ওষুধ খায়। তুবার অকারণে ওষুধ খাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। এই আজব দেশে এসে তুবার ভয়ও লাগে আবার মজাও লাগে। আজব এই মজার দেশের নাম কী কে জানে। নাম যাই হোক এই দেশে মজার আর আজব আর কী কী আছে তা জানা দরকার। তুবা হাঁটতে থাকে, হঠাৎ ওর বা কানটা কেমন ব্যথায় টনটন করে। কেউ কী টানছে ওর কান ধরে? হঁ্যা, তাই তো। তুবা চোখ মেলে দেখে ওর হোম টিউটর ওর কান টেনে ধরে বলছে- কী হচ্ছে? আমি তোমাকে অংক কষতে দিয়ে একটু বাইরে গেলাম, আর তুমি ঘুমাও? - ম্যাডাম আমার মাথায় অংক ঢুকতেই চায় না। যোগীন্দ্রনাথ সরকারের 'মজার দেশ' ছড়াটা পড়ছিলাম। পড়তে পড়তে কীভাবে যে ঘুম চলে এলো বুঝতে পারি নাই। তারপর কী হলো জানেন ম্যাডাম, আমি দেখলাম যে সেই মজার আজব দেশে চলে গিয়েছি। সেখানে গিয়ে দেখলাম আজব সব ব্যাপার। জিলিপি আমাকে কামড়ে দিতে আসছিল। আমি ছুটে পালালাম। তুবাকে থামিয়ে দিয়ে ম্যাডাম বলল- তুমি কী থামবে নাকি শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে? অংক না করার যত বাহানা। তুবা আর কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। কারণ তুবা জানে যে এখন ও যাই বলুক ম্যাডাম কিছুই বিশ্বাস করবে না। তাই চুপ থাকাই ভালো। তবে তুবা যে মজার দেশের আজব স্বপ্নটা দেখেছে সেটা তো আর মিথ্যা নয়। এরকম স্বপ্নটা দেখার জন্য মজার দেশের কবি যোগীন্দ্রনাথ সরকারকে মনে মনে বড় একটা ধন্যবাদ জানায় তুবা। তোমরা যারা মজার দেশ কবিতাটা এখনো পড়োনি তারা পড়ে নিতে পারো। হতে পারে স্বপ্নে তোমরাও চলে যাবে সেই আজব দেশে। তবে কেউ অংক ফাঁকি দিও না যেন।