শেখ সাহেব ও নানুর গল্প

প্রকাশ | ১৪ মার্চ ২০২০, ০০:০০

আলাউদ্দিন আদর
পড়ন্ত বিকালে নানুবাড়ি পৌঁছালো নাবিলা। বাবা মায়ের সঙ্গে ছোট ভাই নাবিলসহ যেই না ওরা সদর দরজায় এসে দাঁড়ালো মুহূর্তে যেন হইচই লেগে গেল। বিদু্যৎগতিতে ছড়িয়ে গেল ওদের আগমনের খবর। সবাই বেরিয়ে এসে আনন্দে উলস্নাসিত হয়ে ওদের রিসিভ করল। কুসুমপুরের মুন্সী বাড়িতে যেন আনন্দের বন্যা! নাবিলার বাবা নুরউদ্দিন বড় ব্যবসায়ী। ঢাকায় ওদের স্থায়ী নিবাস। ঢাকার বাইরে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার তেমন সুযোগ পায় না। তবে বছরে, দু-বছরে একবার হলেও কুসুমপুরে আসতে হয়। স্ত্রী, সন্তানদের বায়না তো আর না রেখে পারা যায় না। তাছাড়া তিনিও এখানে এসে বেশ আরামবোধ করেন। মুন্সীর বাড়ির বড় জামাই নুরউদ্দিন সাহেব; তাই এই বাড়িতে তার বাড়তি সমাদর। রাতে রাজকীয় ভোজ শেষে নানিকে গল্প বলতে চেপে ধরে নাবিলা। নাবিলও বোনের সঙ্গে একই সুর ধরে। নানির দুই উরুতে মাথা রেখে দুজনই মায়া চোখে তাকিয়ে নানির দিকে। নানি দুজনের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে গল্প শুরু করে- তোদের নানুভাই ঢাকায় চাকরি করত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী ছিল। আমি বেশি পড়াশোনা করি নাই। ওই সময় মেয়েদের বেশি পড়াশোনা করাতো না। আমরা থাকতাম গ্রামে। প্রতি মাসে বাড়ি আসতে কত নতুন নতুন জিনিস নিয়ে আসত। মানুষটা ছিল বইপোকা। শুধু কি বই, কত রকম পেপার (পত্রিকা) পড়তো। আসার সময় অনেক রকমের পেপার (পত্রিকা) আনতো। শেষবার যখন বাড়ি আসে তখন সবচেয়ে বেশি পেপার আনছে। কয়েকটা পেপার খুলে একটা লোকের ছবি দেখাইলো আমারে। বলল-উনারে চিনো? উনি হইলো আমাদের শেখ সাব। দেশকে স্বাধীন করতে আমরা উনার সঙ্গে সংঙ্গ্রাম করছি। উনি আমাদের নেতা। উনার নেতৃত্বে একদিন আমারা এই দেশকে স্বাধীন করব ইনশালস্নাহ... আমি কেবল ফ্যাল ফ্যাল করে শুনতাম। অত বুঝতাম না। মাঝেমধ্যে জিজ্ঞেস করতাম-দেশ স্বাধীন হলে আমাদের কি লাভ? তোর নানু ভাই- হা হা হা করে হেসে উঠত। বলতো- আরে বোকা। েেদশ স্বাধীন হইলে আমরা স্বাধীনভাবে চলতে পারব, কথা বলার স্বাধীনতা পাবো, কেউ আমাদের নিয়ন্ত্রণ করবে না, কেউ না খেয়ে থাকবে না, নিজের স্বাধীন একটা দেশ; নিজের আলাদা একটা পতাকা থাকবে...বলতে বলতে মানুষটার দুই চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ত! নাবিলা খেয়াল করে দেখল গল্প বলতে বলতে নানির চোখেও পানি চলে এসেছে! নাবিলের চোখেও পানি টলমল করছে। নাবিলা সোজা হয়ে নানির মুখোমুখি বসে শুভ্র ছোট আঙ্গুলগুলো দিয়ে চোখের পানি মুছে দিল। বলল- নানিমণি, তুমি মন খারাপ করছ কেন? নানু ভাই তো ঠিকই বলেছে। আমরা তো সত্যি সত্যি একটি দেশ পেয়েছি। লাল-সবুজের একটি পতাকাও পেয়েছি। আমাদের স্কুলে পিটির সময় প্রতিদিন পতাকাটি আকাশে ওড়ানো হয়। এবার হাসো তো...আনমনেই হেসে উঠল নাবিলার নানি রাহেলা বেগম। নানির মুখে হাসি দেখে হাসি ফুটলো নাবিল ও নাবিলার মুখেও।