মীমের দঁাত খেলো পাজি ইঁদুর

প্রকাশ | ২৯ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

সৈয়দ শরীফ
আমি একটি দুষ্টু মেয়ের কথা বলছি। ওর নাম মীম। দুষ্টুমিই যেন ওর প্রতিদিনকার রুটিন। উঠোনের এপাশ থেকে ওপাশ সারাটাদিন দৌড়ে বেড়ায়। মুরগি ও হঁাসগুলোর লেজ ও পাখা টেনে, কী যে নাস্তানাবুদ করে তোলে, তা তো হঁাস-মুরগিরাই জানে। গতমাসে প্রথম শ্রেণি অতিক্রম করে, ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠেছে। নতুন ক্লাসে গিয়েও দুষ্টুমি, বাসায় এসেও দুষ্টুমি। দুষ্টুমিই ওর পুঁচকে শরীরের একটি অংশ। মীম আজ স্কুলে যায়নি। ওর ঘরে নাকি ও একটি বাচ্চা ইঁদুর দেখেছে। সেটাকে ধরবে বলেই আজ স্কুল ফঁাকি দিয়েছে মীম। ইঁদুরটি ধরতে দড়ি দিয়ে ফঁাদ তৈরি করে, ইঁদুরটির আসা যাওয়ার পথে বিছিয়ে রেখেছে। কিন্তু এ কী! ইঁদুর তো আসছে না। তবে কি ইঁদুর জেনে ফেললো সব? মীমের ইঁদুর ধরাটাও কি আর হবে না? মীম বড় জেদি মেয়ে। ও যখন ধরবে ভেবেছে, তবে ইঁদুরটি আর রেহাই পাবে না। এবারও নতুন বুদ্ধি বের করল! ফঁাদটির ঠিক মাঝখানে, ফ্রিজ থেকে ইঁদুরের প্রিয় খাবার (পনির) এনে রাখল। মীম অনেক দূরে বসে অপেক্ষা করছে। আধঘণ্টা পার হয়ে গেল, তবু ইঁদুর আসছে না। ইঁদুর কি তবে আসবেই না? আপাতত হাল ছেড়ে দিয়ে পড়তে বসল মীম। অঙ্ক করার সময় ওর পায়ের সামনে দিয়ে হঠাৎ কী যেন দৌড়ে গেল মনে হচ্ছে। মীম সেটা উপলব্ধি করতে পারল। তারপর অনেক খুঁজেও আশপাশে কিছু পেল না। রাতে টম অ্যান্ড জেরি দেখে দেখে ইঁদুরকে কীভাবে নাস্তানাবুদ করতে হয়, তাই শিখছিল সে। চোখগুলো বড় করে টিভির ঠিক এক হাত সামনে থেকেই দেখছিল। অমন সময় আম্মু এসে ঝাড়ি দিয়ে বলল, ‘অতো কাছ থেকে কেউ টিভি দেখে? চোখ নষ্ট হবে না? আসো, আরও পেছনে আসো।’ মীম বললÑ ‘আম্মু, আমি ইঁদুর ধরা শিখছি। দেখো না, টম কী বুদ্ধি করে জেরিকে ফঁাদে ফেলছে। আমাদের ঘরের ওই পাজি ইঁদুরটিকে, আমি ঠিক এভাবেই ধরব। প্লিজ আম্মু, আমাকে কাছ থেকে দেখতে দাও না, প্লিজ প্লিজ প্লিজ’ এ কথা বলতেই আম্মু ‘দুষ্টুমি রাখো’ বলে টিভি বন্ধ করে রান্নাঘরে চলে গেল। মীম মন খারাপ করে ওর বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। ঘুমিয়ে ও হয়তো স্বপ্ন দেখছিল। ওহ্ মীমের তো একটি দঁাত নড়তো। ঘুমন্ত অবস্থায় কীভাবে একটি দঁাত হারালো মীম, সে কথাই এখন বলছি। রাতে মীমের আব্বু অফিস থেকে ফিরে, ওর পাশে এসে বসল। অবশ করার ঠাÐা ঔষধ মীমের দঁাতের নিচ দিয়ে চামড়ার উপরে আলতো করে লাগিয়ে, তারপর দঁাতটিকে আলতো করেই উঠিয়ে নিলো। এত্ত বড় একটি ঘটনা ঘটে গেল, অথচ মীম টেরই পেল না! সকালে ঘুম থেকে উঠে দঁাত ব্রাশ করার সময় বুঝতে পারল ওর একটি দঁাত উধাও হয়ে গেছে। খুব আতঙ্কিত হয়ে মীম ওর আম্মুকে বলল, ‘আম্মু, আমার একটি দঁাত খুঁজে পাচ্ছি না। এইতো এদিকের এইÑ এই দঁাতটি। মীমের আম্মু মুচকি হাসি দিল। মীম আবারও বললÑ ‘ও আম্মু, কে নিলো এই দঁাত? বলো না।’ আম্মু বললÑ ‘ইঁদুরে নিয়েছে তোমার দঁাত’ মীম তো এবার খুব ভয় পেয়ে গেল। মীম এখন ভাবছেÑ গতকাল ইঁদুরের জন্য ফঁাদ পাতাটা মোটেও বোধ হয় উচিত হয়নি তার। ও একা একা ওখানটিতে এখন যেতেও ভয় পায়। আর মাঝেমধ্যে বলে ওঠেÑ ‘পাজি, বদমাশ ইঁদুর আমার দঁাত খেয়েই নিলো। ওর বাবা মা বোধ হয় ওকে খাবার এনে দেয় না। ছেঁাচা কোথাকার! এভাবেÑ ভয়ে ভয়েই এখন কেটে যাচ্ছে মীমের দুষ্টুমির জন্য অপেক্ষা করা দিনগুলো।