করোনার টিকা আবিষ্কারের দৌড়ে এগিয়ে যারা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষ করে তৃতীয় ধাপে প্রবেশ করেছে।

প্রকাশ | ২৫ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
করোনাভাইরাস মহামারিতে পুরো বিশ্ব বিপর্যয়ের মুখোমুখি হলেও এখন পর্যন্ত এর কোনো ভ্যাকসিন কিংবা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষ করে তৃতীয় ধাপে প্রবেশ করেছে। জাতিসংঘ বলছে, বিশ্বের বেশকিছু দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির তৈরি ভ্যাকসিন এখন ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার শেষ পর্যায় অর্থাৎ তৃতীয় ধাপে রয়েছে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি কার্যকর ও সফল টিকার দৌড়ে সব থেকে এগিয়ে রয়েছে অক্সফোর্ডের টিকাটি। অবশ্য গত মাসে এই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ সাময়িক বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এক স্বেচ্ছাসেবী অসুস্থ হয়ে পড়ায় প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রোজেনেকাকে চূড়ান্ত ধাপে থাকা পরীক্ষা বন্ধ করতে হয়েছিল। তবে গবেষকরা পরে বলেন, ওই অসুস্থতা টিকা সংক্রান্ত ছিল না। অক্সফোর্ডের টিকা নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, নিয়ন্ত্রকরা ২০২১ সাল শুরুর আগেই এটির অনুমোদন দেবে। সম্প্রতি এর গবেষকরা ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকায় তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শুরু করেছে। ভারতেও টিকাটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরুর প্রক্রিয়া চলছে। প্রথম ধাপের পরীক্ষায় অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিন নিরাপদ এবং মানুষের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা উজ্জীবিত করতে পারে বলে প্রমাণিত হয়েছে। এই টিকাটির তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চলছে। ফাইজার-বায়োএনটেক ভ্যাকসিন মার্কিন ওষুধ কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি বায়োএনটেক। ছয় দেশে ৪৩ হাজার ৫০০ জন মানুষের দেহে ভ্যাকসিনটির পরীক্ষা চালিয়েছে। বিবিসির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভ্যাকসিনটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর পর পাওয়া প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, এই ভ্যাকসিনটি নিলে ৯০ শতাংশ মানুষ কোভিড-১৯ নামক মহামারি রোগে আক্রান্ত হবে না। সুরক্ষায় শতভাগ উতরে গেছে ভ্যাকসিনটি। এ নিয়ে শঙ্কার তেমন কিছু পাওয়া যায়নি পরীক্ষায়। চলতি মাসের শেষ দিকে জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের অনুমোদন পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করার পরিকল্পনা করছে কোম্পানি দুটি। মডার্নার ভ্যাকসিন মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে তাদের তৈরি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন প্রায় ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে কার্যকর বলে দাবি করেছে ভ্যাকসিনটির প্রস্তুতকারক মার্কিন জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি মর্ডানা। বিবিসির এক অনলাইন প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে। ভ্যাকসিন পরীক্ষার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার পর প্রাপ্ত প্রাথমিক ফলাফলের বরাতে কোম্পানিটি এমন দাবি করেছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভ্যাকসিনের ব্যবহার শুরুর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করবে বলে জানিয়েছে মডার্না। শেষ ধাপের ওই ট্রায়ালে যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ হাজার মানুষের দেহে ভ্যাকসিনটি পুশ করা হয়। এর মধ্যে অর্ধেককে চার সপ্তাহের ব্যবধানে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ দেয়া হয়। এ ছাড়া বাকিদের দেয়া হয় নামমাত্র ইনজেকশন। সেগুলোতে ভ্যাকসিনের কোনো ডোজ ছিল না। তৃতীয় ধাপের প্রাথমিক ফলের ওপর ভিত্তি করে পাওয়া তথ্যের কথা উলেস্নখ করে মডার্না দাবি করেছে, তাদের তৈরি ভ্যাকসিন করোনা ঠেকাতে ৯৪ দশমিক ৫ শতাংশ কার্যকর। মডার্নার প্রেসিডেন্ট স্টিফেন হজ এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, 'আমরা এমন একটি ভ্যাকসিন পেতে যাচ্ছি যা কোভিড-১৯ নামক মহামারি এই রোগকে থামিয়ে দেবে।' সিনোভেক কোভিড-১৯ এর নিষ্ক্রিয় অংশের ওপর ভিত্তি করে একটি টিকা আবিষ্কারের কাজ করছে চীনের কোম্পানি সিনোভেক। প্রথম দফার পরীক্ষাগুলোয় এই টিকাটি বেশ সাফল্য দেখিয়েছে। এখন ব্রাজিল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে কয়েক হাজার মানুষের দেহে টিকাটির তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। মারডক চিলড্রেনস রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রায় ১০০ বছরের পুরানো একটি ফুসফুসের টিকা নিয়ে তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চালাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার মারডক চিলড্রেনস রিসার্চ ইনস্টিটিউট। এই টিকা যদিও সরাসরি কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা করে না; কিন্তু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে। কতগুলো টিকা আবিষ্কারের কাজ চলছে জাতিসংঘের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি করতে ১৭৩টি উদ্যোগ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ১৪০টি এখনো মানবদেহে পরীক্ষা শুরু হয়নি। একে বলা হয় প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। বিজ্ঞানীরা এখনো এসব টিকা নিয়ে গবেষণা করছেন, পশু বা প্রাণীর দেহে প্রয়োগ করে কার্যকারিতা যাচাই করছেন। ১৯টি টিকার কার্যক্রম রয়েছে প্রথম পর্যায়ে অর্থাৎ ক্লিনিক্যাল টেস্টিং শুরু হয়েছে। এর ফলে কয়েকজন মানুষের ওপর টিকাটি প্রয়োগ করে দেখা হয় যে, এটা নিরাপদ কি না। সেই সঙ্গে এটা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় কতটা প্রভাব ফেলে, তাও যাচাই করা হয়। ১১টি টিকা রয়েছে দ্বিতীয় পর্যায়ে, যেখানে এসব টিকা কতটা নিরাপদ, তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। এই পর্যায়ে কয়েকশ মানুষের ওপর টিকার পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা এর নিরাপত্তা আর সঠিক মাত্রা নিরূপণের চেষ্টা করেন। বিবিসি বলছে, বিশ্বে এখন কয়েকটি ভ্যাকসিন তৃতীয়বার পরীক্ষা শুরুর পর্যায়ে রয়েছে। এই পর্যায়ে কয়েক হাজার মানুষের ওপর টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখা হয় যে, সেটা কতটা নিরাপদ, কতটা কার্যকর, বড় ধরনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি হয় কি না। এখানে সফলতা পেলেই সাধারণত টিকার অনুমোদন হয়ে থাকে। জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী, তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা তৃতীয় কোনো দেশে করতে হয়।