আজ বিশ্ব হাটর্ দিবস ২০১৮

হৃদরোগের হলিস্টিক চিকিৎসা

প্রকাশ | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আজ বিশ্ব হাটর্ দিবসের থিম বা প্রতিপাদ্য হলো, মাই হাটর্, ইওর হাটর্, বাংলায় বলতে পারি ‘আমার হৃদয়, তোমার হৃৎপিÐ।’ প্রথমেই জোর দেয়া হয়েছে এই প্রশ্নের ওপর যে আমার এবং আমাদের নিকটজনদের বা ভালোবাসার মানুষের হাটর্ সুস্থ রাখার জন্য এই মুহ‚তের্ আমরা কী পদক্ষেপ নিচ্ছি। এ প্রসঙ্গে প্রতিশ্রæতির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে যে, আমরা হাটর্ ভালো রাখার জন্য কি কি প্রতিশ্রæতি দিচ্ছি। মূলত যে যে কারণে হাটর্ অসুস্থ হতে পারে সেগুলো এড়িয়ে চলছি কিনা। যেমন ধূমপান এবং অতিরিক্ত রিচ ফুড খাওয়াÑ এগুলো আমরা বজর্ন করার প্রতিশ্রæতি দিচ্ছি কিনা আমাদের প্রিয়জনের কাছে। মানসিক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, আবেগের আগ্রাসন, কাজের বাড়তি চাপ, জীবনযাপনের চাপ প্রভৃতি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ক্রমাগত মানবজীবনের আকাক্সক্ষা বেড়ে যাওয়া, কাজেকমের্ তাড়াহুড়া, আধুনিক জীবনযাত্রায় নিত্যদিনের দুভার্বনা সরাসরি মানবদেহের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় (কাডির্ওভাসকুলার সিস্টেম) প্রতিক্রিয়া ঘটায় বা প্রভাব ফেলে। হৃদযন্ত্রকে যদি অশ্বের সঙ্গে তুলনা করা হয় তবে মনকে বলতে হবে এর চালক বা অশ্বারোহী। জীবনের দৌড়ে যদি গতি বাড়ানোর কাজ করে মন, তবে স্বাভাবিকভাবেই চাপ বাড়ে মনে, এবং তার প্রভাবও পড়ে হৃদযন্ত্রে। আজকের মানুষ সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটছে। স্বাভাবিকভাবেই এর জন্য তাকে চড়া দামও গুনতে হচ্ছে। ফলস্বরূপ অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন হৃদরোগে। আর কোনোরকম পূবার্ভাস ছাড়াই যে কোনো সময় এটি কেড়ে নিতে পারে মানুষের জীবন। বেঁচে থাকার জন্য যেমন খাদ্যের প্রয়োজন পড়ে তেমনি রোগাক্রান্ত হলে প্রয়োজন চিকিৎসার। তাই হৃদরোগের চিকিৎসা হিসেবে প্রচলিত বহুল আলোচিত দুটি পদ্ধতি বাইপাস ও স্ট্যান্টিং। এ দুটিই অপারেশন। আর এই দুই পদ্ধতির চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূণর্। রোগী সুস্থও হচ্ছেন কিন্তু বেঁচে থাকতে হয় মুঠো মুঠো ওষুধ সেবন ও বিভিন্ন শারীরিক অক্ষমতা নিয়ে। তার পরেও ভয় থাকে আবার রোগে আক্রান্ত হওয়ার। বিশ্বের এক নাম্বার হন্তারক রোগ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে হৃদরোগকে। প্রতি বছর ১৭ দশমিক ৩ মিলিয়ন বা প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষ মারা যাচ্ছে এই রোগে। অন্যদিকে ম্যালেরিয়া, এইচআইভি এইডস এবং য²াÑ এই তিনটি রোগ মিলে প্রতি বছর গোটা বিশ্বে মারা যাচ্ছেন ৩৮ লাখ মানুষ। অথচ এ তিনটি রোগকেই ভয়ঙ্করভাবে উপস্থাপন করা হয়ে থকে। পক্ষান্তরে হৃদরোগের ভয়াবহতার ব্যাপারে ব্যাপক প্রচারণা অনুপস্থিত। তাই বিশ্ব হাটর্ দিবসে গোটা বিশ্বেই এ বিষয়টির প্রচারণার সুযোগ গ্রহণ করে থাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এবার হাটর্ দিবসের থিম বা প্রতিপাদ্য ছিলÑ ‘টেক দ্য রোড টু এ হেলদি হাটর্’ বা ‘সুস্থ’ হাটের্র জন্য যাত্রা’। মূলত হৃদরোগ প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণের ওপরেই জোর দেয়া হয়েছিল। এজন্য পরিবারকে গুরুত্বপূণর্ ধরা হয়। পরিবারের অভিভাবকরা, বিশেষ করে নারীদের ভ‚মিকা এ ক্ষেত্রে বেশি। সন্তানদের ধূমপান থেকে বিরত রাখা, তাদের শারীরিক কমর্কাÐে উৎসাহিত করা, হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় এমন খাবার (বেশি চবির্যুক্ত খাদ্য, টিনজাত খাবার ইত্যাদি) এড়িয়ে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যগ্রহণে উৎসাহিত করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। নিয়মিত ব্যায়ামও হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনে। পযের্বক্ষণে দেখা গেছে দৈহিক ওজন ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকখানি কমে আসে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার অধের্কই নারী, তাই হাটর্ সুরক্ষার আন্দোলন ও তৎপরতার বাইরে নারীকে রাখা হলে সেটা হবে আত্মঘাতী। নীরব ঘাতক হৃদরোগ থেকে বঁাচতে হলে গোটা জীবনব্যবস্থায় পরিবতর্ন আনতে হবে। বলা যায় সুস্থ হাটর্ অজর্ন করার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করাতে হবে। এবছরের বিশ্ব হাটর্ দিবসের মূল ফোকাস বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে অসংক্রামক রোগগুলোর ভেতর হৃদরোগকে অন্যতম ভয়াবহ রোগ হিসেবে শনাক্ত করে ২০২৫ সালের ভেতর এসব রোগে মৃত্যুর হার ২৫ শতাংশে কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নিধার্রণ করে ১৯৪টি দেশে কমর্সূচি প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। বিশ্বের ১৯৪টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও পালিত হতে চলেছে বিশ্ব হাটর্ দিবস। আমরা মনে করি, হাটর্ দিবস পালন তখনই সাথর্ক হবে যখন দেশের অপেক্ষাকৃত কম বিত্তবান মানুষ হৃদরোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারের আওতায় আসতে পারবে। এজন্য জাতিসংঘ সুস্থ জীবনযাপনের জন্য বিশেষত হাটর্ সুস্থ থাকার জন্য বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে যোগ ব্যায়ামকে আন্তজাির্তক স্বীকৃতি দিয়ে ২১ জুন দিনটিকে বিশ্ব যোগ দিবস পালন করছে। তাই হৃদরোগের বিকল্প চিকিৎসার কথাটিও আমাদের স্মরণে রাখতে হবে। এই বিকল্প চিকিৎসাকে হলিস্টিক চিকিৎসা বলা হয়। হলিস্টিক চিকিৎসা হলো আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রাচীনতম প্রাকৃতিক পদ্ধতির আশ্চযর্ সমন্বয়। এই চিকিৎসার মূল চাবিকাঠি দুটি। স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়াম। রোগীর বয়স এবং রোগের ধরন এবং তার বতর্মান অবস্থার ওপরই নিভর্র করে তার প্রতিদিনের খাদ্যগ্রহণ। আর ব্যায়ামের ব্যাপারটি বিবিধ। তার আগে মন নিয়ন্ত্রণের জন্য চাই সঠিক উপায়ে মেডিটেশন। মানসিক চাপই মানুষের অসুখ ও অশান্তির মূল কারণ। মানসিক চাপ কমানোর বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূণর্। মহাজাগতিক শক্তি থেকে জ্যোতি বা প্রাণরস আহরণের কথাও বলা হয়ে থাকে। এসব অজের্নর কাজটি কিন্তু অত সহজ নয়। তার জন্য নিয়মিত সময় দিতে হয়, চচার্ করতে হয় সঠিক নিয়ম মেনে। যোগব্যায়াম, প্রাণায়াম, মেডিটেশন ও নিউরোবিক জিম-প্রত্যেকটিরই নিজস্ব রীতিনীতি আছে। হলিস্টিক চিকিৎসায় সোল-মাইন্ড- বা আত্ম-মন-দেহ সব কিছুর ওপরেই লক্ষ্য রেখে প্রোগ্রাম দেয়া হয়। সংক্ষেপে বলতে পারি হলিস্টিক চিকিৎসা ইতোমধ্যে দেশে আস্থা অজর্ন করেছে। বিগত দশ বছর ধরে দেশে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করে হাজার হাজার হৃদরোগীর জীবনে সুবাতাস বয়ে এনেছে। আজকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হৃদরোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের ওপর বিশেষ জোর দিচ্ছে। বাংলাদেশে এই কাজটিই করে আসছে হলিস্টিক হেলথ কেয়ার সেন্টার। হাটের্র চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল বলে দেশের শতকরা নব্বই জনের পক্ষেই চিকিৎসা করানো সম্ভব হয় না। তা ছাড়া অধিকাংশ মানুষই থাকেন গ্রামে। সবর্ত্র যোগাযোগের ব্যবস্থাও উন্নত নয়। ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেয়ার আগেই মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। তাই ‘হাটর্ অ্যাটাক হওয়ার আগেই অ্যাটাক করুন হাটর্ অ্যাটাককেই’। অথার্ৎ হাটের্ক রাখুন সুস্থ ও সবল। এ লক্ষ্যেই কাজ করে আসছে হলিস্টিক হেলথ কেয়ার সেন্টার। বিশ্ব হাটর্ দিবসে আমরা অবশ্যই হৃদয়ের কথা শুনবো। ফিরে তাকাবো নিজের ও প্রিয়জনের হাটের্র সুস্থতার দিকে। হাটর্ সুস্থ রাখার জন্য যা যা করা দরকার তা করতে সচেষ্ট হবো। প্রচলিত চিকিৎসার পাশাপাশি বিকল্প চিকিৎসার দিকটিও আমাদের তুলে ধরতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তথ্যভাÐার উন্মুক্ত করে দিতে হবে মানুষের সামনে। হৃদরোগ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সচেতনভাবেই চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। মধ্যবিত্ত, অসচ্ছল এবং দরিদ্র হৃদরোগীরা যাতে যথাথর্ চিকিৎসার বাইরে না থেকে যায় সেটাই আজকের প্রধান বিবেচ্য। অধ্যাপক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস হলিস্টিক হেলথ কেয়ার সেন্টার ৪৩ আর/৫সি পশ্চিম পান্থপথ, ঢাকা। ফোন: ০১৯২১ ৮৪৯৬৯৯