শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার এই গরমে সতেজ থাকুন

নতুনধারা
  ১৬ জুন ২০২১, ০০:০০

চলছে করোনাকাল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা, পর্যাপ্ত তরল খাবার খাওয়া এই সবই এখন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অবশ্য পালনীয়। এরই মধ্যে ভ্যাপসা গরমে আমাদের জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। আমরা সহজেই হয়ে পড়ছি ক্লান্ত। বৈশাখ ও জৈষ্ঠ এই দুই মাস গ্রীষ্মকাল হলেও মাঝে মাঝেই আবার ঝির ঝির বৃষ্টি, ঝড়োবৃষ্টি, কালবৈশাখির বৃষ্টি হানা দিচ্ছে। বাড়ছে আদ্রতা, বাড়ছে অস্বস্তি। কাজ করতে করতে মনে হয় আর পারছি না। শরীর ভেঙে পড়ে একটু পরিশ্রমেই। শ্রমজীবী মানুষের প্রাণ হয়ে ওঠছে ওষ্ঠাগত। প্রচন্ড গরমে অস্থির হয়ে ওঠছে চারপাশ। সর্বত্রই অস্বস্তিকর অবস্থা। মাঝে মাঝে বৃষ্টির দেখা পেলেও গরম কমছে না। আবার মাঝে মধ্যে, বিশেষ করে মাঝ রাতে আরো বেশি উত্তপ্ত হয়ে ওঠছে পরিবেশ। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় গত কয়েক মাস ধরে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। পরিবেশ ও প্রতিবেশগত অবস্থার কারণে তাপমাত্রার চেয়ে আরো বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে। খুবই অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয় এই গরমে। চরম এই গরমের অজুহাতে কিন্তু বসে থাকার সুযোগ নেই কর্মমুখী মানুষের। জরুরি প্রয়োজনে নানা কাজে, এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করতে হয়। এই ভ্যাপসা গরমে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন নারী ও শিশুরা। কর্মজীবী নারী ও ছোট শিশুদের পড়তে হয় সীমাহীন বিড়ম্বনায়। আর চরম এই গরমে রোগ-শোকও বাড়ছে। এই অবস্থার মাঝেও ফিট রাখতে হবে নিজেকে।

এই ভ্যাপসা গরমে সতেজ থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজধানীর গেন্ডারিয়ার আজগর আলী হসপিটালের চিফ ডায়েটিশিয়ান সেলিনা বদরুদ্দিন বলেন, আমাদের খাবারের মেনু্যতে সামান্য পরিবর্তন আনলেই সম্ভব অনেকটা সতেজ এবং সজীব থাকা যায়। এ সময়ের ভ্যাপসা গরমে পানি, শরবত ও জুস জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খেলে শরীর সতেজ থাকে। এছাড়াও এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো থেকে আপনি পেতে পারেন বিশেষ পুষ্টি- যা এই সময় বেশি প্রয়োজন।

পানি জাতীয় খাবার বেশি খান

শরীরে পানির প্রয়োজন হয় সারা বছরই এবং গরমে এর প্রয়োজনটা অনেক বেশি। কারণ এ সময়ে শরীর থেকে ঘামের সঙ্গে ক্রমাগত পানি বের হয়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, এক গস্নাস পানি খাওয়ার চাইতে যদি আমরা এমন একটি ফল খাই যাতে পানির পরিমাণটা সমান, তবে সেটা থেকে শরীরে বেশি পরিমাণে পানি সরবরাহ হয়। এই অভ্যাসটি তাদের জন্য বেশি কার্যকরী যারা কম ক্যালরিযুক্ত খাবার খেতে চান, কারণ পানিপূর্ণ খাবার খেলে ক্ষুধা মিটে যায় এবং পানির প্রয়োজন পূরণ হয়, কিন্তু এসব খাবারে ক্যালরি খুব একটা বেশি থাকে না। তাই বলে এই নয় যে, আপনি গরমে পানি খাওয়া বাদ দিয়ে দেবেন। দিনে কমপক্ষে ৮/১০ গস্নাস পানি খাওয়া অত্যন্ত জরুরি এবং এর পাশাপাশি বাড়িয়ে দিন ফল খাওয়া। প্রকৃতির নিয়ম এমনই, যে সময় আমাদের শরীরের জন্য দরকারি উপাদানগুলো ঠিক সেই মৌসুমের ফল ও শাকসবজি বাজারে পাওয়া যায়। এমন অনেক ফল এ সময় পাওয়া যায় যার বেশির ভাগই পানি সমৃদ্ধ। এসব ফল শুধু পানির অভাবই মেটায় না বরং শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদানগুলো বের করে দেয় এবং পুষ্টি উপাদানগুলোকে পৌঁছে দেয় সারা শরীরে। এসব মৌসুমি ফল হতে পারে এ গরম থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্যতম হাতিয়ার।

পেঁপে : বৃষ্টিভেজা ভ্যাপসা গরমে একাধিকবার গোসল করা বা মুখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দেওয়া হোক, একটা ক্লান্তির চাপ চেহারায় থেকেই যায়। যাকে দূর করা যায় না। যতই মেকআপ করা হোক না কেন। এর সমাধান হয়ে ওঠতে পারে পেঁপে। পেঁপের আছে ভিটামিন-'ই' এবং কিছু এনজাইম- যা ত্বকের সতেজভাব ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং এই গরমেও আপনার চেহারায় আনে উজ্জ্বলতা।

ডালিম : এই গরমে জিমে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন? ভাবছেন শরীর বেশি ক্লান্ত হয়ে যাবে? এক গস্নাস ডালিমের জুস খেয়ে নিন এবং নিশ্চিন্তে রওয়ানা হয় যান জিমের দিকে, কারণ ডালিমে আছে এমন উপাদান যা ভারী ব্যায়ামের পর পেশি পুনর্গঠনে সাহায্য করে। তাই এনার্জি ড্রিংক খাওয়া বাদ দিন এবং ডালিম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

শসা : ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে 'কোল্ড এজ কুকুম্বার' এবং এটি বলার যথেষ্ট ভালো কারণ রয়েছে। শসার ৯৬ ভাগই পানি। অন্যান্য ফল ও সবজির মতো এতে অনেক ভিটামিন না থাকলেও আপনার প্রতিদিনের ভিটামিন-'সি' ও ভিটামিন-'কে'র চাহিদা পূর্ণ করতে পারে এই বহুল প্রচলিত খাবারটি। আপনার প্রতিদিনের সালাদে রাখুন অনেকখানি শসা। গরমে প্রাণ জুড়াতে শসা এবং পুদিনা পাতার শরবত খেতে পারেন।

ডাব : ডাবের পানির পুষ্টিগুণ যেকোনো এনার্জি ড্রিংকের চেয়ে অনেক গুণ বেশি এবং এটি ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল মুক্ত। এতে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে পটাশিয়াম- যা গরম কমানোর অন্যতম একটি উপাদান। দিনে একটি করে ডাবের পানি কাজ করতে পারে স্যালাইনের বিকল্প হিসেবে। এর থেকে ক্যালরি পাওয়া যায় কম। তাই ডায়েট কোলা বাদ দিয়ে নিশ্চিন্তে খেতে পারেন ডাবের পানি।

তরমুজ : আমরা সবাই গরমে তরমুজ খেতে ভালোবাসি। এটি শুধু মজাদারই নয়, বরং এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি। তরমুজে ৯২ শতাংশ পানি থাকার পাশাপাশি রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম এবং সোডিয়ামের অনন্য সমাহার- যা শরীর থকে বের হয়ে যাওয়া চিনি এবং লবণের অভাব পূরণ করে।

আম : আমাদের প্রিয় মধুমাসের ফল আম, গরম কমিয়ে আনতে পারে, আছে অনেক গুন। শুধু পাকা আমই নয়, কাঁচা আমেও রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। কাঁচা-পাকা দুই রকমের আমেই রয়েছে অনেক পরিমাণে পেকটিন। লবণ ও জিরা গুঁড়ো দিয়ে কাঁচা আমের ভর্তা হিট স্ট্রোক এবং ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।

লিচু : খুব কম সময়ের জন্য বাজারে থাকা এই ফলটিতে রয়েছে গরম কমিয়ে আনার শক্তি। গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে যে, লিচু কমিয়ে আনতে পারে হিট স্ট্রোকের মাত্রা ৫০ ভাগ পর্যন্ত।

মসলাদার খাবার খান : মসলাদার খাবার খেলে গরমে কান দিয়ে ধোঁয়া বের হয়। অনেকের বেলায়ই তা ঘটে। কিন্তু এটাও সত্যি যে ঝাল/মসলা দেওয়া খাবার খেলে শরীরে রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়, বিশেষ করে ত্বকের নিচের রক্ত প্রবাহী জালিকাগুলোতে। এর ফলে শরীরের তাপমাত্রা সমানভাবে বণ্টন হয়। এছাড়া মসলার প্রভাব একটু কমে এলেই মনে হয় তাপমাত্রা অনেক কমে গেছে। খাবারে এমন কিছু মসলা/ফ্লেভার যোগ করতে পারেন যেগুলোর আছে শরীর ঠান্ডা রাখার ক্ষমতা যেমন এলাচি এবং পুদিনা পাতা।

বর্ষার ভ্যাপসা গরমে এড়িয়ে চলবেন যেসব খাবার-

আইসক্রিম ও বরফ ঠান্ডা ড্রিংকস খেতে যতই ভালো লাগুক না কেন, এগুলো আসলে আপনার শরীরের তাপমাত্রা কমায় না বরং এসব খাবার হজম হতে শুরু করলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া শুরু করে। ফ্রিজের ঠান্ডা পানির বদলে রুম টেম্পারেচার বুঝে খাদ্য/পানীয় বেছে নিন। আইসক্রিমের বদলে খেতে পারেন মিষ্টি বা টকদই। আইসড কফির বদলে খেতে পারেন হারবাল টি। কমিয়ে দিন মাংস এবং চর্বি/তেল খাওয়ার পরিমাণ। ডুবো তেলে ভাজা এবং উচ্চ তাপে রান্না করা বাদ দিয়ে কম আঁচে রান্না করা এবং সেদ্ধ খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। বাড়িয়ে দিন কাঁচা ফল এবং সবজি খাওয়ার পরিমাণ।

য় সুস্বাস্থ্য ডেস্ক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে